—প্রতীকী চিত্র।
ভোরে নমাজ পড়ার পরে বাজারে চা খেতে যাওয়ার সময়ে এক ব্যক্তিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুন করার অভিযোগ উঠল তাঁরই এক আত্মীয়ের বিরুদ্ধে। সোমবার ঘটনাটি ঘটেছে কলকাতা লেদার কমপ্লেক্স থানার তাড়দহ কাপাসহাটি এলাকায়। পুলিশ জানিয়েছে, নিহত ব্যক্তির নাম ভোলা শেখ (৬৭)। তাঁর বাড়ি ওই এলাকাতেই। অভিযুক্ত পলাতক। তার খোঁজ চলছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, প্রতিদিনের মতো এ দিনও ভোরে উঠে নমাজ পড়ার পরে চা খেতে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন ভোলা। অভিযোগ, সেই সময়ে তাঁরই ভাগ্নি-জামাই জাকির শেখ নির্জন রাস্তায় ভোলার পথ আটকায়। দু’জনের মধ্যে পারিবারিক বিষয় নিয়ে তুমুল বচসা বেধে যায়। অভিযোগ, হঠাৎই জাকির ধারালো অস্ত্র বার করে ভোলাকে রাস্তায় ফেলে এলোপাথাড়ি কোপাতে থাকে। রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন ভোলা। চিৎকার-চেঁচামেচি শুনে স্থানীয় লোকজন ছুটে এলে সেখান থেকে পালিয়ে যায় অভিযুক্ত জাকির। গুরুতর জখম ভোলাকে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন।
পুলিশ জানিয়েছে, ভোলার ভাগ্নি হালিমা বিবির সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল বিহারের বাসিন্দা জাকির শেখের। জাকির ও হালিমার তিন মেয়ে। তিন জনেরই বিয়ে হয়ে গিয়েছে। জাকির বানতলার চর্মনগরীতে ঠিকা শ্রমিকের কাজ করে। অভিযোগ, সে অধিকাংশ সময়েই নেশা করে পড়ে থাকে। যা উপার্জন করে, তার বেশির ভাগটাই নেশা করে উড়িয়ে দেয়। এ নিয়ে ওই দম্পতির মধ্যে গন্ডগোল লেগেই থাকত। এমনকি, জাকির তার স্ত্রী হালিমাকে প্রায়ই মারধর করত। মামাশ্বশুর ভোলা ও মামিশাশুড়ি আকিলা বিবি বাধা দিতে গেলে তাঁদের সঙ্গেও গন্ডগোল বেধে যেত জাকিরের। এর আগে এক বার জাকির তার মামিশাশুড়ি আকিলাকে বঁটি দিয়ে কুপিয়ে খুন করারও চেষ্টা করেছিল। সেই ঘটনায় ক্রুদ্ধ ভোলা সম্প্রতি তাঁর নিজের বাড়ি থেকে হালিমা ও জাকিরকে বার করে দেন। এ নিয়ে গন্ডগোল শুরু হয়ে যায় জাকিরের সঙ্গে ভোলার।
এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা নাসির শেখ বলেন, ‘‘জাকির অত্যন্ত খারাপ লোক। মামাশ্বশুর ওকে আশ্রয় দিয়েছিলেন। সেই মামাশ্বশুরকেই যে জাকির এ ভাবে খুন করবে, তা ভাবতে পারিনি। ওর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’’ প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের ধারণা, বাড়ি থেকে বার করে
দেওয়ার ফলেই রাগের বশে জাকির ভোলাকে খুন করেছে। জাকিরের স্ত্রী হালিমা বললেন, ‘‘আমি শুনেছি, জাকিরের আগের পক্ষের স্ত্রী রয়েছেন। জাকির প্রায়ই নেশা করে এসে আমার উপরে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করত। মামা, মামি প্রতিবাদ করায় মামাকে নৃশংস ভাবে খুন করেছে। আমি ওর কঠোর শাস্তি চাই।’’
নিহত ভোলা শেখের স্ত্রী আকিলা বিবি বললেন, ‘‘ভাগ্নি-জামাই প্রায়ই ভাগ্নিকে মারধর করত। আমার স্বামী তার প্রতিবাদ করেন। জাকির আমাকেও খুন করার জন্য এক বার বঁটি দিয়ে কোপ মেরেছিল। তাই ওকে বাড়ি থেকে বার করে দেওয়া হয়। সেই আক্রোশেই জাকির আমার স্বামীকে এই ভাবে খুন করেছে। যাকে বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছিলাম, তার কারণেই এ ভাবে আমার স্বামীকে মরতে হল। আমি ওর ফাঁসি চাই।’’