গঙ্গাসাগরের মেলা। ছবি: পিটিআই।
সোমবার থেকে শুরু হয়েছে গঙ্গাসাগর মেলা। উদ্বোধনের পর থেকেই পুণ্যার্থী এবং দর্শনার্থীদের ঢল নেমেছে গঙ্গাসাগরের বেলাভূমিতে। ১৩ তারিখ অর্থাৎ শনিবার দুপুর বারোটা পর্যন্ত ৪৫ লক্ষ মানুষ গঙ্গাসাগরে এসেছেন, জানাল দক্ষিণ ২৪ পরগনা প্রশাসন। শনিবার বিকেলে গঙ্গাসাগরের মেলা অফিসে একটি সাংবাদিক বৈঠক করেন বিদ্যুৎ, আবাসন এবং যুব কল্যাণ দফতরের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। সেখানে ছিলেন রাজ্যের পরিষদ বিষয়ক দফতরের মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, পরিবহণ দফতরের মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী, সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিক, সুন্দরবন উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী বঙ্কিম হাজরা, দমকল ও জরুরি পরিষেবা বিষয়ক দফতরের মন্ত্রী সুজিত বসু এবং রাজ্যের তথ্য এবং সংস্কৃতি দফতরের মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন। ছিলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক সমীর গুপ্ত এবং সুন্দরবন জেলার পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাও। অরূপ জানান, সেখানে এ পর্যন্ত যে সংখ্যক পুণ্যার্থীর সমাগম হয়েছে, তা অনুমান করেই বিভিন্ন ব্যবস্থা রেখেছে প্রশাসন।
বস্তুত, গত বছর গঙ্গাসাগর মেলায় প্রায় ৪০ লক্ষ মানুষ এসেছিলেন। করোনা পরবর্তী সময়ে সেই সংখ্যাটি বিশাল। চলতি বছর ৯ থেকে ১৭ই জানুয়ারি পর্যন্ত গঙ্গাসাগর মেলা রয়েছে। তাতে এখনও পর্যন্ত যে সংখ্যক তীর্থযাত্রী এসেছেন, তা বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য বলে মনে করছে প্রশাসন।
গঙ্গাসাগরে আসা তীর্থযাত্রীদের মাথাপিছু পাঁচ লক্ষ টাকার বিমা ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। মেলায় কর্মরত সরকারি কর্মী, পুলিশকর্মী, স্বাস্থ্যকর্মী, সাংবাদিক, পরিবহণের সঙ্গে যুক্ত মানুষজন এবং স্বেচ্ছাসেবকরাও এই বিমার আওতায় রয়েছেন। মন্ত্রী অরূপ জানান, কপিলমুনি আশ্রম-সহ মেলা চত্বরকে সুন্দর ভাবে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। বন্দর সংলগ্ন এলাকায় বিশ্রামাগার হয়েছে। নতুন নতুন পাকা রাস্তা হয়েছে। পথবাতি, তীর্থযাত্রী নিবাস, পানীয় জলের ব্যবস্থা এবং দশ হাজারেরও বেশি শৌচালয় গড়ে তোলা হয়েছে গঙ্গাসাগর মেলা প্রাঙ্গণে। এ বার মেলায় পুণ্যার্থীদের জন্য ২২টি জেটি তৈরি করা হয়েছে। যাতায়াতের সুবিধার্থে আড়াই হাজার বাস, ৩৮টি ভেসেল এবং প্রায় ১০০টি লঞ্চের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি ঘন কুয়াশার মধ্যে তীর্থযাত্রীরা যাতে নিরাপদে পারাপার করতে পারেন, সে জন্য মুড়িগঙ্গা নদীতে থাকা বিদ্যুতের টাওয়ার এবং জেটিতে শক্তিশালী কুয়াশাভেদী আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিটি যানবাহন এবং ভেসেল জিপিএস ট্র্যাকিং-এর সাহায্যে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে বলে জানান মন্ত্রী।
এ ছাড়াও পুণ্যার্থীদের সুরক্ষার স্বার্থে ১৪ হাজারের বেশি পুলিশকর্মী মোতায়েন করা হয়েছে গঙ্গাসাগর প্রাঙ্গণে। ২,৪০০ জন সিভিল ডিফেন্সের স্বেচ্ছাসেবক এবং অসামরিক প্রতিরক্ষা দফতরের জলপ্রহরীরা তীর্থযাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে প্রতি মুহূর্তে সজাগ রয়েছেন। ভক্তরা কপিলমুনি মন্দিরের প্রসাদ এবং পবিত্র গঙ্গাজল অনলাইনে বুকিং করে বাড়িতে বসেই পেতে পারেন। উল্লেখ্য, এ বছর মকর সংক্রান্তির পুণ্যস্নান রবিবার রাত্রি ১২-১৩ মিনিট থেকে শুরু হবে। চলবে সোমবার রাত ১২টা ১৩ মিনিট পর্যন্ত।