ক্যানিং থেকে সাইকেলে বাসন্তী পৌঁছলেন সোমেন। —নিজস্ব চিত্র।
প্রায় সাড়ে ১৯ বছর বাদে, সাতটি মহাদেশের ১৯১টি দেশে সাইকেল নিয়ে ঘুরে ঘুরে এডস সম্পর্কে সচেতনতার প্রচার সেরে রবিবার বাড়ি ফিরেছেন বাসন্তীর যুবক সোমেন দেবনাথ। ঘরের ছেলেকে স্বাগত জানাতে উপস্থিত ছিলেন পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-বন্ধুরা। ক্যানিং থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার রাস্তা সাইকেলে করে বাসন্তী আসেন সোমেন। তাঁর সঙ্গে পাড়ি দেন কয়েকশো মানুষ। সোনাখালিতে তাঁকে বরণের জন্য বিশেষ অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়েছিল। সোমেন জানান, সাইকেলে প্রায় দু’লক্ষ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছেন। লক্ষ লক্ষ মানুষের সঙ্গে দেখা করেছেন, কথা বলেছেন। এইচআইভি সম্পর্কে সচেতনতার বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন।
মূলত স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনে গিয়ে বার্তা দিয়েছেন সোমেন। তিনি বলেন, “আমার এই যাত্রায় বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান থেকে শুরু করে রাষ্ট্রদূতেরা পাশে থেকেছেন। ভারতীয়রা তো সাহায্য করেছেন। সাহস জুগিয়েছেন। আমার এই কাজে যদি এক জনেরও উপকার হয়, আমি বুঝব, সফল হয়েছি।”
মাত্র চোদ্দো বছর বয়সে সংবাদমাধ্যমে এইচআইভি আক্রান্ত এক ব্যক্তির মৃত্যুর খবর জানতে পেরে এই রোগ সম্পর্কে আগ্রহ জাগে সোমেনের। স্কুল শেষ করে প্রাণিবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করেন। পরে এডস প্রতিরোধের জন্যে ‘রিজিওনাল এডস কন্ট্রোল সোসাইটি’ থেকে বিশেষ প্রশিক্ষণ নেন।
২০০৪ সালের ২৭ মে সাইকেলে নিয়ে বাড়ি থেকে রওনা দেন। প্রথমে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে, পড়শি কয়েকটি দেশে প্রচার সেরে বাড়ি ফেরেন। তার কয়েক মাসের মধ্যেই বিশ্বভ্রমণের জন্য বেড়িয়ে পরেন তিনি।
প্রথমে এশিয়ার ২৪টি দেশ ঘুরে ইউরোপে ঘোরেন সোমেন। সেখানে তিন বছরের মধ্যে ৪৫টি দেশে সচেতনতা প্রচার করে ২০১২-এ গ্রিনল্যান্ডে যান। সেখান থেকে আফ্রিকা, দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিল ঘুরে আন্টার্কটিকা পৌঁছন। এরপরে পানামা, মেক্সিকো হয়ে আমেরিকা। সব শেষে এশিয়ার বাকি দেশগুলিতে প্রচার সেরে বাড়ি ফিরেছেন।
বাসন্তীতে বাড়ি হলেও তাঁর পরিবার এখন সোনারপুরে থাকেন। কাছেই সুভাষগ্রামে একটি জায়গায় সংগ্রহশালা ও গ্লোবাল ভিলেজ তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে সোমেনের। বিশ্বভ্রমণ করে পাওয়া জিনিসপত্র সেই সংগ্রহশালায় থাকবে। গ্লোবাল ভিলেজ তৈরির লক্ষ্য, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে এডস আক্রান্তদের পাশে থাকা। পাশাপাশি, বিশ্বের মানুষের মিলনস্থল হিসাবে এই জায়গাকে গড়ে তোলার ইচ্ছে আছে সোমেনের।
ইদানীং বিশ্বভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিয়ে বই লেখার কাজে হাত দিয়েছেন তিনি। বললেন, “পথে তালিবানের হাতে বন্দি থেকেছি, তাঁদের রান্না করে খাওয়াতে হয়েছে দিনের পর দিন। গ্রিনল্যান্ডে এস্কিমোদের সঙ্গে থেকেছি। কেনিয়ায় মাসাইদের সঙ্গে, শ্রীলঙ্কায় এলটিটি জঙ্গিদের সঙ্গেও রাত কাটিয়েছি। এ ছাড়াও নানা অভিজ্ঞতা হয়েছে। সে সব নিয়ে বই লিখছি।”
সোমেনকে এত দিন পরে কাছে পেয়ে খুশি পরিবার। মা শোভারানি, ভাই সৌরভ, পিংকুরা বলেন, “মাঝে মধ্যেই ভয়ে থাকতাম। কোথায় কী ভাবে ও থাকছে, তা নিয়ে উদ্বেগ হত। তবে ওর লক্ষ্য যে পূরণ হয়েছে, তাতে আমার সকলে খুশি।”