বসিরহাট পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডে সকাল থেকে বহিরাগতেরা বুথ দখল করে রিগিং করছে বলে অভিযোগ ওঠে। ঘটনাস্থলে যান বিজেপি প্রার্থী সুজয় চন্দ্র। ইভিএম ভাঙচুরের অভিযোগে পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। দলের বসিরহাট জেলা সভাপতি তাপস ঘোষ বলেন, ‘‘চোখের সামনে যদি কেউ এ ভাবে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করেন, তা হলে তো মানুষ প্রতিবাদ করবেনই। বুথে ভোট লুট হচ্ছে দেখে ইভিএম জনতাই ইভিএম ভেঙে দিয়েছে। আমাদের প্রার্থী এর সঙ্গে জড়িত নন।’’ সিপিএম-কংগ্রেসের কয়েক জনকেও গ্রেফতার করে পুলিশ। সন্ধের পরে তিন দলের কর্মী-সমর্থকেরা বিক্ষোভ দেখান থানার বাইরে। পরে সকলকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ছবি: নির্মল বসু
কোথাও ছাপ্পা, বুথের জ্যামের নালিশ, ইভিএম ভাঙচুর, বোমাবাজি,মারামারি,অবরোধ— ভোটের দিন নানা ঘটনার সাক্ষী থাকল বসিরহাট। অনেকেই বুথে ঢুকে শুনেছেন, তাঁর ভোট পড়ে গিয়েছে।
বসিরহাট এবং বাদুড়িয়ায় চুম্বকে এই হল রবিবাসরীয় ভোটচিত্র। পুলিশ-প্রশাসনের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলছে বিরোধীরা। সে কথা মানেনি প্রশাসন। শাসক তৃণমূলেরও দাবি, দু’একটি বিচ্ছিন্ন গোলমাল ছাড়া ভোট মিটেছে শান্তিতেই।
ইভিএম মেশিন ভাঙার অভিযোগে বসিরহাট পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী সুজয় চন্দ্রকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। ২১ নম্বর ওয়ার্ডের দু’টি বুথে ঢুকে তাণ্ডব চালানোর পাশাপাশি দু’টি ইভিএম ভাঙচুরের অভিযোগে ধরা পড়েছে সিপিএমের এক কর্মী।
১৮ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস কর্মীকেও ইভিএম ভাঙচুরের অভিযোগে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
প্রশাসন সূত্রের খবর, বসিরহাটে ৬টি ইভিএম ভাঙচুর হয়েছে। তার মধ্যে দু’টির ক্ষেত্রে মেশিন পরিবর্তন করে ফের ভোট নেওয়া হয়।
বসিরহাট পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডে মন্দিরঘাটা দেশপ্রিয় প্রাথমিক স্কুলের বুথের সামনে ছাপ্পা মারার অভিযোগে উত্তেজনা ছড়ায়। একদল লোক বুথের মধ্যে ঢুকে ভোট মেশিন আছড়ে ভেঙে ফেলে। নির্বাচনী অবজার্ভার ঘটনাস্থলে যান। ইভিএম ভাঙার অভিযোগে বিজেপি প্রার্থীকে পুলিশ গ্রেফতার করে। ওই বুথের প্রিজাইডিং অফিসার নুর ইসলাম বলেন, ‘‘বুথের বাইরে গন্ডগোল চলছিল। একদল লোক পুলিশের সামনেই আছড়ে ভোট মেশিন ভাঙে।’’ ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী শমীক রায় অধিকারী বলেন, ‘‘মানুষ যাতে শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোট দিতে না পারেন, সে জন্য বিজেপি প্রার্থী ভোট মেশিন ভেঙেছেন।’’ সুজয় বলেন, ‘‘ভোট লুট হচ্ছে দেখে ক্ষুব্ধ জনতা ভোট মেশিন ভাঙেন। আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে।’’
ওই ওয়ার্ডের পাশে ৫ নম্বর ওয়ার্ডে সিপিএম প্রার্থী কিঙ্কর রায়ের অভিযোগ, কামিনীবালা প্রাথমিক স্কুলে তাঁদের এজেন্টকে বন্দুক দেখিয়ে বসতে দেওয়া হয়নি। বহিরাগতদের এনে দৌরাত্ম্য চালিয়েছে তৃণমূল। ছাপ্পা ভোট দেওয়া হয়েছে। দুষ্কৃতীদের ভয়ে শৌচালয়ে ঢুকে লুকিয়ে ছিল পুলিশ। পুলিশ অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। গোলমালের অভিযোগ মানেনি তৃণমূলও।
ছাপ্পা ভোটের অভিযোগে ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে বসিরহাট কলেজে বুথের সামনে টাকি রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায় বিজেপি। পুলিশ গিয়ে বিক্ষোভকারীদের হটিয়ে দেয়।
ইতিমধ্যে কলেজের সামনে কয়েকটি বোমা পড়ে। বিজেপি প্রার্থী পার্থসারথি বসু বলেন, ‘‘পুলিশ দর্শকের ভূমিকা নেওয়ায় অবাধে ছাপ্পা মারছে শাসকদলের ছেলেরা। প্রতিবাদ করায় পুলিশ উল্টে আমাদের উপরে হম্বিতম্বি করছে।’’ ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী ভাস্কর মিত্র বলেন, ‘‘এখানে শান্তিতে ভোট চলছে। পরাজয় নিশ্চিত বুঝে বিরোধীরা মিথ্যা অভিযোগ করছে।’’
বাদুড়িয়ার ২, ১০, ১৫, ১৬ নম্বর-সহ কয়েকটি ওয়ার্ডের বুথে রিগিং, ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ তুলেছে বিরোধীরা। বোমাবাজি হয় ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে। ছাপ্পা, রিংগিংয়ের অভিযোগ মানেনি তৃণমূল।
দিনের শেষে বসিরহাট দক্ষিণের বিধায়ক সপ্তর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শান্তিতে ভোট হয়েছে। ছোটখাটো দু’একটি ছাড়া কোথাও কোনও গন্ডগোল হয়নি। কয়েকটি বুথে বিজেপি অশান্তি বাধানোর চেষ্টা করলেও মানুষের প্রতিরোধে তা সফল হয়নি।’’
বিজেপি নেতা তাপস ঘোষ অবশ্য বলেন, ‘‘প্রতিটি বুথে শাসকদলের বহিরাগতেরা পুলিশের সহযোগিতায় অবাধে ছাপ্পা মেরেছে। প্রতিবাদ করলে পুলিশ আমাদের লোকজনদের হটিয়ে দেয়।’’
কংগ্রেস নেতা হিরন্ময় দাসের কথায়, ‘‘একটার পর একটা যে ভাবে বুথ দখল হয়েছে, তা মানুষ ভুলবেন না।’’ সিপিএম নেতা সুব্রত বিশ্বাস বলেন, ‘‘পুলিশ-প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে বুথ দখল করে নজিরবিহীন ভাবে ভোট লুট করা হল।’’