নিজের দোকানে ব্যস্ত পদ্মপলাশ। নিজস্ব চিত্র।
আমপানে ডাঁসা নদীর বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছিল হিঙ্গলগঞ্জের বাইনারা গ্রাম। প্রায় গোটা গ্রামটাই জলের নীচে চলে যায়। বাকিদের মতোই বাড়ি ছেড়ে বাঁধের উপর আশ্রয় নিয়েছিলেন গ্রামের যুবক পদ্মপলাশ ও তাঁর বাবা-মা। প্রায় তিন মাস এভাবেই কাটে। মাটির বাড়ি জলে ডুবে নষ্ট হয়ে যায়। ক্ষতিপূরণের টাকায় কোনওরকমে বাড়ি মেরামত করে দুর্গাপুজোর আগে বাঁধ ছেড়ে বাড়িতে ফেরেন তাঁরা। কিন্তু খাবেন কী? বছর কুড়ির পদ্মপলাশ প্রাথমিক স্কুল শিক্ষকের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। কিন্তু এখনও চাকরি জোটেনি। এ দিকে লকডাউন আর আমপান মিলে কাঠের মিস্ত্রি বাবা সঞ্জিত রপ্তানের কাজকর্মও প্রায় শিকেয়। শেষপর্যন্ত উপায় না দেখে ডাঁসা নদীর বাঁধের উপর খড়ের চাল দেওয়া একটি মাটির ঘর বানিয়ে দোকান খুলে বসেন পদ্মপলাশ। প্রথমে খাতা, পেন, চিরুনি, ধূপ ইত্যাদি বেচতে শুরু করেন। দুর্গাপুজোর আগে অল্প কিছু পোশাক তোলেন। সেগুলো ভাল বিক্রি হতে আরও পোশাক তুলেছেন। দোকানের নাম রেখেছেন মহাপ্রভু বস্ত্রালয়। অক্লান্ত পরিশ্রমে ধীরে ধীরে বহরে বেড়েছে পদ্মপলাশের দোকান। তিনি জানান, নাম বস্ত্রালয় হলেও এখন নানা জিনিস মিলবে দোকানে। সেলাই এর কাজ করার জন্য সেলাই মেশিন যেমন আছে, তেমনই টিভি ও ফোন রিচার্জ করার ব্যবস্থা, ফটো তোলা, জেরক্স, প্রিন্ট আউট, ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তোলা ও জমা দেওয়া, অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটা-সহ বিভিন্ন কাজ হচ্ছে। পদ্মপলাশ বলেন, “নিজের কিছু টাকা ছিল। বাকিটা ধার করে মোট ৫০ হাজার টাকা খরচ করে দোকানে বিভিন্ন জিনিস তুলেছি। একটা কম্পিউটার থাকলে অনেক কাজে সুবিধা হবে। একটু একটু করে জমিয়ে আগে একটা কম্পিউটার কিনব। তারপর পরিকল্পনা রয়েছে একটা পাকা ঘর করার। তার জন্য ব্যাঙ্কের কাছে ঋণ চাইব ভেবে রেখেছি।” পদ্মপলাশের মা অঞ্জনা রপ্তান বলেন, “আমপানের আগে শুধু স্বামীর আয়ে কোনওরকমে সংসার চলত। ছেলের দোকানের আয়ে সংসারে কিছুটা সুরাহা হয়েছে। ভয় লাগে, আবার কখনও বাঁধ ভেঙে প্লাবিত না হয়।”