প্রতীকী ছবি।
পাইপ লাইনের মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি পরিস্রুত পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার তোড়জোড় চলছে বনগাঁ পুর এলাকায়। কেন্দ্রেরও এ নিয়ে প্রকল্পের কাজ চলছে। তবে নানা টালবাহানায় সেই কাজে তেমন গতি নেই বলে অভিযোগ। কেন্দ্রীয় প্রকল্পের কাজ শেষ হতে দু’তিন বছর লাগতে পারে বলে প্রশাসনের একটি সূত্রের দাবি। এ দিকে, সামনে বিধানসভা ভোট। তার আগেই রাজ্য সরকারের প্রকল্পে বনগাঁবাসীর কাছে বিনামূল্যে বাড়ি বাড়ি পানীয় জল দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে পুর প্রশাসন। কাজও চলছে দ্রুত গতিতে। নতুন করে ২১ কোটি টাকা বরাদ্দ হল রাজ্য সরকারের প্রকল্পে।
পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে, শহরে পানীয় জল প্রকল্পের জন্য দিন কয়েক আগে রাজ্য সরকার অর্থ অনুমোদন করেছে। পুরপ্রশাসক শঙ্কর আঢ্য বলেন, ‘‘২১ কোটি টাকা অনুমোদন করেছে রাজ্য। সোমবার চিঠি পেয়েছি। সব ঠিক থাকলে ভোটের আগেই বাড়ি বাড়ি আর্সেনিকমুক্ত পরিস্রুত পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া হবে।’’ পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে, নদিয়ার চাকদহ থেকে গঙ্গার জল পাইপ লাইনের মাধ্যমে বনগাঁ শহরে এনে তা পরিস্রুত করে বাড়ি বাড়ি পৌছে দেওয়ার কাজ বেশ কিছু দিন ধরেই চলছে। কেন্দ্র সরকারের আমরুত (অটল মিশন ফর রিজ্যুভিনেশন অ্যান্ড আরবান ট্রান্সফর্মেশন) প্রকল্পে কাজটি করছে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর। পরে ওই প্রকল্পে গোপালনগর ও বাগদাকে যুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু প্রায় এক বছর প্রকল্পের কাজ থমকে ছিল। সম্প্রতি কাজ আবার শুরু হয়েছে। তার আগেই অবশ্য রাজ্য সরকারের প্রকল্প শেষ করার কথা জানাচ্ছে পুরসভার একটি সূত্র। গঙ্গার জল পরিস্রুত করার জন্য বনগাঁ শহরের আপনজন মাঠ এলাকায় শোধনাগার তৈরি করা হয়েছে। এ ছাড়াও শহরের বিভিন্ন এলাকায় পাঁচটি জলাধার তৈরি হয়েছে। বাড়ি বাড়ি পানীয় জল পৌঁছে দিতে শহরের মধ্যে পাইপ লাইন বসানো হয়েছে। কিন্তু সমস্যা হল, বাড়ি বাড়ি পাইপ লাইন বসানোর জন্য আমরুত প্রকল্পে কেন্দ্র টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে দীর্ঘ দিন অব্যবহৃত অবস্থায় জল শোধনাগারটি পড়ে রয়েছে। পুরপ্রশাসক বলেন, ‘‘দিন সাতেক আগে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে সমস্যার কথা জানাই। তারপরেই রাজ্য সরকার ২১ কোটি টাকা বরাদ্দ করল।’’
পুরপ্রশাসক জানান, ইছামতী নদী সংলগ্ন এলাকা থেকে জল পাইপ লাইনের মাধ্যমে জল শোধনাগারে নিয়ে গিয়ে পরিস্রুত করে আপাতত বাড়ি বাড়ি জল পৌঁছে দেওয়া হবে। এখন শুধু বাড়ি বাড়ি পাইপ লাইন বসানোর কাজ জল শোধনাগার থেকে জলাধার পর্যন্ত পাইপ লাইন বসানোর কাজ বাকি। রাজ্য সরকারের দেওয়া টাকায় ওই কাজ দ্রুত শেষ করা হবে।
তা হলে কেন্দ্রীয় প্রকল্পে জল আসার কাজ শুরু হলে স্থানীয় প্রকল্পের কী হবে? বাসিন্দারা কি দু’টি কল থেকে দু’জায়গার জল পাবেন? পুরসভার একটি সূত্র জানাচ্ছে, কেন্দ্রীয় প্রকল্পে জল সরবরাহ চালু হয়ে গেলে স্থানীয় প্রকল্প থেকে জল সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হবে। একটি প্রকল্পেরই সুবিধা পাবেন মানুষ। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে শহরে পরিবারের সংখ্যা প্রায় ৩৮ হাজার। এখন কয়েকশো পরিবারে জলের লাইন আছে। তবে ওই জল পানের উপযুক্ত নয়। শীঘ্রই জলের লাইন দেওয়ার আবেদন জমা নেওয়া শুরু হবে। বিনামূল্যে মিলবে জলের লাইন। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি অবশ্য প্রতিশ্রুতিতে আশ্বস্ত হতে নারাজ। বনগাঁর প্রাক্তন বিধায়ক সিপিএমের পঙ্কজ ঘোষ বলেন, ‘‘আগেও শুনেছি, বাড়ি বাড়ি জল পৌঁছে দেওয়া হবে। বাস্তবে তা হয়নি। এটা নির্বাচনী চমক।’’ বিজেপি নেতা শোভন বৈদ্য বলেন, ‘‘এমন প্রতিশ্রুতি আগেও শুনেছি। কাজ শেষ করে দেখাক আগে।’’ কংগ্রেস নেতা কৃষ্ণপদ চন্দের কথায়, ‘‘বাড়ি বাড়ি পানীয় জল সত্যিই পৌঁছলে উন্নয়নের স্বার্থে পাশে থাকব। আর তা না হলে সেটা দৃষ্টান্তমূলক খারাপ কাজ হবে।’’