ধরাশায়ী: স্কুল ঘরের অবস্থা। কবে মেরামত হবে, কবে তৈরি হবে পাকা ঘর, উত্তর অজানাই। নিজস্ব চিত্র
মাটির দেওয়াল অ্যাসবেস্টসের ছাউনি দেওয়া ঘরে চলত পড়াশোনা। দিনভর ছোট ছেলেমেয়েদের হইচই মাতিয়ে রাখত। কিন্তু বুলবুলের পর থেকে সব সুনসান। ঘরের চাল মিশেছে মাটিতে। বন্ধ লেখাপড়া।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার নামখানার পূর্ব বিজয়বাটি গ্রামের ‘মাতঙ্গিনী’ স্কুল ভবনের এই হাল ব্লক প্রশাসনকে জানিয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। ভেঙে পড়া কেন্দ্রটি দেখে গিয়েছেন বিডিও রাজীব আহমেদ। তিনি বলেন, ‘‘আপাতত ওই কেন্দ্রটি চালু করা এবং পরীক্ষা নেওয়ার জন্য অস্থায়ী ভাবে ত্রিপল খাটিয়ে ব্যবস্থা করা হবে। পরে পঞ্চায়েত সমিতির তহবিলের টাকায় পাকাপাকি ব্যবস্থা হচ্ছে।’’
স্কুল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পূর্ব বিজয়বাটি গ্রামের কাছাকাছি কোনও হাইস্কুল নেই। গ্রামের প্রাথমিক স্কুলে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনার পরে প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরে হাইস্কুলে যেতে হত। এই পরিস্থিতিতে স্কুলছুটের সংখ্যা বাড়ছিল। পরিস্থিতি বদলাতে ২০০৮ সালে ওই মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রটি শুরু হয়। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জন্য সরকারি অনুমোদনে আলাদা দু’টি পাকা ঘর তৈরি হলেও স্কুল ভবনের জন্য কোনও ঘর ছিল না। প্রথম থেকেই স্থানীয় এক বাসিন্দার দানের জমিতে খড়ের চালের কুঁড়ে ঘরে চালু হয়েছিল পঠনপাঠন। পরে ছাত্রছাত্রী বেড়ে যাওয়ায় শিক্ষক-শিক্ষিকারা চাঁদা তুলে ইটের দেওয়াল, খড় ও অ্যাসবেস্টসের ছাউনি দেওয়া স্কুল ভবন তৈরি করেন। বর্তমানে ওই কেন্দ্রে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ১১০ জন। ৩ জন শিক্ষক ও এক জন শিক্ষিকা রয়েছেন। তাঁরা সাম্মানিক ভাতা পান।
নামখানার প্রত্যন্ত গ্রামের ওই স্কুল ভবনটি ভেঙে পড়ায় সঙ্কটে পড়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ, ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকেরাও। স্কুলে পড়াশোনা করতে পূর্ব বিজয়বাটি ছাড়াও উত্তর ও পশ্চিম বিজয়বাটি ও অমরাবতী গ্রামের ছেলেমেয়েরা আসে। আদিবাসী ও সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকার প্রায় সকলেই মৎস্যজীবী পরিবার। দুঃস্থ অভিভাবকেরা অনেক কষ্ট করে ছেলেমেয়েকে পড়াশোনা করার জন্য পাঠান। দূরের স্কুলে পাঠানোর মতো তাঁদের আর্থিক সার্মথ্যও নেই। বুলবুলের জেরে অনেকের ঘরবাড়ি ভেঙেছে। থাকা-খাওয়ারই ঠিক মতো বন্দোবস্ত নেই। তার উপরে বন্ধ পড়াশোনাও। এলাকার বাসিন্দা শেখ হাবিব, শেখ রহিমেরা জানান, অনেক কষ্ট করে ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাই। এখন যা অবস্থা স্কুলে যাওয়াই বন্ধ হয়ে গেল। সহকারী শিক্ষিকা নন্দিনী প্রামাণিক বলেন, ‘‘দিন কয়েক পরেই ছেলেমেয়েদের পরীক্ষা। এখন কোথায় বসিয়ে পরীক্ষা নেব বা নতুন করে কবে পঠনপাঠন শুরু করব— তা ভেবে আমরা অথৈ জলে পড়েছি। প্রতিদিন নিয়ম করে স্কুলে যাচ্ছি। আবার ফিরেও আসছি।’’