প্রতীকী ছবি।
‘গা-ছাড়া’ বরদাস্ত করা হবে না। পঞ্চায়েত ভোটের আগে দলের কিছু নেতা-কর্মী, জনপ্রতিনিধিকে এ হেন মনোভাব কাটিয়ে ওঠার বার্তা দিচ্ছেন তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার নেতারা।
দিন কয়েক ধরে বিভিন্ন পঞ্চায়েতে বৈঠক করছেন নেতারা। ওই সব বৈঠক পঞ্চায়েত প্রধান, পঞ্চায়েত সদস্য, অঞ্চল সভাপতি, পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য, জেলাপরিষদ সদস্য, বুথ সভাপতি-সহ সংশ্লিষ্ট সকলেই উপস্থিত থাকছেন।
তৃণমূল বনগাঁ সাংগঠনিক জেলায় পঞ্চায়েত আছে ৫৩টি। দলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস বলেন, ‘‘৫৩টি পঞ্চায়েত ধরে ধরেই আমরা বৈঠক করছি। কিছু নেতা-কর্মী, জনপ্রতিনিধিদের কাজে গা-ছাড়া ভাব এসেছে। পঞ্চায়েত ভোটের আগে তাঁদের দলীয় কাজে সক্রিয় করাই আমাদের লক্ষ্য।’’
স্থানীয় রাজনৈতিক মহল মনে করছে, পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলের লড়াই এ বার যথেষ্ট কঠিন। দলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলায় যে ৫টি বিধানসভা কেন্দ্র আছে, তার মধ্যে স্বরূপনগর বাদে বাকি ৪টি কেন্দ্রে জয়ী হয়েছিল বিজেপি। বনগাঁ লোকসভার আসনটিও বিজেপির দখলে। এই মুহূর্তে ৫৩টি পঞ্চায়েতই অবশ্য তৃণমূলের হাতে। গত পঞ্চায়েত ভোটে বিজেপি ৪টি পঞ্চায়েত দখল করেছিল। পরবর্তী সময়ে অবশ্য তৃণমূল সেগুলির দখল নেয়।
সাম্প্রতিক আবাস যোজনার তালিকা নিয়ে দুর্নীতির নানা ঘটনা নিয়ে বিতর্ক দানা বেঁধেছে। তৃণমূলের একাধিক জনপ্রতিনিধি, নেতা-কর্মীর পাকাবাড়ি থাকা সত্ত্বেও তালিকায় নাম উঠেছে বলে অভিযোগ। অথচ, অনেক গরিব মানুষের নাম তালিকায় নেই। যা নিয়ে তৃণমূল নেতৃত্ব যথেষ্ট চাপে। এ ছাড়া, আমপানে ক্ষতিপূরণের টাকা বিলি নিয়েও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের একাংশের বিরুদ্ধে। গ্রামের মানুষের এ সব নিয়ে ক্ষোভ আছে।
এরই মধ্যে তৃণমূল একাংশের গা-ছাড়া মনোভাব ভাবাচ্ছে দলের নেতাদের। বিশ্বজিৎ বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতের বৈঠকগুলিতে স্পষ্ট বলে দেওয়া হচ্ছে, দলের মধ্যে যাঁরা ভাবছেন এমনিতেই জিতে যাবেন, গা ছেড়ে বসে আছেন, তাঁদের ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে তাঁরা যদি সক্রিয় না হন, বুথে বুথে গিয়ে জনসংযোগ না করেন, তা হলে তাঁদের দল থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে। হয় তো অনেক পুরনো দিনের কর্মীকে দল থেকে সরিয়ে দিতে হবে। কষ্ট হবে, দুঃখ পাব। কিন্তু আমাদের করার কিছু থাকবে না।’’
রবিবারই বিশ্বজিৎ গাইঘাটার সুটিয়া শিমূলপুর এবং ইছাপুর ২ পঞ্চায়েতে বৈঠক করে করেছেন। সেখানেও তিনি একই বার্তা দেন। দলের জেলা নেতৃত্ব স্পষ্ট জানিয়ে দিচ্ছেন, প্রার্থী নির্বাচন হবে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে। কে কী কাজ করছেন, দল সব খোঁজখবর রাখছে। বুথে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়নমূলক কাজের কথা প্রচার করতে হবে। কেউ প্রকল্পের সুফল পাওয়া থেকে বঞ্চিত থাকলে তাঁকে তা দ্রুত পাইয়ে দেওয়ার দ্রুত ব্যবস্থা করতে হবে। বিশ্বজিৎ বলেন, ‘‘দুর্নীতিগ্রস্তদের বিষয়ে দল তদন্ত করছে। এ রকম কাউকে এ বার পঞ্চায়েতে প্রার্থী করা হবে না।’’
তৃণমূলের এই পদক্ষেপ নিয়ে অবশ্য কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না বিরোধীরা। বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি রামপদ দাস বলেন, ‘‘এখানে তৃণমূলের সমস্ত পঞ্চায়েত সদস্য দুর্নীতিগ্রস্ত। তৃণমূল নেতৃত্বের সাহস থাকলে দুর্নীতিগ্রস্ত নয় এমন সদস্যদের নাম প্রকাশ করুক। এটা ভোটের আগে মানুষকে বোকা বানাতে চোখে ধুলো দেওয়া হচ্ছে।’’ সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রমেন আঢ্য বলেন, ‘‘আবাস যোজনায় দুর্নীতি, শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি, তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীদের জেলে যাওয়া— এ সবের ফলে তৃণমূল কর্মীরা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। তাঁদের চাঙ্গা করতে পঞ্চায়েতে বৈঠক হচ্ছে। তবে এতে লাভ হবে না। কিছু মানুষকে ফেরানো সম্ভব হতে পারে, কিন্তু বেশিরভাগ মানুষকে ফেরানো যাবে না।’’