সিল করা হচ্ছে বাসন্তীর একটি নার্সিংহোম। নিজস্ব চিত্র।
উত্তর ২৪ পরগনার বাদুড়িয়ায় নার্সিংহোম থেকে শিশু পাচারের ঘটনায় কয়েকটি নার্সিংহোমের নাম জড়ানোর পরেই জেলার নার্সিংহোমগুলিতে কড়া নজরদারি শুরু করেছে স্বাস্থ্য দফতর এবং বিভিন্ন জেলার প্রশাসন। তাতেই কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে বেরিয়ে আসছে একের পর এক কেউটে। শুক্রবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং মহকুমার বিভিন্ন এলাকার নার্সিংহোমে গিয়ে তল্লাশি চালিয়ে চোখ কপালে উঠল জেলা প্রশাসনের কর্তাদের। এক দিনের অভিযানেই ধরা পড়ল নানা অনিয়ম। নিয়ম ভাঙার অভিযোগে ‘সিল’ করা হয়েছে কয়েকটি নার্সিংহোম।
সোনাখালি শ্রীরামকৃষ্ণ চ্যারিটেবল হাসপাতালে ২৫টি শয্যার অনুমতি থাকলেও ভিতরে গিয়ে দেখা যায় ৫৫টি শয্যা রয়েছে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, তারা প্রশাসনকে যে লাইসেন্স দেখিয়েছে, তার তিন জায়গায় তিন জায়গায় তিন রকম তারিখ রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, শ্রীরামকৃষ্ণ চ্যারিটেবল হাসপাতালে মোটা টাকার বিনিময়ে গর্ভাবস্থায় ভ্রূণের লিঙ্গ নির্ধারণ করা হয়। শুক্রবার প্রশাসনের প্রতিনিধি দল ওই চ্যারিটেবল হাসপাতালে গিয়ে ইউএসজি মেশিন দেখাতে বললে নার্সিংহোমের মালিক তথা হাতুড়ে বাসুদেব ভট্টাচার্য দাবি করেন, ইউএসজি মেশিনটি খারাপ। একটি খারাপ মেশিন দেখানোও হয়। কিন্তু তিনি ওই মেশিনের কোনও নথি দেখাতে পারেননি। পরে অফিস ঘরের নথি ঘেঁটে দেখা যায়, দু’দিন আগেও সেখানে ইউএসজি করা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত প্রতিনিধি দলের চাপে নতুন ইউএসজি মেশিন বের করেন বাসুদেববাবু। প্রতিনিধি দলের সদস্যরা ওই চ্যারিটেবল হাসপাতালের ডেলিভারি রেজিস্টার সিজ করে দেয়।
এ দিন দুপুরে বাসন্তীর শাশ্বত স্বাস্থ্য সুরক্ষা নামে একটি নার্সিংহোমে তল্লাশি যায় জেল প্রশাসনের প্রতিনিধি দল। নেতৃত্বে ছিলেন মহকুমা স্বাস্থ্য আধিকারিক ইন্দ্রনীল সরকার, বাসন্তীর বিএমওএইচ রামকৃষ্ণ ঘোষ-সহ কয়েক জন পদস্থ কর্তা। সেই নার্সিংহোমে ঢুকে দেখা যায়, ছোট ছোট অন্ধকারাছন্ন স্যাঁতস্যাঁতে ঘরের মধ্যে সদ্য সিজার হওয়া মা এবং তাঁর সন্তানকে রাখা হয়েছে। নার্সিংহোমের ভিতরের সেই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ দেখে আঁতকে ওঠেন মহকুমা স্বাস্থ্য আধিকারিক। প্রশাসনের কর্তাদের সামনে পেয়ে অনেকেই নার্সিংহোমের পরিষেবা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ওই নার্সিংহোমে ভর্তি ১১ জন রোগীকে বাসন্তী ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তির ব্যবস্থা করা হয়। দু’জনকে এমআর বাঙ্গুর হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। যদিও এ দিন নার্সিংহোমের মালিক হৃষিকেশ সর্দার ছিলেন না। তবে তার মেয়ে দীপিকা সর্দার পেশায় দন্ত চিকিৎসক। তাঁর থেকে নার্সিংহোমের প্রয়োজনীয় নথি চাওয়া হলে তিনি কিছুই দেখাতে পারেননি। প্রশাসন ওই নার্সিংহোমের অপারেশন থিয়েটার সিল করে দেয়। ওই প্রতিনিধি দলটি বাসন্তী নার্সিংহোমে গেলে দেখা যায় সেখানে তালা ঝুলছে।
ক্যানিঙের মহকুমা স্বাস্থ্য আধিকারিক ইন্দ্রনীল সরকার বলেন, ‘‘আমরা তিনটি নার্সিংহোমে যাই। একটিতে কোনও নথি ছিল না। সেই নার্সিংহোমের অপারেশন থিয়েটার সিল করা হয়েছে। অন্য একটি নার্সিংহোম তালা মেরে সবাই চলে গিয়েছিল। আর একটি নার্সিংহোমের নথিতে ত্রুটি থাকায় তার ডেলিভারি রেজিস্টার সিজ করা হয়েছে।’’ ক্যানিঙের মহকুমাশাসক প্রদীপ আর্চার্য বলেন, কয়েকটি নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল। সেগুলি পরিদর্শন করা হয়েছে। যাদের নথি ঠিক নেই তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ দিন বারুইপুরের এসিএমওএইচ মৃদুল ঘোষ, ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট স্বপ্না পাল ও বারুইপুর হাসপাতালের সুপার জয়া বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দল বারুইপুরের উত্তরভাগ নার্সিংহোম পরিদর্শনে যান। ওই নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ নথি দেখাতে না পারায় প্রশাসন সেটি সিল করে দেয়। বারুইপুর ফুলতলার লোকনাথ সেবা সদন নামে একটি নার্সিংহোমে গিয়েও কোনও নথি পাওয়া যায়নি। ওই নার্সিংহোমটির মালিক রামনগর ২ পঞ্চায়েতের তৃণমূলের সদস্য স্বরূপা মুখোপাধ্যায়ের। প্রশাসনের লোকজন তার নার্সিংহোম সিল করতে গেলে সেখানে উপস্থিত হন এক তৃণমূল নেতা। তিনি প্রশাসনের কর্তাদের নার্সিংহোম সিল করা যাবে না বলে হুমকি দেন বলে অভিযোগ। তবে প্রশাসনের কর্তারা ওই নার্সিংহোমের অপারেশন থিয়েটার ও একটি ফিমেল ওয়ার্ড সিল করে দিয়েছেন।