আদালতে আইন-সংক্রান্ত সহায়তার তথ্য ইংরেজিতে।
বারাসত থানায় পড়শির বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ জানাতে এসেছিলেন এক ব্যক্তি। পাড়ার এক জনকে ধরে করে যা হোক বাংলাতেই একটি অভিযোগপত্র লিখে এনেছিলেন। পুলিশ যখন এফআইআর-এর পাকা কপি দিল, সেটা পুরোটাই ইংরেজিতে। ভদ্রলোক সেই কাগজ হাতে নিয়ে কূল করতে পারলেন না। আইনজীবী যেমন বোঝালেন, তার উপরেই ভরসা রাখতে হল।
সরকারি অফিস, আইন-আদালতে কাজের ভাষা এখনও বহুলাংশে ইংরেজি নির্ভর। ফলে সমস্যায় পড়তে হয় অনেককেই।
থানা, আদালত ও কলেজ, বিভিন্ন দোকান-প্রতিষ্ঠানের বোর্ড— সর্বত্রই ইংরেজি শব্দের বাহু্ল্য।
বারাসত আদালতে বিচারের জন্য আসেন আমডাঙা, দত্তপুকুর, দেগঙ্গা-সহ জেলার বিভিন্ন এলাকার বিচারপ্রার্থী ও তাঁদের পরিবারের লোকজন। আদালতে ই-পরিষেবা সংক্রান্ত বোর্ডে যাবতীয় লেখা ইংরেজিতেই। এমন কী, আইনজীবীদের সংগঠনের বোর্ডও লেখা ইংরেজিতে।
বারাসত থানা ও বারাসত সরকারি মহাবিদ্যালয়ের বোর্ডেও ইংরেজি। বাংলার বালাই নেই কোথাও। গ্রামগঞ্জ থেকে আসা অনেকেই জিজ্ঞেস করে বোঝা গেল, সে সব বোর্ডে দিকে তাকিয়ে কিছুই বুঝতে পারছেন না তাঁরা। আশপাশের লোক ডেকে জানতে হচ্ছে।
কিছু কিছু ইংরেজি শব্দ আবার লোকের মুখে মুখে এতই চালু হয়ে গিয়েছে, তার বাংলা চেষ্টা করেও লোকের মনে জায়গা পায়নি। ‘ডেপুটেশন’, ‘কলেজ’, ‘এসডিও’, বিডিও, ‘এসপি’ শব্দগুলি প্রায়ই ব্যবহার হয়। অনেকেই এ সবের বাংলা শব্দটি জানেন না।
বারাসত কলেজের বাংলা অনার্সের দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রীর কাছে জানতে চাওয়াহয়েছিল ‘ডেপুটেশন’ (স্মারকলিপি) শব্দের বাংলা তর্যমা। জানা নেইবলে স্বীকার করলেন। ‘ডিএম’ (ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট বা জেলাশাসক) শব্দের মানে তাঁর কাছে ‘জেলা পরিষদ।’ ‘অনার্স’ শব্দেরও বাংলা তাঁর মনে পড়ল না।
মধ্যমগ্রাম বিবেকানন্দ মহাবিদ্যালয়ের বাংলার শিক্ষক অনিমেষ গোলদার বলেন, ‘‘আমরা এখনও ঔপনিবেশিক মানসিকতা থেকে মুক্ত হতে পারিনি। এ সবতারই ফসল। বাংলা বলতে আমরা লজ্জা পাই। বাংলা ভাষার ব্যবহার নিয়ে সরকারের আরও ভাবা প্রয়োজন। নইলে ভবিষ্যতে এরআরও অবনতি হবে।’’ বাংলা ভাষার চর্চা স্কুলস্তর থেকেই কম হচ্ছে বলে মনে করেন কবি জয়দেব মহাবিদ্যালয়ের বাংলার শিক্ষক দীনবন্ধু মণ্ডল।