রাস্তার উপরে ভেঙে পড়েছে ডাল। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
আবার যশোর রোডের পাশে থাকা গাছের ডাল ভেঙে পড়ল। বৃহস্পতিবার গাইঘাটার চাঁদপাড়া এলাকায় ডাল ভেঙে আহত হয়েছেন পথচারী এক মহিলা। ১৫ মে একই জায়গায় একটি দোকানের উপরে গাছের ডাল ভেঙে দু’জনের মৃত্যু হয়েছিল।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ চাঁদপাড়া বিডিও অফিস-সংলগ্ন এলাকায় মোটা কাঁচা ডালটি ভেঙে পড়ে। সে সময়ে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল একটি অটো। তাতে ৬ জন যাত্রী ছিল। ডালটি অটোর সামনে পড়ে। অল্পের জন্য বড়সড় দুর্ঘটনা এড়ানো গিয়েছে। তবে পথচলতি এক মহিলার হাতে ডালের আঘাত লাগে। এক ব্যক্তি চোখের সামনে ডাল ভেঙে পড়তে দেখে জ্ঞান হারান।
ঘটনার পরে ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দা এবং ব্যবসায়ীরা যশোর রোড অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান। প্রায় ৫০ মিনিট অবরোধ চলে। যশোর রোডে যানজটের সৃষ্টি হয়। অনেক যান চালককে দেখা যায়, গাড়ি থেকে নেমে এসে অবরোধকারীদের সমর্থন করছে। পরে প্রশাসনের আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতায় ডাল কেটে রাস্তা সাফ করা হয়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মৌমিতা মজুমদার বলেন, “ভ্যানে আমাদের দোকানের মালপত্র আসছিল। আমি দাঁড়িয়েছিলাম। হঠাৎ গাছের মোটা ডালটা ভেঙে পড়ল। প্রশাসনের কর্তাদের কানে আর কবে জল ঢুকবে? এ ভাবে আমরা বাঁচতে পারব না। প্রত্যেকবার ডাল ভেঙে পড়ার পরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। আমাদের দাবি, বিপজ্জনক গাছ কেটে ফেলা হোক।”
চাঁদপাড়ার বাসিন্দা পেশায় আইনজীবী অর্ণব চট্টোপাধ্যায় বলেন, “যশোর রোড ধরে নিয়মিত বনগাঁ মহকুমা আদালতে যাই। জীবন হাতে নিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। মরা, বিপজ্জনক গাছ কেটে ফেলা হোক। না হলে আরও মানুষের মৃত্যু দেখতে হবে।”
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বেশ কিছু গাছ ভিতর থেকে শুকিয়ে গিয়েছে। বাইরে থেকে দেখে বোঝা যায় না। বৃষ্টির ফলে ডাল ভারী হয়ে যায়। তার ফলে ভেঙে পড়ছে। অভিযোগ, ১৫ মে দু’জনের মৃত্যুর পরে মরা, বিপজ্জনক ডাল শনাক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু ডাল কাটার গাছ খুবই ধীর গতিতে চলছে।
গোবিন্দ কুণ্ডু নামে এক বাসিন্দার কথায়, “আমাদের শান্তিতে বাঁচার অধিকার দেওয়া হচ্ছে না।” এক যান চালকের কথায়, “বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় আমাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়েই গাড়ি চালাতে হচ্ছে এই পথে। সুরক্ষা বলে কিছু নেই।” পুলিশ কর্মীরাও রাস্তা দিয়ে গাড়ি নিয়ে যেতে ভয় পাচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে তাঁরা যশোর রোড এড়িয়ে ঘুরপথে যাতায়াত করেন।’’
১৫ মে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন বনগাঁর পুরপ্রধান গোপাল শেঠ। তিনি ডাল কাটার আশ্বাস দিয়েছিলেন। এ দিন গোপাল বলেন, “বিপজ্জনক ডাল কাটা হচ্ছে। তারপরেও ডাল শুকিয়ে যাচ্ছে কী কারণে জানি না। যে সব গাছে বিপজ্জনক ডাল আছে, সে সব গাছ কাটতে হবে। আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছি।”
জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের বনগাঁ মহকুমার সহকারী বাস্তুকার স্নেহাশিস সিকদার বলেন, “১৫ মে-র দুর্ঘটনার পরে চাঁদপাড়া এলাকায় যে সব বিপজ্জনক ডাল শনাক্ত করা হয়েছিল, তা কাটা হয়ে গিয়েছে। আবারও বিপজ্জনক ও মরা ডাল শনাক্ত করে কাটা হবে।” তিনি আরও বলেন, “আমরা চাই গাছ কেটে সড়ক চওড়া করতে। কিন্তু আদালতের নির্দেশে গাছ কাটা বন্ধ আছে। এ বিষয়ে আমাদের কিছু করার নেই।”