এই কলেজেই টাকা তছরুপের অভিযোগ উঠেছে। ইনসেটে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সিপিএমের প্রতিবাদ সভা। সম্প্রতি নহাটায়। নিজস্ব চিত্র।
দীর্ঘদিন ধরে ইউজিসি থেকে পাওয়া লক্ষ লক্ষ টাকা কলেজের উন্নয়নে খরচ না করে দুর্নীতি করা হয়েছে। এমনই অভিযোগ উঠল উত্তর ২৪ পরগনার নহাটা যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল স্মৃতি মহাবিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে। ইউজিসি কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, খরচের সঠিক হিসেব দেখাতেনা পারলে কলেজের অনুমোদন বাতিলও হতে পারে। বিষয়টি নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক দায় ঠেলাঠেলির পালাও।
স্থানীয় সূত্রে খবর, বাম আমলে কলেজটি তৈরি হয়। বর্তমানে পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় ৩ হাজার। গরিব পরিবারের ছেলেমেয়েরাই বেশি। ইতিমধ্যে টাকা তছরুপের অভিযোগ তুলে পথে নেমেছে সিপিএম। দিনকয়েক আগে তারা এলাকায় প্রতিবাদ সভা করে। সিপিএমের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে ইউজিসি থেকে বিভিন্ন প্রকল্প বাবদ প্রাপ্ত অর্থের কোনও হিসেব এখনও পেশ করতে পারেনি কলেজ কর্তৃপক্ষ। কলেজের নিজস্ব তহবিল থেকে প্রাচীর নির্মাণ, কলেজ রং করা, মঞ্চ প্রস্তুত হলেও বিধায়ক কোটা বা অন্যান্য প্রকল্পের লোগো বা প্লেট বসানো হয়েছে। আরও অভিযোগ, ২০১০ সালে ছাত্রছাত্রীদের ভর্তির জন্য মাথাপিছু দিতে হত ৮০০ টাকা। এখন তা বাড়িয়ে ৩ হাজার টাকা করা হয়েছে। অভিযোগ, এই অর্থ দিয়ে শাসক দলের নির্দেশে ১৭ জন ‘ক্যাজুয়াল কর্মী’ নিয়োগ করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয়। সরকারি বরাদ্দ থাকলেও তফসিলি জাতি, উপজাতি এবং ওবিসি পড়ুয়াদের প্রাপ্য অর্থ, বই কেনা বাবদ অর্থের কোনও হিসেব নেই।
এই অভিযোগের ভিত্তিতে সিপিএমের পক্ষ থেকে দুর্নীতির পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে দোষীদের শাস্তির দাবি তোলা হয়েছে। মঙ্গলবার অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ মিছিল করা হয়। নহাটা প্রতিবাদী মঞ্চের পক্ষ থেকে কয়েক বছর ধরে কলেজের দুর্নীতি নিয়ে প্রশাসনিক স্তরে স্মারকলিপি, পথসভা, মিছিল করা হচ্ছে। প্রতিবাদী মঞ্চের আহ্বায়ক প্রদীপ সরকার বলেন, ‘‘কলেজের উন্নয়নমূলক কাজ যেমন, নতুন ভবন নির্মাণ, পাঠাগারের বই কেনা, অফিসের ল্যাপটপ, পানীয় জলের প্রকল্প, সাউন্ড সিস্টেম, অতিথি শিক্ষক নিয়োগ-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইউজিসি থেকে পাওয়া অর্থের প্রচুর দুর্নীতি হয়েছে। কাজের কাজ কিছু হয়নি।’’
এই বিষয়ে বনগাঁর প্রাক্তন বিধায়ক তথা সিপিএম নেতা পঙ্কজ ঘোষ বলেন, ‘‘কলেজের দুর্নীতি নিয়ে বামপন্থীরা কর্মসূচি পালন করছে। টাকা বাম আমলে আসলেও দুর্নীতি হয়েছে তৃণমূলের সময়ে। আমরা দুর্নীতির তদন্ত চাইছি। ইউজিসি ছাড়াও কলেজের জেনারেল ফান্ডের অর্থও তছরুপ করা হয়েছে।’’
ইউজিসি থেকে প্রাপ্ত অর্থ খরচ করা নিয়ে যে অস্বচ্ছতা আছে, তা স্বীকার করছেন অধ্যক্ষ অর্ণব ঘোষ। তিনি ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে কলেজে যোগ দিয়েছিলেন। তাঁর দাবি, তিনি কলেজে যোগদান করার পর আর ইউজিসির থেকে কোনও টাকা আসেনি। তাঁর কথায়, ‘‘২০০২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ইউজিসি থেকে পাওয়া অর্থ কোন খাতে খরচ হয়েছে তার হিসেব করে ‘ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট’ জমা দেওয়া হয়েছিল ইউজিসির কাছে। তবে ইউজিসি কর্তৃপক্ষ তাতে সন্তুষ্ট হয়নি। কলেজে নথিপত্র ঠিক ভাবে সংরক্ষণ করা হয়নি। পাশাপাশি টাকা খরচ নিয়ে প্রচুর অস্বচ্ছতাও আছে। তবে এর জন্য আমি দায়ী নই। বর্তমানে কলেজটিকে বাঁচানোর জন্য আমাকে খাটতে হচ্ছে।’’ কলেজের পরিচালন সমিতির সদস্য তথা স্থানীয় পাল্লা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের নিশিত বালা বলেন, ‘‘ইউজিসি কর্তৃপক্ষ চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, ৪৩ লক্ষ ৩৬ হাজার টাকা ফেরত দিতে হবে অথবা কোন খাতে তা খরচ হয়েছে তার সঠিক হিসেব জমা দিতে হবে। না হলে কলেজের অনুমতি বাতিল হতে পারে।’’
তিনি আরও জানান, ইউজিসি থেকে পাওয়া অর্থে কেনা সরঞ্জাম বা খরচের ভাউচার অনেক ক্ষেত্রেই ঠিকঠাক নেই। সঠিক সময়ে হিসেব ইউজিসির কাছে জমা দেওয়া হয়নি। তাঁর অভিযোগ, ‘‘বাম আমল থেকেই এসব হয়েছে। কলেজ বাঁচানোর জন্য পরিচালন সমিতিতে বৈঠক করে কলেজ তহবিলের টাকা থেকে কিছু টাকা ইউজিসিকে দেওয়া যায় কি না তা দেখা হচ্ছে।’’ নিশিত আরও জানান, এই বিষয়ে আলোচনার জন্য পূর্বতন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও বিগত দিনে যারা কলেজ পরিচালন সমিতিতে ছিলেন তাঁদেরও চিঠি দিয়ে সমিতির বৈঠকে ডাকা হবে।