রবীন্দ্রনাথ মণ্ডল।
মৃত্যু হল হেমনগরের জখম বিজেপি কর্মী রবীন্দ্রনাথ মণ্ডলের (৫৩)। সোমবার রাতে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত তৃণমূল কর্মী সুব্রত মণ্ডল, তুষার মণ্ডলকে মঙ্গলবার গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
গত ১৩ অক্টোবর হেমনগর কোস্টাল থানার নটবর পাড়া এলাকায় তৃণমূলের একটি মিছিল হয়। ওই মিছিল থেকে এলাকায় টাঙানো বিজেপির পতাকা ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ ওঠে। এর প্রতিবাদ করেন স্থানীয় বিজেপির লোকজন। তার জেরে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। রবীন্দ্রনাথের ছেলে সৌরভকে বেধড়ক মারা হয়। ছেলেকে বাঁচাতে গেলে রবীন্দ্রনাথের মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করা হয়। রবীন্দ্রনাথ-সহ জখম বেশ কয়েকজনকে স্থানীয় যোগেশগঞ্জ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর রবীন্দ্রনাথকে বসিরহাট জেলা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। পরে সেখান থেকে কলকাতার আরজিকর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় শেষে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে সোমবার রাতে সেখানেই মৃত্যু হয় রবীন্দ্রনাথের।
রাজ্য বিজেপির সহ সভাপতি রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, মৃতদেহ মঙ্গলবার হাসপাতাল থেকে দলের রাজ্য দফতরে আনতে বাধা দিয়েছে পুলিশ। দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের বক্তব্য, ‘‘আমাদের কর্মী খুন কোনও নতুন ঘটনা নয়। করোনা-কালে এবং এখন দুর্গাপুজোর আবহেও রাজনৈতিক হিংসা বন্ধ নেই। রাজ্য সরকারের এ ব্যাপারে সতর্ক হওয়া উচিত। রাজনৈতিক হিংসা বন্ধ হোক। গণতন্ত্র ফিরে আসুক।’’ মঙ্গলবার বিকেলে বিজেপির মহিলা মোর্চার তরফে হাসনাবাদের বনবিবি সেতু অবরোধ করা হয়।
বাড়িতে স্ত্রী, ছেলে-বৌমা ও মেয়ে রয়েছেন। এ দিন রবীন্দ্রনাথের মেয়ে মেয়ে পূজা মণ্ডল বলেন, “বাবার মাথায় একাধিকবার আঘাত করা হয়। যারা বাবাকে এভাবে মেরে ফেলল, তাদের উপযুক্ত শাস্তি চাই।” রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর খবরে তাঁর পরিবারের পাশাপাশি শোকস্তব্ধ গোটা এলাকা। স্থানীয়রা বলছেন, রাজনৈতিক কারণে গন্ডগোল, মারামারি মাঝে মধ্যেই হয়। তবে এ ভাবে রাজনৈতিক মৃত্যুর ঘটনা হেমনগর থানা এলাকায় কবে ঘটেছে তা মনে করতে পারছেন না কেউই।
স্থানীয় সূত্রের খবর, ক’দিন আগে পর্যন্ত তৃণমূল করতেন রবীন্দ্রনাথ। যে ২৩৪ নম্বর বুথে রবীন্দ্রনাথের বাড়ি, সেখানে তৃণমূলের ভোট বৃদ্ধিতে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। তবে দলের বিভিন্ন দুর্নীতিতে বিরক্ত হয়ে লোকসভা ভোটের দু’মাস আগে বিজেপিতে আসেন। এক প্রতিবেশীর কথায়, “এক সময় যাদের সঙ্গে তৃণমূল করতেন তাঁদের হাতেই খুন হতে হল মানুষটাকে।” হিঙ্গলগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক দেবেশ মণ্ডল বলেন, “এটা রাজনৈতিক খুনই নয়। পারিবারিক গণ্ডগোলের জেরে এই ঘটনা হয়েছে।”