বেআইনি: গোসাবার বালিতে এই রিসর্ট জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশে ভেঙে দেওয়া হয়। — ফাইল চিত্র
উপকূল আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে লাগাতার নির্মাণ চলছে সুন্দরবনে। পরিবেশবিদদের দাবি, এর জেরে বাদাবনের চরিত্র বদলাচ্ছে। ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে সুন্দরবন।
পর্যটনের নামে সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠছে হোটেল-রিসর্ট। গোসাবার পাখিরালয়, সোনাগাঁ, দয়াপুর, গোসাবা বাজার-সংলগ্ন এলাকা কার্যত ছেয়ে গিয়েছে হোটেলে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উপকূল আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে হোটেল তৈরি হচ্ছে বলে অভিযোগ পরিবেশবিদদের।
দিন কয়েক আগে গোসাবার বালি ১ পঞ্চায়েত এলাকায় এ রকমই উপকূল আইন অমান্য করে তৈরি হয়েছিল প্রায় ৩০ কোটি টাকার একটি রিসর্ট-প্রকল্প। দক্ষিণবঙ্গ মৎস্যজীবী ফোরামের তরফে তার বিরুদ্ধে জাতীয় পরিবেশ আদালতে অভিযোগ দায়ের হয়। রিসর্ট ভেঙে জমিকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত। এ বিষয়ে তৎকালীন জেলাশাসককেও ভর্ৎসনাও করে আদালত। আদালতের নির্দেশে গত বছর ভেঙে ফেলা হয় সেই প্রকল্প।
কিন্তু এই ঘটনার পরেও সুন্দরবনের বিভিন্ন নদীর তীরে বেআইনি হোটেল, রিসর্ট তৈরি চলছে বলে অভিযোগ উঠছে। শুধু হোটেল-রিসর্টই নয়, নদীর চর দখল করে ব্যবসায়িক স্বার্থে অন্যান্য নানা নির্মাণ হচ্ছে। ম্যানগ্রোভ কেটে ভেড়ি তৈরি হচ্ছে প্রায় সর্বত্রই। এ ছাড়া, অনেক জায়গায় নদীর চর দখল করে গড়ে উঠেছে দোকান।
উত্তর ২৪ পরগনার কালীতলা বাজার থেকে সামসেরনগরের দিকে যাওয়ার পথে ডান দিকে রয়েছে কুঁড়েখালি নদী। সামসেরনগরের দিকে নদী ক্রমশ মজে যাচ্ছে। অভিযোগ, নদীর সংস্কার হয়নি। উল্টে, গত কয়েক বছরে একের পর এক ছাদ দেওয়া বড় বড় দোকান গড়ে উঠেছে নদীর চর দখল করে। সামসেরনগর ট্রেকার স্ট্যান্ডের কাছে কুঁড়েখালি নদী মজে গিয়ে এখন মাত্র কয়েক ফুট চওড়া। এই এলাকায় নদীর চর দখল করে লাইন দিয়ে প্রায় শতাধিক পাকা ছাদ দেওয়া দোকান হয়েছে। দোকানের ভিড়ে এই চত্বরে জঙ্গল সম্পূর্ণ আড়াল হয়ে গিয়েছে। নদীর অস্তিত্বও বিপন্ন।
কালীতলা বাজার, সামসেরনগর হাইস্কুল চত্বর, কমলাখালি বাজার, নেবুখালি খেয়াঘাট, সামসেরনগর ১ নম্বর স্লুস গেটের কাছেও নদীর চরে গড়ে উঠেছে বাজার। কালীতলা পঞ্চায়েতের প্রধান দীপ্তি মণ্ডল বলেন, ‘‘পর্যটক ক্রমশ বাড়ছে। বাজারও দরকার। তাই নদীর চরের দিকে দোকান হয়েছে। এ ছাড়া জায়গা নেই। তবে এখন আর নতুন করে দোকান করতে দেওয়া হচ্ছে না।’’ পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত বলেন, ‘‘দিনের পর দিন যে ভাবে আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নির্মাণ হচ্ছে, তাতে অচিরেই সুন্দরবন ধ্বংস হবে। সকলে সব জেনেও এই বেআইনি নির্মাণ রুখতে কোনও ব্যবস্থাই গ্রহণ করছে না। বরং সেগুলিকে বৈধতা দিতেই নানা ছল-চাতুরি করে যাচ্ছে। এটা নিন্দনীয়।”