গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
বিনীত গোয়েলের চেয়ে ‘ভয়ঙ্কর’ মনোজ বর্মা। কলকাতার নতুন পুলিশ কমিশনারকে নিয়ে এমনই মন্তব্য করলেন ব্যারাকপুরের প্রাক্তন সাংসদ অর্জুন সিংহ। আন্দোলনরত চিকিৎসকদের সাবধান করে অর্জুনের বার্তা, ‘‘মনোজ বর্মা যে ‘রোড রোলার’ চালাবে, ইউ ক্যান্ট ইমাজিন’। আমি জানি, তাই বলছি।’’
আরজি কর-কাণ্ডের প্রেক্ষিতে আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের দাবি মেনে নিয়ে কলকাতা পুলিশ কমিশনারের পদ থেকে বিনীতকে সরিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার কলকাতার নতুন সিপি হয়েছেন ১৯৯৮ সালের ব্যাচের আইপিএস মনোজ। এক সময়ে ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারের পদ সামলানো সেই মনোজকে ‘অদ্ভুত চরিত্র’ বললেন বিজেপি থেকে তৃণমূল হয়ে আবার বিজেপিতে যাওয়া অর্জুন। তাঁর কথায়, ‘‘এই মনোজ বর্মা চার বছর এখানে ছিলেন। তখন থেকে সমস্ত অপরাধীকে জনপ্রতিনিধি বানিয়েছেন। তাদের কেউ কাউন্সিলর হয়েছে। কেউ এখন বিধায়ক। এরা সবই মনোজ বর্মার প্রোডাক্ট।’’ অর্জুনের সংযোজন, ‘‘এই মনোজ বর্মা অদ্ভুত চরিত্র। সিপিএম জমানায় তৃণমূলকে খুন করাতেন জঙ্গলমহলে। তিনিই ২০১৯ সালে ব্যারাকপুরে এসে দুটো নিরীহ মানুষকে গুলি করিয়ে দিলেন। সমস্ত বিজেপির পার্টি অফিস দখল করা থেকে ভয় দেখিয়ে তৃণমূলে যোগদান করানো— সবই করেছেন মনোজ বর্মা। অনেকে বলছেন, ব্যারাকপুর এলাকাকে শান্ত রেখেছিলেন উনি। কিন্তু ব্যারাকপুরকে অপরাধীদের গড় করেছেন এই মনোজ বর্মা।’’
একটা সময়ে মনোজ পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ছিলেন। তখনও রাজ্যে বামফ্রন্ট সরকার। ওই সময়ে জঙ্গলমহল জুড়ে মাওবাদীদের কার্যকলাপ তুঙ্গে। মনোজ সেই কার্যকলাপ রুখতে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ করেছিলেন। মাওবাদী নেতা কিষেণজির এনকাউন্টারের সময়ও কাউন্টার ইনসার্জেন্সি ফোর্সের দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। পরে ডিআইজি পদমর্যাদায় উন্নীত হয়ে এই আইপিএস অফিসার চলে যান শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটে। ২০১৭ সালে দার্জিলিঙের আইজি হন। পাহাড়ে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সেই সময়ের আন্দোলনও মনোজ সামলেছিলেন দক্ষতার সঙ্গে। সেই মনোজকে ২০১৯ সালে ‘অশান্ত’ ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার করে মমতা সরকার। তখন প্রায়শই ভাটপাড়া, কাঁকিনাড়ায় বোমা পড়ত। গুলি চলত। প্রতি দিনই ব্যারাকপুরের কোথাও না কোথাও খুন-মারামারি-গন্ডগোল লেগেই থাকত।
২০১৯ সাল থেকে বছর দুয়েক ধরে একাধিক বার মনোজকে ব্যারাকপুরে ‘অ্যাকশনে’ নামতে দেখা গিয়েছে। এক বার ভাটপাড়ায় গোলমালের সময়ে হেলমেট না পরেই গাড়ি থেকে নেমে গিয়েছিলেন। হাত দিয়েই ইট-পাটকেল আটকানোর চেষ্টা করেন। বাহিনী এবং নিজের নিরাপত্তা নিয়ে পরোয়া না করে খালি হাতে ওই ভাবে নেমে পড়ার জন্য সমালোচিতও হয়েছিলেন। তবে মনোজ সে সবে গুরুত্ব দেননি। তৎকালীন সাংসদ অর্জুনের সঙ্গে একাধিক বার সংঘাতে জড়িয়েছিলেন আইপিএস অফিসার। মনোজের বিরুদ্ধে মামলাও করেছিলেন অর্জুন। তিনি অভিযোগ করেছিলেন, তাঁকে মারতে মারতে ব্যারাকপুরের কমিশনার বলেছিলেন, ‘‘কিষেণজিকে খুন করেছি, তোকেও মারব।’’
বুধবার কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে নিয়ে অর্জুন বলেন, ‘‘এখন ডাক্তাররা বুঝতে পারবেন ইনি কেমন। তাঁদের আন্দোলনকে সমর্থন করি। তাঁরা বিনীত গোয়েলের পদত্যাগের দাবি করেছিলেন। কিন্তু তাঁর জায়গায় যিনি এলেন, তাঁকে নিয়ে সাবধান থাকবেন জুনিয়র ডাক্তাররা।’’ প্রাক্তন সাংসদ আরও বলেন, ‘‘বিনীত গোয়েল কী করেছেন? এই মনোজ বর্মা আরও ভয়ঙ্কর। আমি জানি, তাই বলছি। সব আমার চোখে দেখা।’’ বিজেপি নেতার অভিযোগ, বিরোধীদের কোণঠাসা করতে মনোজকে ব্যবহার করছে মমতার সরকার।