উৎসাহ: উদ্যানে খেলায় মেতেছে খুদে পড়ুয়ারা। নিজস্ব চিত্র
দীর্ঘদিন ধরে প্রাথমিক স্কুল বন্ধ থাকায় কচিকাঁচারা কার্যত ঘরবন্দি জীবন কাটাচ্ছে। খুদে পড়ুয়াদের ঘর থেকে বের করে খেলাচ্ছলে পড়াশোনার ব্যবস্থা করল বনগাঁ পুরসভা। কোভিড বিধি মেনে শিশুদের উদ্যানে বা কোনও খোলা জায়গায় নিয়ে গিয়ে খেলাধুলো, পড়াশোনার পাশাপাশি তাদের আনন্দ দিতেই এই উদ্যোগ বলে পুরসভা সূত্রে খবর।
পুরপ্রশাসক গোপাল শেঠ বলেন, ‘‘বনগাঁ শহরে পুরসভা পরিচালিত ১০টি স্কুল আছে। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। আমরা একটি নির্দিষ্ট দিনে এক একটি স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের শহরের মধ্যে কোনও পার্কে নিয়ে যাচ্ছি। সেখানে প্রাকৃতিক পরিবেশে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কচিকাঁচারা খেলাধুলো, পড়াশোনা করছে। ঘরবন্দি শিশুদের মনে আনন্দ দিতে এই পদক্ষেপ করা হয়েছে।’’
এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন শিক্ষকেরা। তাঁদের মতে, দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় শিশুদের মনে এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। কোনও কোনও স্কুলে অনলাইন ক্লাস হলেও শিশুদের তাতে মন বসছে না। স্কুলে বন্ধুদের সঙ্গে মেলামেশা, টিফিন খাওয়া, খেলাধুলোর মাধ্যমেই শিশুদের সার্বিক বিকাশ সম্ভব। অভিভাবকদেরও অভিযোগ, বাড়িতে বসে খুদেরা কার্টুন দেখে বা মোবাইল গেম খেলে সময় কাটাচ্ছে। ব্যাহত হচ্ছে তাদের মানসিক বিকাশ। পুরসভার উদ্যোগকে স্বাগত জানালেন তাঁরাও।
সোমবার সকালে পিকে অ্যাকাডেমির খুদে পড়ুয়াদের নিয়ে যাওয়া হয় বনগাঁ থানা সংলগ্ন স্বামী বিবেকানন্দ শিশু উদ্যানে। সেখানে দীর্ঘদিন পর বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হওয়ায় তাদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। উদ্যানেই কচিকাঁচাদের অঙ্ক ও ইংরাজির পাঠ দেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। ছিল ক্যুইজের ব্যবস্থা। পাশাপাশি দৌড়ঝাঁপ করে খেলাধুলোও করে শিশুরা। উদ্যানের পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে ইছামতী নদী। খুদে পড়ুয়াদের এদিন নদীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। পুরসভার পক্ষ থেকে তাদের হাতে টিফিন ও শিক্ষা সামগ্রী তুলে দেওয়া হয়।
এদিন খেলা থামিয়ে চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়া অদ্রিকা বক্সী বলে, ‘‘অনেক দিন পর বন্ধুদের আজ কাছে পেয়েছি। খুব ভাল লাগছে। খেললাম, পড়লাম। এমন ক্লাস আমরা আরও করতে চাই।’’ অভিভাবক সহেলি বক্সী বলেন, ‘‘প্রাকৃতিক পরিবেশে খেলার মাধ্যমে পড়াশোনা করে ছেলেমেয়েরা খুব আনন্দ পেয়েছে। এটাই এতদিন ওদের জীবন থেকে হারিয়ে গিয়েছিল। পুরসভাকে ধন্যবাদ।’’
পুরপ্রশাসক বলেন, ‘‘ভবিষ্যতে আবারও এই পড়ুয়াদের খেলার ছলে পাঠের ব্যবস্থা করব।’’