বেহাল: বসিরহাট পুরসভা পরিচালিত মাতৃসদন। ছবি: নির্মল বসু।
অপারেশন থিয়েটার আছে। কিন্তু দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে তা বন্ধ। রোগীদের যেতে হয় দূরের হাসপাতালে। আগে প্রসূতি বিভাগ খোলা ছিল। কিন্তু এখন তা-ও বন্ধ। বন্ধ হয়ে গিয়েছে প্যাথোলজি, আল্ট্রাসনোগ্রাফি বিভাগও। চিকিৎসকও নিয়মিত আসেন না। ফলে মাতৃসদনে আসা অসুস্থদের প্রায়ই হয়রানি হতে হয়।
তা ছাড়া মাতৃসদনের ঘরে বড় বড় ফাটল। ছাদ দিয়ে জল পড়ে। বন্ধ হয়ে গিয়েছে একাধিক বিভাগ। শয্যা থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে সেগুলি ব্যবহার হয়নি। তার অবস্থাও এখন খারাপ।
রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বন্ধ হতে চলেছে বসিরহাট পুরসভা পরিচালিত মাতৃসদন। রাজ্য সরকারের কাছে যখন স্বাস্থ্য পরিষেবা গর্বের বিষয় তখন সম্পূর্ণ উল্টো ছবি বসিরহাটের মাতৃসদনে। পুরপ্রধান তপন সরকার বলেন, ‘‘গত ন’বছর মাতৃসদনে অপারেশন বন্ধ। আমি এসে বহির্বিভাগ চালু করেছি। দ্রুত যাতে মাতৃসদন পুরনো অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যায়, তার চেষ্টা করা হচ্ছে।’’
বসিরহাট পুরসভার অন্তর্গত ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে বসিরহাট স্টেশনের কাছে টাকি রাস্তার ধারে এই মাতৃসদন। ২০০০ সালের ১৮ মার্চ মাতৃসদনের উদ্বোধন করেছিলেন বসিরহাটের তৎকালীন প্রাক্তন সাংসদ মনোরঞ্জন শূর। উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন পুরপ্রধান গোবিন্দচন্দ্র দে। ২০০৫ সালে ২৮ ফেব্রুয়ারি মাতৃসদনে অপারেশন থিয়েটার, অন্তর্বিভাগ, ইউএসজি এবং প্যাথোলজি বিভাগের উদ্বোধন করা হয়।
প্রথম দিকে কয়েকবছর পুরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ড-সহ আশপাশের পঞ্চায়েতগুলির বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষের অন্যতম ভরসা ছিল মাতৃসদনটি। সে সময়ে প্রতিদিন বহির্বিভাগে রোগী দেখতেন শহরের নাম করা চিকিৎসকেরা। এখন মাতৃসদনের একাধিক বিভাগ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। যদিও হাসপাতালের খাতায় ২৪ জন কর্মীর নাম রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, রোগী না যাওয়ার কারণে কর্মীরা ঠিকমতো আসেন না। এলেও তাঁদের কেউ কেউ খাতায় সই করেই চলে যান। পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে শয্যা। নষ্ট হচ্ছে অপারেশনের জন্য আনা দামি যন্ত্রপাতিও।
মাতৃসদনের কর্মী তারক দাস বলেন, ‘‘সপ্তাহের সব দিন বেলা ১১টা থেকে ৫টা পর্যন্ত মাতৃসদন খোলা থাকে। ৫-৬ জন চিকিৎসকও আসেন। বহির্বিভাগে রোগী দেখেন। শিশুদের পোলিও খাওয়ানো হয়। অপারেশন থিয়েটার-সহ কয়েকটি বিভাগ অবশ্য বন্ধ হয়ে গিয়েছে। মেরামতির অভাবে বাড়িটিতে বড় বড় ফাটল ধরেছে।’’
স্থানীয় বাসিন্দা রত্না দাস, কাকলি মজুমদার, স্বপ্না মণ্ডল বলেন, ‘‘আগে ছোট-বড় সব রকম অপারেশন এবং পরীক্ষাই এখানে হত। নিয়মমতো চিকিৎসকও আসতেন। অনেক দিন সময়মতো চিকিৎসক না আসায় অসুস্থরা আর মাতৃসদনের প্রতি ভরসা করেন না। সন্ধ্যার পর এখান দিয়ে যেতেও গা ছমছম করে।’’