Baduria Health Centre

চিকিৎসক নেই, ফার্মাসিস্ট ওষুধ দিচ্ছেন রোগীদের

দিনের পর দিন এ ভাবেই চলছে বাদুড়িয়া মাসিয়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। চিকিৎসক নেই।

Advertisement

নির্মল বসু

বাদুড়িয়া শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০২০ ০৪:৪২
Share:

জরাজীর্ণ বাদুড়িয়া স্বাস্থ্যকেন্দ্র।নিজস্ব চিত্র

রোগের কথা বলতেই ওষুধ দিয়ে দিলেন ফার্মাসিস্ট। কী ভাবে ওষুধ খাবেন—তাও বুঝিয়ে দেওয়া হল রোগীকে।

Advertisement

দিনের পর দিন এ ভাবেই চলছে বাদুড়িয়া মাসিয়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। চিকিৎসক নেই। ফার্মাসিস্ট ও নার্সই রোগী দেখেন।

অথচ এক দিন পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল হবে বলেই জমি দান করেছিলেন গ্রামের মানুষ। সেই জমিতে কয়েকটি ঘর নিয়ে গড়ে উঠেছিল মাসিয়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। কিন্তু সেখানে এখন চিকিৎসক-নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী প্রায় নেই বললেই চলে। স্বাস্থ্য পরিষেবার অবস্থা খুব খারাপ। ভোগান্তি হচ্ছে সাধারণ মানুষের। তাঁরা ঠিকমতো পরিষেবা পান না।

Advertisement

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সপ্তাহে মাত্র দু’দিন চিকিৎসক আসেন। তার মধ্যেও কোনও কোনও সপ্তাহে আবার চিকিৎসকের দেখা পাওয়া যায় না। তখন বাধ্য হয়েই মানুষকে ফার্মাসিস্ট ও নার্সের কাছেই যেতে হয়।

ব্লক প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৯১ সালে বাদুড়িয়ায় ১৫ বিঘা জমির উপরে ছ’টি শয্যা-সহ হাসপাতালের শিলান্যাস করেছিলেন রাজ্যের তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রশান্ত শূর। ১৯৯৯ সালে সেখানে মাসিয়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উদ্বোধন করেন রাজ্যের তৎকালীন তথ্য সংস্কৃতি মন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। কথা ছিল বহির্বিভাগ, অন্তর্বিভাগ, অপারেশন থিয়েটার, রক্ত পরীক্ষাকেন্দ্র তৈরি হবে।

গ্রামে হাসপাতাল হলে এলাকার অসুস্থ মানুষকে আর কয়েক কিলোমিটার দূরে জেলা কিংবা গ্রামীণ হাসপাতালে ছুটতে হবে না। পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল তো দূরের কথা, বর্তমানে মাসিয়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সপ্তাহে মাত্র দু’টো দিন কয়েক ঘণ্টার জন্য চিকিৎসক থাকেন। ফলে প্রায় চিকিৎসকের অভাবে শিশু, প্রসূতি, অসুস্থকে নিয়ে ছুটতে হয় দূরের হাসপাতালে।

কাঁকড়াসুতি গ্রাম থেকে ছোট্ট সুমাইয়াকে নিয়ে এসেছিলেন আব্দুল সালাম ও তাঁর স্ত্রী সোনিয়া। তাঁদের কথায়, ‘‘মঙ্গল-বৃহস্পতি সপ্তাহে দু’দিন চিকিৎসক আসেন। আজ দিন থাকলেও আসেননি। তাই মেয়ের বমি-পায়খানা হচ্ছে বলে ফার্মাসিস্টের কাছ থেকে ওষুধ নিয়ে যাচ্ছি।’’ ফার্মাসিস্ট রতন সরকার বলেন, ‘‘চিকিৎসক নেই। মানুষ অসুবিধায় পড়লে কী করব? বাধ্য হয়ে আমাকে রোগীর কথা শুনে ওষুধ দিতে হচ্ছে। বড় অসুখ হলে শহরের হাসপাতালে পাঠিয়ে দিই।’’

বাদুড়িয়ার নয়াবস্তিয়া-মিলনি, রামচন্দ্রপুর-উদয় এবং যসাইকাটি-আটঘরা তিন পঞ্চায়েতের মধ্যে পড়ে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি। চিকিৎসা পরিষেবা এবং চিকিৎসকদের থাকার জন্য ১৩টি ঘর করা হয়েছিল। সেগুলি এখন গাছ-গাছালিতে ভরা। পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। নয়না খাতুন বলেন, ‘‘গ্রামে হাসপাতাল হবে শুনে মানুষ জমি দিয়েছিলেন। তা তো পূরণ হল না। উল্টে গাছগাছালিতে ভরে রয়েছে হাসপাতাল চত্বর। মেরামতির অভাবে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি যে কোনও দিন ভেঙেও পড়তে পারে। অন্ধকারে বিষাক্ত পোকামাকড়ের আনাগোনা বেড়েছে। পানীয় জলের কল খারাপ হয়ে পড়ে রয়েছে।’’ একই মত হবিবর আলি, খালেক মণ্ডল, সেলিম গাজির। অথচ এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপরে নির্ভর করেন বেশ কিছু গ্রামের মানুষ। ঠিকঠাক পরিষেবা না মেলায় তাঁদের সমস্যায় পড়তে হয়। হাসপাতালে থাকা এক সিভিক ভলান্টিয়ার জানান, চিকিৎসক থাকলে কিন্তু দিনে প্রায় চারশো রোগীদের ভিড় হয়। বাদুড়িয়ার বিধায়ক আব্দুর রহিম দিলু বলেন, ‘‘মাসিয়া স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ঘরবাড়ি সব থাকলেও স্থায়ী কোনও চিকিৎসক নেই। মেরামতির অভাবে হাসপাতালের ঘরগুলির অবস্থা জরাজীর্ণ।’’ পুরপ্রধান তুষার সিংহের কথায়, ‘‘হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবার উন্নতির জন্য স্বাস্থ্য দফতরকে বলা হয়েছে।’’ বসিরহাট জেলার মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক দেবব্রত মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, পরিষেবার বিষয়টি খতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement