চোরাগোপ্তা নাবালিকা বিয়ে, অকালে যাচ্ছে বহু প্রাণ
Child Marriage

Child Marriage: কচি হাতে সংসারের হাল ধরছে ওরা, চলছে অত্যাচার

সন্দেশখালিতে নাবালিকা বধূর মৃত্যুতে তার স্বামীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বছরখানেক আগে মেয়েটি নিজের পছন্দে পাশের গ্রামের এক যুবককে বিয়ে করেছিল।

Advertisement

নবেন্দু ঘোষ 

সন্দেশখালি শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০২২ ০৭:০৭
Share:

প্রতীকী ছবি।

দিন কয়েক আগে সন্দেশখালিতে নাবালিকা বধূর মৃত্যুতে তার স্বামীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বছরখানেক আগে মেয়েটি নিজের পছন্দে পাশের গ্রামের এক যুবককে বিয়ে করেছিল। অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই কিশোরীর উপরে নানা ভাবে অত্যাচার শুরু করে শ্বশুরবাড়ির লোকজন। সোমবার রাতে সেখানেই মৃত্যু হয় নাবালিকার। স্বামী-সহ শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন নাবালিকার পরিবারের সদস্যেরা।

Advertisement

এই ঘটনা ফের প্রমাণ করল, প্রশাসনের বহু প্রচারের পরও নাবালিকা বিয়েত পুরোপুরি রাশ টানা যায়নি। বিশেষ করে, গত দু’বছরে লকডাউন পরিস্থিতিতে নাবালিকা বিয়ের প্রবণতা অনেকটাই বেড়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রেই এই বিয়ের পরিণতি সুখের হচ্ছে না। শ্বশুরবাড়িতে নানা ভাবে অত্যাচারের শিকার হতে হচ্ছে তাদের। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে বাপের বাড়িতে ফিরেও আসছে অনেকে। হাসনাবাদ-হিঙ্গলগঞ্জের চাইল্ড লাইনের সাবসেন্টার কেয়ার ডিরেক্টর শাকিলা খাতুন বলেন, “অনেক ক্ষেত্রেই নাবালিকা বিয়ের কথা আমরা জানতে পারি না। তবে নির্যাতিত হওয়ার পরে পরিবার আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তখন জানা যায়। ব্যবস্থাও নেওয়া হয়।”

চাইল্ড লাইন সূত্রে এ রকমই কয়েকটি ঘটনা জানা গেল। বছর দেড়েক আগে হিঙ্গলগঞ্জের কাটাখালির এক বছর ষোলোর কিশোরীর বিয়ে হয় হাসনাবাদের রাঘবপুর গ্রামে। দেখাশোনা করে বিয়েতে যৌতুকে বাবদ প্রায় দেড় লক্ষ টাকা, বাইক দেওয়া হয়েছিল। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই কেন সন্তান হচ্ছে না, সেই প্রশ্ন তুলে শ্বশুরবাড়িতে নির্যাতন শুরু হয় নাবালিকার উপরে। সংসারের কাজ, খেতে চাষের কাজ ঠিক মতো না পারার অজুহাতে গালিগালাজ, মারধর চলত তার উপরে। কিশোরী মাসখানেক আগে বাপের বাড়িতে চলে আসে।

Advertisement

হাসনাবাদের ট্যাংরা গ্রামের এক কিশোরীর পরিণতিও অনেকটা এ রকমই। বছর তিনেক আগে দেখাশোনা করে পনেরো বছরের মেয়েটির বিয়ে দেওয়া হয়। বিয়ের পর থেকেই শ্বশুরবাড়িতে অত্যাচার শুরু হয়। ভাল করে খেতেও দেওয়া হত না। অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে কয়েক মাস আগে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় বাপের বাড়ি ফিরে আসে কিশোরী।

শাকিলা জানান, হাসনাবাদ-হিঙ্গলগঞ্জ ব্লক থেকে প্রতি মাসে গড়ে তিন-চারটি এ রকম নাবালিকা বধূ নির্যাতনের অভিযোগ আসছে। তবে অধিকাংশ সময়েই লোকলজ্জার ভয়ে থানা-পুলিশ করতে চায় না নাবালিকার পরিবার। ফলে বহু নির্যাতনের ঘটনা অজানা থেকে যায় প্রশাসনের কাছে।

হাসনাবাদের দুর্গাপুর বায়লানি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সমীরকুমার মান্না জানান, বছরখানেক আগে এক স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রীকে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে জানতে পেরে বাড়িতে যান শিক্ষকেরা। বাবা-মাকে বুঝিয়ে এসেছিলেন। তবে তারপরেও লুকিয়ে মেয়ের বিয়ে দিয়ে দেন তাঁরা। কয়েক মাসের মধ্যেই ওই ছাত্রীকে ছেড়ে চলে যায় স্বামী। নাবালিকা মেয়ের বিয়ে দেওয়ায় পুলিশ ব্যবস্থা নিতে পারে ভেবে ছাত্রীর বাবা-মা থানায় যেতে সাহস পাননি। ওই ছাত্রী এখন পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করছে।

হাসনাবাদের রামেশ্বরপুর নেহরু বিদ্যানিকেতনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শান্তনু রায় জানান, স্কুলের দুই নাবালিকা ছাত্রীর কয়েক বছর আগে বিয়ে হয়ে যায়। কিছুদিনের মধ্যেই স্বামী ছেড়ে চলে যায়। এ ক্ষেত্রেও পরিবারগুলি পুলিশের কাছে যেতে সাহস করেনি। দুই ছাত্রী পরে আবার স্কুলে ভর্তি হয়। এ বছর তারা মাধ্যমিক পাশ করেছে।

শান্তনু বলেন, “স্কুলে কন্যাশ্রী ক্লাবের সদস্যেরাও অনেক সময়ে সাহস করে কোনও মেয়ের বিয়ের খবর জানাতে পারে না। তাদের উপরে পরিবারের চাপ থাকে। পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির ভয় থাকে। লকডাউনে স্কুল বন্ধ থাকায় কন্যাশ্রী ক্লাবের সদস্যেরাও অবশ্য তথ্যও পায়নি।”

পুলিশের দাবি, খবর পেলেই অভিযান চালিয়ে বন্ধ করা হয় নাবালিকা বিয়ে। হাসনাবাদের আইসি কৃষ্ণেন্দু ঘোষ বলেন, “নাবালিকার বিয়ের খবর এলে আইনি পদক্ষেপ করা হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে বালিকা বধূকে হোমে পাঠানো হয়েছে। মেয়ের বাবা-মা বা স্বামীকে বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতারও করা হয়েছে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement