ধৃত অমিত পণ্ডিতকে নিয়ে হোগলা বনে তল্লাশি পুলিশের। —নিজস্ব চিত্র।
সময় যত এগোচ্ছে, ধোঁয়াশা যেন ততই কাটছে। উত্তর ২৪ পরগনার পানিহাটি পুরসভার তৃণমূল কাউন্সিলর অনুপম দত্ত খুনের ঘটনায় বুধবার আগরপাড়ার খোয়ার রোডের হোগলাবনে তল্লাশি চালানো হয়। সেখান থেকে আরও একটি আগ্নেয়াস্ত্র পেয়েছে পুলিশ। এই নিয়ে ওই খুনের ঘটনায় দু’টি আগ্নেয়াস্ত্র মিলল। তদন্তকারীদের দাবি, হত্যাকাণ্ডের আরও তথ্যপ্রমাণ তাঁদের হাতে এসেছে। অনুপমকে খুন করার পিছনে দীর্ঘ ‘ইতিহাস’ রয়েছে বলেও তদন্তকারীদের একাংশের মত।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার সঞ্জীব পণ্ডিত ওরফে বাপি এবং শম্ভুনাথ পণ্ডিত ওরফে অমিতকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করা হয়। জেরায় পুলিশ জানতে পারে, অনুপমকে খুন করার সময় আততায়ীরা একটি নয় দু’টি আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে এসেছিল। তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, জেরায় বাপি জানিয়েছে, অমিতকে সে টাকা দিয়েছিল বিহার থেকে আগ্নেয়াস্ত্র কেনার জন্য। সেই মোতাবেক বিহার থেকে একটি ৭ মিলিমিটার পিস্তল কেনে অমিত। সেই দু’টি পিস্তল আনা হয়েছিল অনুপমকে খুনের সময়। জেরায় পুলিশ আরও জানতে পারে, রবিবার অনুপমকে খুনের পর ওই পিস্তলটি খুনি হোগলার জঙ্গলে ফেলে দিয়েছিল। এর পর অমিতকে সঙ্গে নিয়ে খোয়ার রোডের হোগলাবনে তল্লাশি চালান তদন্তকারীরা। সেখান থেকে পাওয়া যায় বিহার থেকে কেনা সেই পিস্তলটি। তবে ধৃত আততায়ী অমিতের সেই তুঁতে-নীল ডোরাকাটা জামা এবং উধাও হয়ে যাওয়া সিম কার্ডটির সন্ধান মেলেনি হোগলার ওই বনে।
অনুপম খুনে তদন্তকারীরা এখনও পর্যন্ত অনেক তথ্যই জানতে পেরেছেন বলে সূত্রের খবর। তদন্তকারীদের একাংশের দাবি, বাপি অনুপমকে খুনের পরিকল্পনা করেছিল অনেক দিন আগেই। সে জন্য বরাত দেওয়া হয়েছিল জিয়ারুল নামে আর এক সুপারি কিলারকে। কিন্তু জিয়ারুল সুপারি নিয়েও চম্পট দেয়। তাই তার উপরেও বাপির কথা শুনে হামলা চালিয়েছিল অমিত। তবে বেঁচে যায় জিয়ারুল। পুলিশ জানতে পেরেছে, ওই একই আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে অনুপমকে খুন করে হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, বাপির মাসির ছেলে অমিত। সেই সুবাদে আগরপাড়ায় তার নিয়মিত যাতায়াত ছিল। পুলিশ আরও জানতে পেরেছে, অমিত ছিনতাই করতে ‘ওস্তাদ’। তাই অনুপমকে খুন করতে তাকেই শেষ পর্যন্ত নিয়োগ করে বাপি।
কাউন্সিলর খুনের ওই ঘটনার পুনর্নির্মাণ করা হবে বলেও জানিয়েছেন ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা। তিনি বলেন, ‘‘কাউন্সিলর খুনের তদন্ত অনেকটা এগিয়েছে। আমরা অনেক তথ্যপ্রমাণ পেয়েছি। খুনের আগের ইতিহাস আছে। ২০২০ সালের সময় থেকে কিছু তথ্য পেয়েছি আমরা। হরিণঘাটার ঘটনার সঙ্গেও যোগাযোগ রয়েছে এই খুনের। এতে আরও অনেককে গ্রেফতার করা হবে।’’