পদবি ছাড়াই বড় হবে অক্ষর

মুদাস্‌সর ও হাবিবা দু’জনেই থিয়েটার কর্মী। থিয়েটারের দল রয়েছে তাঁদের। ২১ নভেম্বর অক্ষরের জন্ম হয়। সন্তানকে ধর্ম পরিচয়ের বাইরে রাখার পরিকল্পনা আগে থেকেই ছিল দম্পতির। চেয়েছিলেন, প্রথম থেকেই খাতায়-কলমে পদবি ছাড়া বেড়ে উঠুক ছেলে। ছেলের জন্মের পর তাই সেই মতো আবেদন করেন স্থানীয় পঞ্চায়েতে।

Advertisement

সমীরণ দাস

জয়নগর শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৯ ২৩:৫৯
Share:

ছেলে কোলে দম্পতি। ছবি: সুমন সাহা

মানবতাকেই একমাত্র ধর্ম মেনেছেন বরাবর। স্বপ্ন দেখেছেন ধর্মীয় ভেদাভেদহীন সমাজের। সদ্যোজাত সন্তানকে তাই ধর্মীয় পরিচয় ছাড়াই বড় করে তুলতে চান জয়নগরের দক্ষিণ বারাসতের বাসিন্দা মুদাস‌্সর হোসেন এবং তাঁর স্ত্রী হাবিবা। সম্প্রতি পুত্রসন্তানের জন্মের পরে জন্মের শংসাপত্রে কোনও পদবি না রাখার জন্য আবেদন জানান তাঁরা। তাঁদের ইচ্ছাকে সম্মান জানিয়ে বৃহস্পতিবার পদবি ছাড়াই ছেলে অক্ষরের জন্মের শংসাপত্র দিল পঞ্চায়েত।

Advertisement

মুদাস্‌সর ও হাবিবা দু’জনেই থিয়েটার কর্মী। থিয়েটারের দল রয়েছে তাঁদের। ২১ নভেম্বর অক্ষরের জন্ম হয়। সন্তানকে ধর্ম পরিচয়ের বাইরে রাখার পরিকল্পনা আগে থেকেই ছিল দম্পতির। চেয়েছিলেন, প্রথম থেকেই খাতায়-কলমে পদবি ছাড়া বেড়ে উঠুক ছেলে। ছেলের জন্মের পর তাই সেই মতো আবেদন করেন স্থানীয় পঞ্চায়েতে।

মুদাস্‌সর বলেন, ‘‘পদবিই তো ধর্মের বাহক। পদবি দেখেই হিন্দু, মুসলমান, ব্রাহ্মণ, শূদ্র ইত্যাদি নানা ভাগ করা হয়। আমি এবং আমার স্ত্রী চাই না, আমাদের সন্তান এই ভেদাভেদের মধ্যে বেড়ে উঠুক। তাই ওর নামের সঙ্গে পদবি জুড়ে দিতে চাইনি। পঞ্চায়েতকে সে কথা জানানোয় আমাদের আবেদন মেনে ওঁরা পদবিহীন শংসাপত্র দিয়েছেন।’’

Advertisement

মুদাস্‌সর জানান, তাঁর পরিবারে বরাবরই মানবতার চর্চা হয়। কোথাও লিখিত ভাবে ধর্মের কথা উল্লেখ করতে হলে ‘মানবতা’ লেখাই পছন্দ করেন তাঁরা। এর আগে তাঁর দুই ভাইপোর জন্মের সময়েও পদবি না রাখার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু নানা কারণে তা হয়ে ওঠেনি। ছেলের ক্ষেত্রে তাই আগে থেকেই ভাবনাচিন্তা করে রেখেছিলেন তাঁরা।

মুদাস্‌সরের কথায়, ‘‘আমাদের একান্নবর্তী পরিবার। গোটা পরিবারেই ধর্মচর্চার কোনও ঠাঁই নেই। আমরা ২৫শে বৈশাখ পালন করি ধুমধাম করে। কিন্তু আমাদের বাড়িতে কোনও ধর্মীয় অনুষ্ঠান হয় না। মানবতাকেই একমাত্র ধর্ম বলে মনে করি। ছেলেকেও সে ভাবেই বড় করে তোলার চেষ্টা করব।’’

দক্ষিণ বারাসত পঞ্চায়েতের উপপ্রধান অরুণ নস্করের কথায়, ‘‘প্রাথমিক ভাবে এ রকম আবেদনে আমরা অবাক হয়েছিলাম। এ ধরনের ঘটনা এই পঞ্চায়েতে তো বটেই, আশেপাশে কোথায় হয়েছে বলে শুনিনি। কিন্তু সন্তানকে ধর্মীয় ভেদাভেদের ঊর্ধ্বে রাখার যে সংকল্প ওঁরা নিয়েছেন, তা সত্যিই দৃষ্টান্তমূলক। ওঁদের ইচ্ছাকে সম্মান জানিয়েই পদবি ছাড়াই শংসাপত্র দেওয়া হয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement