সরকারি বাস ডিপো। — ফাইল চিত্র।
রাজ্য সরকারের উদ্যোগে জঙ্গল লাগোয়া সামসেরনগর থেকে যাত্রীরা এক বাসে পৌঁছে যাচ্ছিলেন বারাসত, বসিরহাট হয়ে কলকাতা। দুলদুলি থেকে সেই বাস ভেসেলে উঠে নেবুখালি হয়ে রওনা দিত শহরের দিকে। অর্থাৎ বাসেই পেরনো যেত নদী। ফলে, কলকাতার সঙ্গে সুন্দরবনের যোগাযোগ ব্যবস্থার একটি সুন্দর মাধ্যম তৈরি হয়েছিল। সম্প্রতি বন্ধ হয়ে গিয়েছে পরিষেবাটি। ফলে, একদিকে যেমন সমস্যায় পড়েছেন প্রত্যন্ত সুন্দরবন অঞ্চলের মানুষ, তেমনি ভোগান্তি বেড়েছে সুন্দরবনে ঘুরতে আসা পর্যটকদেরও।
স্থানীয় সূত্রে খবর, হিঙ্গলগঞ্জ, সামসেরনগর, কালীতলা-সহ প্রত্যন্ত সুন্দরবনের সঙ্গে শহরের যোগাযোগ ঘটাতে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে দু’বছর আগে ঘটা করে শুরু হয় সামসেরনগর থেকে কলকাতা পর্যন্ত সরকারি বাস পরিষেবা। ১০টা বাসের অনুমোদন থাকলেও প্রথমে ২টো সরকারি বাস চালু হয়। একশো কিলোমিটারের উপর রাস্তা যেতে ভাড়া লাগত ৮০ টাকা। এতে সুন্দরবনের মানুষ সহজে শহরে পৌঁছে যেতেন। অন্য দিকে, এক বাসে সুন্দরবন পৌঁছনোর সুযোগ থাকায় কলকাতা, বারাসত, বসিরহাট থেকে কালীতলা এলাকায় পর্যটকদের ভিড়ও বাড়তে শুরু করে। এতে লাভবান হচ্ছিলেন সুন্দরবনের ছোট ব্যবসায়ীরা।
মাস কয়ের আগে এই বাস পরিষেবা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ফলে, ভোগান্তিতে পড়েছেন সুন্দরবন অঞ্চলের মানুষেরা। স্থানীয় মানুষদের দাবি, বাসে মাত্র তিন ঘণ্টায় তাঁরা বারাসতে পৌঁছে যেতেন। এখন একই পথ যেতে ছ’থেকে সাত ঘণ্টা লেগে যাচ্ছে। একাধিকবার যান বদল করতে হচ্ছে। এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘‘বর্তমানে বারাসত পৌঁছতে হলে সামসেরনগর থেকে ৫-৬ বার বাস বদল করতে হয়। খরচ হয় প্রায় ১৭০ টাকা। সময় লাগে প্রায় ৬ ঘণ্টা।’’
রামদয়াল মণ্ডল নামে কালীতলা এলাকার এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘সরকারি বাস চালু হওয়ায় এখানে অনেক পর্যটকেরা আসছিলেন। কিন্তু এখন হাতেগোনা কয়েকজন আসেন। আমাদের ব্যবসায় মন্দা দেখা দিয়েছে। ব্যবসার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আনতেও খুব অসুবিধা হচ্ছে। বন্ধের মুখে পড়েছে কালীতলা এলাকার পর্যটন কেন্দ্র।’’
নেবুখালির এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা সুকোমল মণ্ডল, প্রতিমা সাহারা বলেন, ‘‘বাসে অনেক কম খরচে বারাসতে পৌঁছে যেতাম। এখন টাকা ও সময় দুটোই বেশি লাগছে। তা ছাড়া অসুস্থ মানুষ বা শিশুদের নিয়ে বার বার গাড়ি বদলানো খুব সমস্যার।’’
এ বিষয়ে হিঙ্গলগঞ্জের বিধায়ক প্রভাস মণ্ডল বলেন, ‘‘এই রুটে পর্যাপ্ত যাত্রী না থাকায় বাস পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে অনেকেই এর ফলে সমস্যায় পড়েছেন। ফের বাস পরিষেবা চালুর জন্য পরিবহণ দফতর ও মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছি।’’