পথ দুর্ঘটনা কমাতে প্রতি বছরই সরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন ভাবে প্রচার করা হয়। কখনও ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ বা কখনও ‘পথ নিরাপত্তা সপ্তাহ’ পালনের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করা হয়। কিন্তু তারপরেও বহু রাস্তায় কিছুতেই কমছে না দুর্ঘটনা। মৃত্যুর হারও কমার লক্ষণ নেই।
এ বছরও সরকারি নির্দেশে প্রশাসনের উদ্যোগে ১ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়েছে ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ কর্মসূচি। ইতিমধ্যে ভাঙড়, ক্যানিং, জীবনতলা, ডায়মন্ড হারবার-সহ বিভিন্ন থানা এলাকায় ঘটা করে পালন করা হচ্ছে ওই কর্মসূচি। কোথাও পথনাটিকার মাধ্যমে, কোথাও মোটরবাইক আরোহীদের ফুল, মিষ্টি দিয়ে সচেতন করা হচ্ছে। কিন্তু এত কিছুর পরেও পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার কমানো যাচ্ছে না।
২০১৬ সালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণা অনুযায়ী সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ কর্মসূচি চালু হয়। সেই মতো এই কর্মসূচির মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি, ট্রাফিক আইন মেনে চলার নির্দেশ দেওয়া হয়। বিনা হেলমেটে যাতে কেউ মোটরবাইক না চালান, তার উপরে জোর দেওয়া হয়। পেট্রল পাম্পগুলিকেও নির্দেশ দেওয়া হয়, বিনা হেলমেটের বাইক আরোহীকে যেন পেট্রপণ্য বিক্রি করা না হয়।
এত কিছুর পরেও একদিকে প্রশাসনের নজরদারির অভাব, অন্য দিকে, মানুষের সচেতনতার অভাবে দুর্ঘটনা কমানো যাচ্ছে না।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা বাসন্তী হাইওয়ে। এই রাস্তায় প্রতি নিয়ত পথ দুর্ঘটনা লেগেই রয়েছে। এর মধ্যে কলকাতা লেদার কমপ্লেক্স থানা এলাকায় বাসন্তী হাইওয়ের উপরে পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার সব থেকে বেশি। কলকাতা লেদার কমপ্লেক্স থানা ও তিলজলা ট্রাফিক গার্ড সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৯ সালে কলকাতা লেদার কমপ্লেক্স থানার অধীন বাসন্তী হাইওয়েতে ২২টি পথ দুর্ঘটনা ঘটে। ১২ জনের মৃত্যু হয়। ২০২০ সালে ১৮টি পথ দুর্ঘটনা ঘটে। ১০ জনের মৃত্যু হয়। ২০২১ সালে নভেম্বর মাস পর্যন্ত ২০টি পথ দুর্ঘটনা ঘটেছে। ১০ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। ভাঙড় থানা এলাকায় ২০১৯ সালে ৩৩টি পথ দুর্ঘটনা ঘটে। গুরুতর জখম হন ২২ জন, মৃত্যু হয় ১৪ জনের। ২০২০ সালে ১৩টি পথ দুর্ঘটনা ঘটে। ৫ জন গুরুতর জখম হন, ৫ জনের মৃত্যু হয়। ২০২১ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত ১৯টি পথ দুর্ঘটনা ঘটে। ১৫ জন গুরুতর জখম হন, ১০ জনের মৃত্যু হয়। কাশীপুর থানা এলাকায় ২০২১ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত ২০টি পথ দুর্ঘটনায় ৮ জন গুরুতর জখম হন। ১২ জনের মৃত্যু হয়। গত তিন বছরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ওই সমস্ত থানা এলাকায় পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার প্রায় একই রয়ে গিয়েছে। এত কিছুর পরেও কী কারণে পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার কমানো যাচ্ছে না, তা নিয়ে প্রশাসনের একটি সূত্রের ব্যাখ্যা, গত কয়েক বছরে রাস্তায় যানবাহনের চাপ অনেকটাই বেড়েছে। তার উপরে জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি অনেক রাস্তা সংকীর্ণ হয়ে গিয়েছে। তা ছাড়া, ভৌগোলিক দিক থেকে বাসন্তী হাইওয়েতে প্রচুর বাঁক রয়েছে। সেই সঙ্গে ওই রাস্তার সঙ্গে প্রচুর লিঙ্ক রোড জুড়েছে। পর্যাপ্ত আলো না থাকায় বিশেষ করে রাতের দিকে সমস্যা হয়।
এই রাস্তার উপরে ভোজেরহাট, বামনঘাটা, পাগলাহাট, ঘটকপুকুর-সহ বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার পাশে সরকারি জায়গা জবরদখল করে গড়ে উঠেছে দোকান-বাজার। যে কারণে রাস্তা সংকীর্ণ হয়ে গিয়েছে। এই রাস্তায় দুর্ঘটনার প্রবণতাও এ সব কারণে বেশি।
এ বিষয়ে বারুইপুর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইন্দ্রজিৎ বসু বলেন, ‘‘পথ দুর্ঘটনা কমাতে আমরা বিভিন্ন রকম উদ্যোগ করেছি। মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি প্রতিটি রাস্তায় নজরদারি বাড়িয়েছি। সেই সঙ্গে যাঁরা ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’
কলকাতা লেদার কমপ্লেক্স থানার আইসি প্রশান্ত ভৌমিক বলেন, ‘‘আমাদের থানা এলাকায় পথ দুর্ঘটনা কমাতে রাস্তায় আলো, স্পিড ব্রেকার, গার্ডরেল লাগানো হয়েছে। গাড়ির গতির উপরে নজর রাখতে স্পিডোমিটার লাগানো হয়েছে। তা ছাড়া, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় আরও বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’’
তবে বিভিন্ন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতরের আধিকারিকদের মতে, আইন মেনে চলার প্রবণতা যতদিন না বাড়বে, ততদিন শুধুমাত্র আইন করে বা নিয়মিত প্রচার চালিয়ে দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব নয়।