অর্জুন সিংহ। —ফাইল চিত্র।
খাতায়কলমে তিনি বিজেপির সাংসদ। তবে আবার পুরনো দল তৃণমূলে ফিরেছেন বেশ কিছু দিন হল। সামনেই লোকসভা ভোট। তার আগে তৃণমূল নেতা এবং কর্মীদের বিভিন্ন পরামর্শ দিলেন ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিংহ। জানালেন, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার সঙ্গে ‘লড়াই’ করতে গেলে নিজেদেরও ‘ঠিক’ রাখা জরুরি। এমনকি, তিনি বিজেপিতে থাকাকালীন যে ‘শিক্ষা’ নিয়েছেন, সেগুলোও কর্মীদের সঙ্গে ভাগ করে নিলেন। জানালেন, যে নেতা বা কর্মীর জন্য দলের অন্যরা প্রশ্নের মুখে পড়ছেন, সেই নেতা বা কর্মীকে দল থেকে সরিয়ে দেওয়াই ভাল। বস্তুত, বিভিন্ন দুর্নীতি মামলায় রাজ্যের শাসকদলের একাধিক নেতা এবং মন্ত্রীর নাম জড়িয়েছে। এখন ইডি হেফাজতে রয়েছেন মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। অর্জুনের নিশানা কি তাঁদের কাউকে? তা অবশ্য স্পষ্ট করেননি সাংসদ।
শুক্রবার শ্যামনগরের সুব্রত পল্লিতে তৃণমূলের তরফে বিজয়া সম্মিলনীর আয়োজন হয়েছিল। সেখানে উপস্থিত ছিলেন সাংসদ অর্জুন। তৃণমূলের একের পর এক নেতার বাড়িতে ইডি, সিবিআই এবং আয়কর হানা নিয়ে ব্যারাকপুরের সাংসদের মম্তব্য, ‘‘এজেন্সির সঙ্গে লড়তে গেলে নিজেদেরও ঠিক থাকতে হবে। দল যা সিদ্ধান্ত নেবে সেই অনুযায়ী চলতে হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে পদক্ষেপ করবেন, সেই অনুযায়ী আমাদের সবাইকে চলতে হবে।’’
মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রীর ভূয়সী প্রশংসা করেন অর্জুন। তাঁর কথায়, ‘‘বাংলার রাজনীতিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো আর কেউ চেনেন না। উনি যদি কিছু ‘স্টেপ’ নেন, সব কর্মীকে সেটা সমর্থন করতে হবে। ঠিক-ভুল মানুষ বিচার করবেন।’’ পর ক্ষণেই অর্জুনের সংযোজন, ‘‘দলের কিছু সদস্যের জন্য যদি সবাই অসুবিধার মধ্যে পড়েন, আমি মনে করি, সেই লোককে দলে না রাখাটাই ভাল। যে লোকটা দু’দিন আগে মানুষকে ভয় দেখিয়েছে, সেই মানুষ যদি বুথে বসে থাকে, মানুষ অন্য কাউকে ভোট দেবেন। তাই আমাদের নজর রাখতে হবে। কোনও নাককাটা, গালকাটা বা কানকাটাকে বুথে বসতে দেওয়া যাবে না। সভ্য, ভদ্র মা-দিদি কাউন্সিলর যাঁরা ছিলেন, তাঁদের বুথে ফিরিয়ে আনুন। বুথের মানুষের সঙ্গে ভাল যোগাযোগ থাকলে কেউ (ওই প্রার্থীকে) হারাতে পারবে না।’’
আবার অন্য রাজনৈতিক দলে থাকার সময় অর্জুন যা যা ‘শিক্ষা’ পেয়েছেন, সেগুলোও ভাগ করে নেন। তিনি বলেন, ‘‘রাজনীতিতে সব সময় শিখতে হয়। আমি ভোট করতে শিখেছি। কংগ্রেস থেকে শিখে এসেছি। এমনকি, ভোটের রাজনীতি করতে গেলে বিজেপির কাছেও অনেক শিখতে হয়েছে। আমি শিখেছি।’’ অর্জুনের সংযোজন, ‘‘জ্ঞান নিতে গিলে মাস্টারমশাইয়ের জামার কলার ধরলে হবে না। মাস্টারমশাইকে প্রণাম করতে হবে। হাতজোড় করে জ্ঞান নিতে হবে।’’
২০২৪ সালের লোকসভা ভোটকে সামনে রেখে এখনই তৃণমূলের কর্মীদের জনসংযোগ বাড়ানোর পরামর্শ দেন অর্জুন। তাঁর কথায়, ‘‘আগামিদিনে নির্বাচন আছে। শত্রুকে কোনও দিন কমজোরি ভাববেন না। শত্রু কখনও কমজোরি হয় না। আর আবেগ দিয়ে রাজনীতি হয় না। যদি বুথে কর্মী সঠিক না থাকেন, ভোটার লিস্ট যদি আপনাদের মুখস্থ না থাকে, কে বিরোধী রাজনীতি করেন, তা যদি বুঝতে না পারেন, তা হলেই সমস্যা। মানুষের সঙ্গে ব্যবহার ঠিক রাখতে হবে।’’ তৃণমূল কর্মীদের জনসংযোগ বৃদ্ধির ব্যাপারে আরও সচেতন হতে হবে বলে মনে করছেন অর্জুন। তিনি বলেন, ‘‘এখন তো আমরা পানের দোকান, চায়ের দোকানে বসতেই ভুলে গিয়েছি! পাড়ায় আড্ডা মারছি না। ভেবে নিয়েছি, সবাই আমাদের ভোট দিয়ে দেবেন। আমাদের এই অঞ্চলে ৯০ শতাংশ পার্টি অফিস খোলেই না। কিন্তু অফিসে বসুন। সময় দিন। আমি কিন্তু এলাকায় থাকলে অফিসে বসি। মানুষের সমস্যা শুনতে হবে।’’