পুলিশি-টহল: ক্যানিংয়ে। নিজস্ব চিত্র।
তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে বোমাবাজি, গুলি চালানোর অভিযোগ উঠল ক্যানিংয়ের ইটখোলা পঞ্চায়েতের চেটুয়া পাড়ায়। সোমবার রাত থেকেই গোলমাল শুরু হয়। মঙ্গলবার সকালে দু’পক্ষের মধ্যে বোমাবাজি ও গুলির লড়াই চলে। দু’পক্ষের অন্তত ১০ জন জখম হয়েছেন। তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। সকলকে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ক্যানিং থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, দীর্ঘ দিন ধরেই এই এলাকায় যুব তৃণমূল নেতা ইন্দ্রজিৎ সর্দারের সঙ্গে তৃণমূল নেতা খতিব সর্দারের বিবাদ রয়েছে। আগেও একাধিকবার দু’পক্ষের মধ্যে ঝামেলা হয়েছে। সোমবার এলাকার এক ব্যক্তির মৃত্যুর পরে তাঁর দেহ সৎকার নিয়েও দু’পক্ষের মধ্যে বচসা বাধে। রাতে দু’পক্ষই বোমাবাজি করে বলে অভিযোগ।
তৃণমূল কর্মীদের অভিযোগ, মঙ্গলবার সকালে যুব তৃণমূল নেতা আতিয়ার রহমান মণ্ডলের বাড়ির সামনে দিয়ে স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য মুসা শেখের দুই ভাই সামসুদ্দিন শেখ ও রজভ আলি শেখ বাড়িতে ফেরার সময়ে তাঁদের পথ আটকায় আতিয়ারের অনুগামীরা। তাঁদের ওই রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করতে বারণ করেন যুব তৃণমূলের নেতা। প্রতিবাদ করলে দুই তৃণমূল কর্মীকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ।
এর জেরেই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বোমাবাজি শুরু হয়ে যায়। চলে গুলির লড়াই। স্থানীয়দের দাবি, ঘটনায় দু’জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। যদিও পুলিশ তা মানতে চায়নি।
স্থানীয় পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তথা ইটখোলা পঞ্চায়েতের তৃণমূল অঞ্চল সভাপতি খতিব সর্দার বলেন, ‘‘দীর্ঘ দিন ধরেই যুব তৃণমূলের নাম করে ইন্দ্রজিৎ সর্দার এলাকায় অশান্তি করছে। নিজেকে যুব তৃণমূল কর্মী বললেও বাস্তবে তৃণমূলের জামা পরে বিজেপি করছে। কারণে-অকারণে আমাদের কর্মীদের উপরে হামলা করছে। এ দিনও ইন্দ্রজিতের নেতৃত্বে হামলা চালায় আতিয়ার ও তাদের অনুগামীরা। আমাদের চার কর্মী আহত হয়েছেন।”
অভিযোগ অস্বীকার করে ইন্দ্রজিৎ বলেন, “এলাকায় দীর্ঘ দিন ধরেই তোলাবাজি করছে খতিব ও তার লোকেরা। আমপান ক্ষতিপূরণ নিয়েও দুর্নীতি করেছে। গ্রামবাসীরা প্রতিবাদ করায় এ দিন যুব তৃণমূল নেতা আতিয়ারের বাড়িতে চড়াও হয়ে হামলা করে ওরা। গ্রামবাসীরা প্রতিরোধ গড়ে তুললে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।”
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল সভাপতি শুভাশিস চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বিষয়টি জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখছি।”
এ দিকে, দিনের পর দিন এলাকায় তৃণমূলের দুই পক্ষের মধ্যে অশান্তির জেরে এলাকার মানুষ আতঙ্কিত। স্থানীয় বাসিন্দা গগন সর্দার বলেন, ‘‘লকডাউন, করোনার জেরে এলাকায় কাজ নেই, খাবার নেই। মানুষ সমস্যায় রয়েছেন। তার মধ্যেই দিনের পর দিন অশান্তি লেগে রয়েছে। আমরা একটু শান্তিতে থাকতে চাই। প্রশাসন আমাদের নিরাপত্তা দিক।” ঘটনার পরে এলাকায় পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এই ঘটনায় পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।