bangaon bi-election

Bangaon Bi Election: একা কুম্ভ হয়ে বাইরের ছেলেদের সঙ্গে টক্কর দিলেন বৃদ্ধ অনাথবন্ধুই 

দিনের শেষে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ভোট পড়েছে ৮২.৭১ শতাংশ। উপ নির্বাচনে সচরাচর এত ভোট পড়তে দেখা যায় না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বনগাঁ শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০২২ ০৮:৫৪
Share:

বাটার মোড়ে অবরোধে শামিল কংগ্রেস ও সিপিএম। ইনসেটে, বাটার মোড়ে বিক্ষোভ বিজেপির। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

চেঁচিয়ে উঠলেন সিপিএম প্রার্থীর বৃদ্ধ এজেন্ট, ‘‘ভোট লুট করতে দেব না।!’’

Advertisement

বললেই তো হল না। কে শুনছে সে কথা।

কাজেই যা হওয়ার তা-ই হল। বৃদ্ধ এজেন্টের সামান্য প্রতিরোধ এক সময়ে মিশিয়ে গেল ধুলোয়। বুথের দখল নিল বহিরাগতেরা।

Advertisement

বনগাঁ পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের উপনির্বাচনে উত্তেজনার আশঙ্কা করেছিলেন বিরোধীরা। পুলিশ-প্রশাসনকে সে কথা চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলেন। কিন্তু রবিবার সকাল থেকে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রশাসন পুরোপুরি ব্যর্থ, এমনটাই অভিযোগ বিরোধীদের। শাসকদল ছাপ্পা ভোট করেছে বলে অভিযোগ। ফের ভোটগ্রহণের দাবি তুলেছে বিরোধীরা। অভিযোগ, সকাল থেকে দিনভর বহিরাগতদের দাপাদাপি চলেছে। বিরোধী প্রার্থী, পোলিং এজেন্টদের বুথ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। ধাক্কাধাক্কি করা হয়েছে বিরোধী প্রার্থী, বিধায়ককেও। প্রতিবাদে রাস্তা অবরোধ করে বিরোধী দলগুলি। বিজেপির বিরুদ্ধে আবার হুমকি, বুথ দখলের চেষ্টার অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল।

পুলিশের অবশ্য দাবি, ভোট মিটেছে শান্তিতেই। বনগাঁর পুলিশ সুপার তরুণ হালদার দিনের শেষে বলেন, ‘‘ভোটগ্রহণ শান্তিতে মিটেছে। পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা হয়েছিল।’’ ভোটারদের বড় অংশই বলছেন, ‘‘নিজের চোখেই তো দেখলাম কী কী ঘটল।

দিনের শেষে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ভোট পড়েছে ৮২.৭১ শতাংশ। উপ নির্বাচনে সচরাচর এত ভোট পড়তে দেখা যায় না। ভোটারদের অনেকে জানালেন, বহিরাগতদের দাপাদাপির ভয়ে অনেকে তো ভোটই দিতে বেরোননি। কোনও বুথেই তেমন লম্বা লাইন দেখা যায়নি সারাদিনে। তা হলে এত ভোট পড়ল কী ভাবে!

এরপরেও প্রশাসন কী করে এমন মিথ্যা দাবি করে!’’

গাঁধীপল্লি এলাকায় স্বামী বিবেকানন্দ বিদ্যাপীঠ স্কুলে ভোটগ্রহণ চলছিল। বহিরাগত কিছু যুবক বুথে ঢুকে ছাপ্পা দিতে শুরু করে বলে অভিযোগ। পুলিশ দেখেও দেখেনি।

এ সব দেখে ফুঁসে ওঠেন সিপিএম প্রার্থী ধৃতিমান পালের পোলিং এজেন্ট, বাহাত্তর বছরের বৃদ্ধ অনাথবন্ধু ঘোষ। ‘ভোট লুট করতে দেব না’— চেঁচিয়ে ওঠেন বৃদ্ধ। এক যুবককে দেখা গেল, অনাথের কানে কানে কিছু বলছে। শুনে আরও খেপে উঠলেন যুবকল্যাণ দফতরের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী অনাথ। মাথা নেড়ে কয়েকবার বললেন, ‘‘এ সব কথা আমি শুনবই না।’’

‘নরমে’ কাজ না হওয়ায় এ বার ‘গরম’ উপায়। এক যুবকের হুঁশিয়ারি, ‘‘অনাথদা, আপনাকে সম্মান করি। আপনার বয়স হয়েছে। এখান থেকে চলে যান। পরিস্থিতি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন।’’

বৃদ্ধ পিছু হটতে নারাজ। খানিকক্ষণ চলল তর্কাতর্কি। এক সময়ে কিছুটা দমে যেতে দেখা গেল যুবকদের।

ইতিমধ্যে বুথের বাইরে ধৃতিমানকে দেখতে পেয়ে বহিরাগতদের দলটা এগিয়ে গেল সে দিকে। সুরটা হুমকির। তবে পরামর্শের ঢঙে একজনকে বলতে শোনা গেল, ‘‘শোনো ধৃতিমান, খোলাখুলি বলছি। তোমাদের সময়ে তোমরা করেছ। এখন আমাদের সময়ে আমরা করব। অনাথদাকে বলো এখান থেকে চলে যেতে।’’

ইঙ্গিতটা বাম আমলে সন্ত্রাসের অভিযোগের দিকে। ধৃতিমান পরে বলেন, ‘‘বনগাঁর মানুষ জানেন, আমাদের সময়ে ভোটে কখনওই ছাপ্পা-সন্ত্রাস হয়নি। মানুষ নিজেদের ইচ্ছে মতো ভোট দিতেন। বাম আমলেও বনগাঁ পুরসভা কংগ্রেস বা তৃণমূলের দখলে ছিল। ’’

এদিন হুমকির মুখেও সিপিএম প্রার্থী, এজেন্ট অবশ্য ময়দান ছাড়েননি। বরং বুথ ছাড়ে বহিরাগতেরা। তবে কিছুক্ষণ পরে ফের হাজির হয়। ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের মধ্যে ঢুকে পড়ে। এ বারও বাধা দেন প্রবীণ সিপিআই কর্মী অনাথবন্ধু। সঙ্গে ছিলেন ধৃতিমান।

এ বার বহিরাগতেরা ছিল মারমুখী। প্রার্থী ও এজেন্টকে ধাক্কাধাক্কি শুরু করে তারা। অনাথকে ধাক্কা মারলে তিনি দেওয়ালে গিয়ে ধাক্কা খান। কপালে চোট পান। তবুও বুথ ছাড়েননি অনাথ।

সওয়া ১১টা নাগাদ হাওয়া আরও গরম। এ বার বহিরাগতেরা আরও বেশি সংখ্যায় ঢুকে পড়ল বুথে অনাথ আর প্রতিরোধ করতে পারেননি। বুথ ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। পরে বলেন, ‘‘দু’দুবার আটকে দিয়েছিলাম। শেষবার আর পারিনি। ওরা সিসি ক্যামেরাও অকেজো করে দিয়েছিল।’’ অনাথের দাবি, অবাধে ছাপ্পা চলেছে। পুলিশ ছিল দর্শকের ভূমিকায়।

কবি কেশবলাল বিদ্যাপীঠের বুথেও বহিরাগত দাপাদাপি শুরু হয় সকাল থেকে। সেখানে দু’টি রাজনৈতিক দলের জমায়েত হতে দেখা গিয়েছে বলে জানালেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। কয়েকজন তৃণমূল কাউন্সিলরকেও ওয়ার্ডে ঘোরাঘুরি করতে দেখা গিয়েছে।

এখানে বিজেপি প্রার্থী অরূপকুমার পালকে বহিরাগত এক যুবক গালিগালাজ করে, ধাক্কা দিয়ে স্কুলগেটের দিকে তাড়িয়ে নিয়ে যায়। প্রিজাইডিং অফিসারকেও হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।

সকাল ১০টা নাগাদ পরিস্থিতি কার্যত লাগামছাড়া। স্বামী বিবেকানন্দ বিদ্যাপীঠ কার্যত চলে গিয়েছে বহিরাগতদের দখলে। বহিরাগত মহিলাদেরও ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের মধ্যে দেখা গেল। সে সময়ে বিজেপির বনগাঁ দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক স্বপন মজুমদার ভোটকেন্দ্রে আসেন। সঙ্গে তাঁর নিরাপত্তার থাকা কেন্দ্রীয় বাহিনীর কয়েকজন জওয়ান। ছাপ্পা চলছে বলে অভিযোগ তোলেন বিধায়ক। বিজেপির পক্ষ থেকে তৃণমূলের দিকে ধেয়ে যায় ‘চোর চোর’ স্লোগান।

তৃণমূল কাউন্সিলর তথা তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি নারায়ণ ঘোষ প্রতিবাদ করেন। বিধায়কের সঙ্গে তাঁর বচসা বাধে। দু’দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে মারামারি বেধে যায়। মহিলা কর্মীদেরও মারপিটে জড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। আহত হন বিজেপির বনগাঁ দক্ষিণ পুরমণ্ডলের সভাপতি সুবীর সরকার, প্রাক্তন কাউন্সিলর মন্টু বৈরাগী এবং বিজেপি নেতা জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ। স্বপনকেও ধাক্কাধাক্কি করা হয় বলে অভিযোগ। তৃণমূলের কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে দলের তরফে দাবি করা হয়েছে। বিধায়কের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা জওয়ানদেরও ধাক্কাধাক্কি করা হয়েছে বলে অভিযোগ।

এ সবের মধ্যেই কংগ্রেস প্রার্থী প্রভাস পালকে বহিরাগতেরা ঘুষি মারে। সোনার চেন ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে।

সকাল সাড়ে ১১টার পরে দু’টি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের ৬টি বুথ থেকে বিরোধীরা পোলিং এজেন্ট তুলে নেয়। কাউকে কাউকে জোর করেও তুলে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।

বিজেপির বাটারমোড়ে যশোর রোড অবরোধ করে। সিপিএম অবরোধ করে রামনগর রোডের মোড়ে, যশোর রোডে।

অবরোধের জেরে পথচারীদের সঙ্গে সিপিএম কর্মীদের দফায় দফায় বচসা বাধে। রামনগর রোডের মোড় থেকে সিপিএম নেতা-কর্মীরা মিছিল করে বাটারমোড়ে এসে অবরোধ শুরু করেন। কংগ্রেসও সেখানে এসে বিক্ষোভ দেখান।

বিরোধীরা সকলেই ভোটে ছাপ্পা, সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলেছে। ফের ভোটগ্রহণের দাবি উঠেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মহকুমাশাসক প্রেমবিভাস কাঁসারি।

সকাল পৌনে ১১টা থেকে বেলা সওয়া ১টা পর্যন্ত অবরোধ চলে। যানজট সৃষ্টি হয়। সিপিএমের পক্ষ থেকে বনগাঁ থানায় মিছিল করে এসে বিক্ষোভ দেখানো হয়।

এ দিকে বিজেপি বিধায়ক স্বপন তৃণমূল কর্মীদের হুমকি দিয়েছেন এবং বহিরাগতদের নিয়ে এসে বুথ দখল করতে চেয়েছিলেন— এই অভিযোগ তুলে তৃণমূল মহকুমাশাসকের অফিস ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে। বিধায়কের গ্রেফতারের দাবি তোলা হয়।

সকালের দিকে যে সব সাধারণ ভোটারেরা লাইন দিয়েছিলেন, বেলার দিকে দেখা যায়, সেই লাইন একেবারেই কমে এসেছে। বুথের ভিতরে এবং আশপাশের চত্বর কার্যত বহিরাগতদেরই দখলে।

a

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement