Amdanga Violence

ভোটের মরসুম এলেই আতঙ্কে বুক কাঁপে আমডাঙার বাসিন্দাদের

বিধানসভা হিসাবে আমডাঙার জন্মলগ্নে ১৯৭৭ সালে জনতা পার্টির মীরা দত্তকে পরাজিত করেন সিপিএমের হাসিম আব্দুল হালিম। টানা ২৫ বছর বিরোধীদের হারিয়ে এখানে কার্লাযত ‘লাল দুর্গ’ তৈরি করেছিল সিপিএম।

Advertisement

ঋষি চক্রবর্তী

আমডাঙা শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০২৩ ০৯:৫২
Share:

দুষ্কৃতীদের খোঁজে গ্রামে পুলিশ। তারাবেড়িয়া পঞ্চায়েত এলাকায়। ফাইল চিত্র।

হাজারখানেক বোমা উদ্ধার হয়েছিল কয়েক দফায়। সেটা গত পঞ্চায়েত ভোটের আগে-পরের ঘটনা। সে বার ভোটের বলি হয়েছিলেন ৪ জন।

Advertisement

ভোটকে ঘিরে রাজনৈতিক হানাহানির ইতিহাস অবশ্য নতুন নয় উত্তর ২৪ পরগনার এই এলাকায়। প্রথম পঞ্চায়েত ভোটের সময় থেকেই ‘এই ট্র্যাডিশন সমানে চলছে।’

বিধানসভা হিসাবে আমডাঙার জন্মলগ্নে ১৯৭৭ সালে জনতা পার্টির মীরা দত্তকে পরাজিত করেন সিপিএমের হাসিম আব্দুল হালিম। টানা ২৫ বছর বিরোধীদের হারিয়ে এখানে কার্লাযত ‘লাল দুর্গ’ তৈরি করেছিল সিপিএম। এলাকার প্রবীণ নাগরিকেরা অনেকে জানালেন, ’৭৮ সালের প্রথম পঞ্চায়েত ভোটে সন্ত্রাসের অভিযোগ উঠেছিল সিপিএমের বিরুদ্ধে। সে বার বিরোধীশূন্য বোর্ড গড়েছিল তারা।

Advertisement

২০১১ সালে রাজ্যে তৃণমূল সরকার আসার পর থেকে এখানেও শক্তি বৃদ্ধি হয় ঘাসফুল শিবিরের। সেই সঙ্গে বাড়তে থাকে হিংসা। অভিযোগ, সিপিএমের জাকির ভল্লুকের নেতৃত্বে আমডাঙায় ত্রাসের পরিবেশ তৈরি হয়। পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলে তৃণমূলও।

পুলিশের পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৮ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাকির ভল্লুকের ডেরা থেকে ২০০ বোমা উদ্ধার হয়েছিল। তিনটি আগ্নেয়াস্ত্র ও ১০ রাউন্ড কার্তুজও উদ্ধার হয় ওই দিন। এই ঘটনার আগে তারাবেড়িয়া, বোদাই ও মরিচা পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বইচগাছি। ২৮ অগস্ট রাতে শুরু হয় বোমাবাজি। এত বোমা পড়েছিল সে দিন, সুতুলিতে ঢেকে যায় পিচের রাস্তা। ভেঙে ছিল পুলিশের সাতটি গাড়ি।

পুলিশ জানিয়েছে, সে দিন গোলমালে পেটো বোমা, কৌটো বোমা, সকেট বোমা, পিন বোমা, দেশি পদ্ধতিতে তৈরি হ্যান্ড গ্রেনেডও ব্যবহার হয়েছিল। ওই বছরের ৮ সেপ্টেম্বর বইচগাছার ঘোষপাড়া মাঠ থেকে ১০০ ড্রাম বোমা উদ্ধার করেছিল পুলিশ। তৎকালীন এক পুলিশ কর্তার কথায়, ‘‘সিপিএম নেতা জাকির ভল্লুকের অস্ত্রভান্ডার ছিল ঘোষপাড়া মাঠ। মাটি খুঁড়তেই শিউরে উঠি আমরা। সারি সারি ড্রাম মাটির নীচে। তার মধ্যেই ছিল বোমা।’’২০১৯ সালের মার্চের শেষ সপ্তাহে আমডাঙার বর্তির বিল থেকে উদ্ধার হয় প্রচুর বোমা। ২০২১ সালে বিধানসভা ভোটের আগে তৈরি হয় আইএসএফ। সিপিএম,কংগ্রস ও তৃণমূলের একটি অংশ নতুন দলে ভিড়ে যায়। ওই বছরের ২৬ এপ্রিল খেলিয়া গ্রামের একটি ঝোপ থেকে উদ্ধার হয়েছিল ২ ড্রাম বোমা এবং ১ ড্রাম বোমা বাঁধার মশলা। তৃণমূল এবং আইএসএফ একে অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপিয়েছিল ওই ঘটনায়।

ইদানীং আমডাঙায় সিপিএমের একটা বড় অংশ ভেঙে শক্তিশালী হয়েছে আইএসএফ। তৃণমূলের এক অংশও যোগ দিয়েছে। পাশাপাশি, তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দলও দলের নেতাদের মাথা ব্যথার কারণ। ভোটের আগে অস্ত্র মজুত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলছে সব পক্ষই। বারাসত পুলিশ জেলার এসডিপিও হাবড়া রোহিত শেখ বলেন, "আমরা সর্তক আছি। নজরদারি চলছে। কে কী করছে, তার খোঁজ-খবর নিচ্ছি। অশান্তি এড়াতে যা যা করার, সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

সন্তোষপুরের বাসিন্দা দেবাশিস ঘোষ বলেন, ‘‘তৃণমূল-সিপিএম আলাদা নাম মাত্র। ভোটে জিততে দু’দলই উগ্র রূপ ধারণ করে।’’ বোদাইয়ের বাসিন্দা আলি আহমেদের কথায়, ‘‘সিপিএমের লোকেরাই তো জার্সি বদলে তৃণমূল হয়েছে। ফলে হানাহানি এখানে লেগেই থাকে ভোটে।’’ তারাবেড়িয়ার বাসিন্দা রহমত মণ্ডল আবার বলেন, ‘‘কোনও দলই চায় না, সাধারণ মানুষ নিজের ভোট নিজে দিন। সে কারণেই ভোটের সময়ে হিংস্র হয়ে ওঠে ওরা। আমার বাবাকে সিপিএমের লোকেরা মেরে তাড়িয়েছিল বুথ থেকে। কেন্দ্রীয় বাহিনী ছাড়া ভোট করালে হামলা হবে। মৃত্যু হবে। এ সব আটকাতে পারবে না রাজ্য পুলিশ।’’

সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনার সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আহমেদ আলি খান বলেন, ‘‘পুলিশ তৃণমূলের দলদাসে পরিণত হয়েছে। হিংসা করতে ব্যারাকপুর থেকে তৃণমূল অস্ত্র আনে, দুষ্কৃতীদের আনে। জাকির ভল্লুকের নেতৃত্বকে তৃণমূল ভয় পেয়ে হামলা করেছিল। মিথ্যা মামলা দেয়।’’ তাঁর দাবি, আমডাঙায় হিংসার পরিবেশ সিপিএম শুরু করেনি।

আমডাঙা ব্লক তৃণমূলের সভাপতি জ্যোতির্ময় দত্ত আবার বলেন, "সিপিএম এখানে সন্ত্রাস করত। মানুষের উপরে অত্যাচার করত। ভোটে জিততে কত যে মায়ের কোল খালি করেছে ওরা!’’ তৃণমূল বাধ্য হয়ে কখনও কখনও হামলা প্রতিহত করেছে বলে দাবি তাঁর।

আইএসএফের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সম্পাদক কুতুবউদ্দিন আবার বলেন, ‘‘বিধানসভা ভোটে তৃণমূল ভয় পেয়ে হামলা চালিয়েছিল। এখনও হুমকি ভয় দেখানো হচ্ছে আমাদের কর্মীদের। তবে আমাদের সংগঠনে ঐক্য থাকার জন্য কিছু করতে সাহস পাচ্ছে না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement