রাতভর: হাসপাতালে জেগে আছেন টিকা নিতে আসা লোকজন। ছবি: সুজিত দুয়ারি
প্রথম ডোজের ভ্যাকসিন দেওয়া হবে জেনে সোমবার সকাল থেকে দীর্ঘ লাইন পড়ল হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতাল চত্বরে। মঙ্গলবার সকালে টিকা পাওয়ার জন্য মরিয়া সকলে।
সোমবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নোটিস দিয়ে জানান, মঙ্গলবার সকালে তিরিশজনকে প্রথম ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। পাশাপাশি দ্বিতীয় ডোজও দেওয়া হবে। কয়েকদিন বন্ধ থাকার পরে মঙ্গলবার প্রথম ডোজ দেওয়া হল হাসপাতাল থেকে। লাইন পড়েছে সোমবার থেকেই।
সোমবার রাতে হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল, টিকা নিতে মানুষ হাসপাতাল চত্বরে খবরের কাগজ, পলিথিন, মাদুর পেতে শুয়ে আছেন। সঙ্গে হাতপাখা, জলের বোতল ও মশা মারার ধূপ। বাড়ি থেকে আত্মীয়-স্বজনেরা খাবার নিয়ে আসছেন।
টিকার জন্য অপেক্ষা করা শিবানী মণ্ডল জানালেন, আগে টিকা নিতে ১০-১২ দিন হাসপাতালে এসে ফিরে গিয়েছেন। এ বার সুযোগ আর হাতছাড়া করতে চান না। মঙ্গলবার সকালে টিকা নেবেন বলে সোমবার সকাল থেকে হাসপাতালে এসে হত্যে দিয়ে পড়ে আছেন।
শিবানীর মতো আরও অনেকেই সোমবার সকাল থেকে লাইনে ছিলেন। অনেকেরই স্নান-খাওয়া ঠিকমতো হয়নি। কারও আত্মীয় খাবার এনেছিলেন, কেউ আবার হোটেল-দোকান থেকে খাবার কিনে খেয়েছেন। এক ব্যক্তি বললেন, ‘‘শুনেছি করোনার তৃতীয় ঢেউ আরও ভয়ঙ্কর হবে। তাই টিকা নিতে চাইছি। আগে হাসপাতালে রাত জেগেও টিকা পাইনি। সে কারণে সকাল থেকে লাইন দিয়েছি।’’
টিকা নিতে আসা মানুষের অভিযোগ, রাতে টিকার জন্য লাইন দিতে এসে তাঁরা দেখেছেন, কিছু যুবক টিকার লাইনে আগে থেকে দাঁড়িয়ে। দেখা গিয়ে্ছে, তাঁরা টাকার বিনিময়ে লোকজনের জন্য লাইন দখল করে রেখেছেন। অভিযোগের কথা শুনেছেন হাসপাতাল সুপার বিবেকানন্দ বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘‘কিছু নেশাভাঙ করা মানুষ এবং স্থানীয় দোকানি টাকার বিনিময়ে লাইন রাখছেন বলে জেনেছি। আমরা ওই ধরনের কাউকে লাইনে দাঁড়াতে দিচ্ছি না। পুলিশ দিয়েও তাঁদের সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’’ হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, টিকা হয় তো দেওয়া হবে পঞ্চাশটি, অথচ মানুষ চলে আসছেন কয়েকশো। ফলে টিকা না পেয়ে অনেকে ক্ষোভ জানাচ্ছেন, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছেন। সুপার বলেন, ‘‘আমরা নোটিস দিয়ে আগে থেকে জানিয়ে দিই, কবে কত ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। প্রথমে যাঁরা লাইনে থাকেন, তাঁদের কুপন দেওয়া হয়। বাকি মানুষদের সেদিনের জন্য ফিরে যাওয়া উচিত। অথচ তা তাঁরা করেন না।’’ তিনি জানান, যেমন যেমন জোগান আসছে, তেমন ভাবেই ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে।
মঙ্গলবার সকাল থেকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে সুষ্ঠু ভাবেই। কোনও বিশৃঙ্খলা ঘটেনি বলে জানাচ্ছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।