(বাঁ দিক থেকে) চিকিৎসক অভিজিৎ নস্কর। (ডান দিকে) মুনমুন মোল্লা। —নিজস্ব চিত্র।
হাসপাতালের লাইনে দাঁড়াতে তিনি নারাজ। লাইন ভেঙে চিকিৎসকের কাছে গিয়ে দাবি করেন, তখনই তাঁর রোগীদের দেখতে হবে। ফিটনেস সার্টিফিকেট দিয়ে দিতে হবে তখনই। চিকিৎসক তাতে রাজি-না হওয়ায় তাঁর উপর চড়াও হওয়ার অভিযোগ উঠল এক যুবতীর বিরুদ্ধে। নিজেকে তৃণমূলের নেত্রী বলে দাবি করে তিনি তুইতোকারি করেন কর্তব্যরত চিকিৎসককে। হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘‘তোর চাকরি খেয়ে নেব।’’ রুখে দাঁড়ান ওই চিকিৎসক। তাঁর সমর্থনে এগিয়ে আসেন অন্যান্য রোগী। শেষমেশ পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন স্বঘোষিত তৃণমূল নেত্রী মুনমুন মোল্লা। আরজি কর-কাণ্ড নিয়ে শোরগোলের মধ্যে মঙ্গলবার এই ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুর মহকুমা হাসপাতালে।
স্থানীয় সূত্রের খবর, অভিযুক্ত মুনমুন জয়নগরের বামুনের চক এলাকার বাসিন্দা। এলাকায় তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী বলেই তিনি পরিচিত। স্থানীয় বেশ কয়েক জন যুবককে সঙ্গে নিয়ে মঙ্গলবার সকালে বারুইপুর মহকুমা হাসপাতালে ঢোকেন যুবতী। ওই যুবকদের চাকরির পরীক্ষার জন্য প্রয়োজন ছিল চিকিৎসকের শংসাপত্রের। অভিযোগ, হাসপাতালে ঢুকেই মুনমুন দাবি করেন, তিনি যাঁদের নিয়ে এসেছেন, তাঁদের সবাইকে আগে ‘ফিট সার্টিফিকেট’ দিতে হবে। তখন অভিজিৎ নস্কর নামে এক চিকিৎসক রোগী দেখছিলেন। তিনি লাইনে দাঁড়িয়ে ওই মহিলাকে অপেক্ষা করতে বলেন। তার পরেই শুরু হয় চমক-ধমক।
ওই চিকিৎসকের কথায়, ‘‘অন্যান্য দিন ওপিডিতে যেমন ভিড় থাকে, আজও ছিল। রোগী দেখছিলাম। তখনই ওই মহিলা এসে ‘ফিটনেস সার্টিফিকেট’ দিতে বলেন। আমি অপেক্ষা করতে বলায় উনি জানান, আমার চাকরি খেয়ে নেবেন। আমি বললাম, আপনি যা পারেন করুন। ডাকুন, আপনার কোন নেতাকে ডাকবেন। চাকরি গেলে যাবে।’’ ওই সময় উপস্থিত রোগীরা মহিলার এই ব্যবহারের প্রতিবাদ জানান। তাঁদেরই কেউ থানায় খবর দিয়েছিলেন। পরে বারুইপুর থানার পুলিশ এসে অভিযুক্তাকে আটক করে নিয়ে যান। চিকিৎসক জানিয়েছেন, তাঁরাও একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন থানায়।
হাসপাতালে সুপার ধীরাজ রায় বলেন, ‘‘বারুইপুর হাসপাতালের পক্ষ থেকেও থানায় আলাদা করে একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। আসলে মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাবে এই রকমের ঘটনা ঘটছে। তবে যে সমস্ত রোগী চিকিৎসার জন্য এসেছিলেন, তাঁদের অনেকেই রুখে দাঁড়িয়েছেন।’’ বারুইপুরের এসডিপিও অতীশ বিশ্বাস জানান পুলিশ ঘটনার তদন্ত করছে।