অসুর বিনাশ হবেই, বলছেন কৌশিকের বাবা

ও কখনও কোনও আবদার করত না, জানেন। গত বার পঞ্চমীর দিন পুজোর কেনাকাটার জন্য দেড় হাজার টাকা দিয়েছিলাম হাতে। আর এ বার পুজোটা কেমন অন্য রকম হয়ে গেল...।

Advertisement

দিলীপ নস্কর

ডায়মন্ড হারবার  শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০১৬ ০২:২৮
Share:

ও কখনও কোনও আবদার করত না, জানেন। গত বার পঞ্চমীর দিন পুজোর কেনাকাটার জন্য দেড় হাজার টাকা দিয়েছিলাম হাতে। আর এ বার পুজোটা কেমন অন্য রকম হয়ে গেল...।

Advertisement

মন্দিরবাজারের গুমকি গ্রামের বাড়ির বারান্দায় বসে কথা বলছিলেন চন্দ্রা পুরকাইত। যাঁকে নিয়ে কথা হচ্ছিল, সেই ছেলে মাস পাঁচেক আগে খুন হয়ে গিয়েছে। আইটিআই পড়ুয়া কৌশিক পুরকাইতকে মোষ চোর অপবাদ দিয়ে পিটিয়ে মেরেছিল যারা, তাদের কেউ কেউ ধরা পড়েছে। জামিনও হয়েছে। সেই জ্বালায় আরও গুমরে মরছে পরিবারটা।

ঘটনাটা ঘটেছিল গত ৯ মে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবারের রায়বাহাদুর গ্রামের পূর্বপাড়ায় সে দিন কৌশিকের মাসির বাড়িতে ছিল গৃহপ্রবেশের অনুষ্ঠান। নেমন্তন্ন খেতে এসেছিলেন কৌশিক। রাতের দিকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে এগিয়ে গিয়েছিলেন বাড়ি থেকে একটু দূরে। পাশেই পশ্চিমপাড়া। সেখানে রক্ষেকালী পুজো উপলক্ষে বলির জন্য আনা হয়েছিল মোষ। যেটিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। মোষ খুঁজতে বেরিয়েছিল কিছু লোক। যারা এলাকায় অপরিচিত মুখ কৌশিককে চোর ঠাহরে পিটিয়ে মারে। মা-মাসিরা খবর পেয়ে ছুটে গিয়েছিলেন পশ্চিমপাড়ায়। ছেলেটা তখন রক্তে ভাসছে। মা-মাসির সামনেই চলে বেদম মার। বাঁচানো যায়নি কৌশিককে।

Advertisement

তারপর অনেক কিছু ঘটে গিয়েছে। কলেজ ছাত্রকে মোষ চোর সন্দেহে পিটিয়ে মারার ঘটনায় তোলপাড় হয়েছিল গোটা বাংলা। খুনের অভিযোগে ধরা পড়ে ডায়মন্ড হারবারের হরিণডাঙা পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য তাপস মল্লিক-সহ ১২ জন। কিন্তু আস্তে আস্তে সব প্রতিবাদ থিতিয়ে আসে। তাপস-সহ বাকি ধৃতদের ইতিমধ্যেই জামিন হয়ে গিয়েছে।

ছেলেকে চোখের সামনে মার খেতে খেতে মরে যেতে দেখেছেন চন্দ্রাদেবী। এ দিন কাপড়ের খুঁট দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বললেন, ‘‘আমাদের এখন পুজো-টুজো বলে কিছু নেই। ছেলের খুনিদের চরম শাস্তি হোক আগে।’’ কিন্তু সে জন্য দীর্ঘ আইনের পথ পেরোতে হবে, জানেন চন্দ্রাদেবী। তবু চোয়াল শক্ত হয়ে আসে, যখন বলেন, ‘‘আমরা এর শেষ দেখে ছাড়ব।’’

কৌশিক ছিল বাড়ির বড় ছেলে। দুই বোন আছে। বড় বোন সুমনা বিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। ছোট সোহিনী সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। তাদের আঁকড়েই বেঁচে রয়েছেন পুরকাইত দম্পতি। এ বারের দুর্গাপুজো নিয়ে দুই বোনেরও উৎসাহ নেই। সুমনার কথায়, ‘‘দাদা নেই, এটা বিশ্বাস হয় না। নতুন জামা পরে ঘুরতে যাওয়ার মতো মানসিক অবস্থা নেই।’’

অনেকক্ষণ ধরে কথা বলার চেষ্টা করছিলেন কৌশিকের বাবা কার্তিকবাবু। যতবারই কিছু বলার চেষ্টা করছিলেন, বার বারই গলা ধরে আসছিল কান্নায়। নিজেকে প্রবল ভাবে সামলানোর চেষ্টা করছিলেন।

অনেক পরে আলগা গলায় বললেন, ‘‘ছেলেটা বড্ড কষ্ট পেয়ে মরেছে। ওঁর হত্যাকারীদের শাস্তি পেতে হবে। অসুর বিনাশ হবেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement