পরিদর্শন: মাতলা নদীর চরের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখছে সরকারি আধিকারিকদের দল। নিজস্ব চিত্র।
মাসখানেক আগে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নবান্ন থেকে বলেছিলেন, বেআইনি ভাবে চুরি যাচ্ছে বালি, পাথর। কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। প্রাকৃতিক সম্পদ নিয়ে অনিয়ম বরদাস্ত করা হবে না বলেও জানান তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরেও সর্বত্র পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়নি বলে অভিযোগ। সে কথাও অজানা নয় নবান্নের শীর্ষ কর্তাদের। দুই ২৪ পরগনায় বেআইনি বালি খাদানের পরিস্থিতি কী, খোঁজ নিল আনন্দবাজার
দিন কুড়ি ধরে শান্ত এলাকা। বড় বড় ট্রাকের আনাগোনা নেই। শ্রমিকদের হইচই শোনা যাচ্ছে না।
ক্যানিংয়ে মাতলা নদীর চরে গোটা ১৩ বেআইনি খাদান থেকে সারা বছর ধরে বালি তোলার কাজ চলে। সে বালি চলে যায় কলকাতা, দুই ২৪ পরগনা-সহ আশপাশের জেলায়। মূলত নিচু জমি, জলা জমি ভরাটের কাজে লাগে এই বালি। বেআইনি ভাবে যা তোলা হয় মাতলার চর থেকে। তবে ইদানীং কারবারে রাশ টানা গিয়েছে বলে জানাচ্ছেন সরকারি আধিকারিকেরা।
ক্যানিংয়ে মহকুমাশাসকের অফিসের নাকের ডগায় বছরের পর বছর ধরে এই বেআইনি কারবার চলছিল বলে অভিযোগ। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরে নড়ে বসে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলি। মঙ্গলবার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে আসেন সরকারি আধিকারিকদের একটি দল। মহকুমাশাসক আজহার জিয়ার নেতৃত্বে মহকুমা পুলিশ আধিকারিক, থানার আইসি, সেচ ও ভূমি সংস্কার দফতরের আধিকারিকেরা ছিলেন সেই দলে। এদিন খাদানে হানা দিয়ে সে ভাবে কিছু চোখে পড়েনি বলে দাবি করেছেন মহকুমাশাসক। তিনি বলেন, ‘‘আগে খাদানগুলি চললেও বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। সরকারি নির্দেশ
অমান্য করে খাদান চললে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
ক্যানিং ১ ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর সূত্রের খবর, ক্যানিংয়ে মাতলা নদীর চরে গোটা ১৩টি বালি খাদান আছে। কোনওটিরই বৈধ অনুমতি নেই। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সেখান থেকে বালি তুলে চড়া দামে বিক্রি করেন। বছর পাঁচেক আগে বারুইপুরে সংশোধনাগার তৈরির সময়ে একটি খাদানকে মাতলা নদী থেকে বালি তোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই অনুমতি দেখিয়েই বাকি খাদানগুলি থেকে বালি তোলার কাজ শুরু হয় বলে প্রশাসনে একটি সূত্রের খবর। সংশোধনাগারের কাজ শেষ হয়ে গেলেও সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে বালি তোলার কাজ চলতে থাকে। স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসন ও শাসকদলের নেতৃত্বের একাংশের হাত রয়েছে বলে এর আগে একাধিক বার অভিযোগ তুলেছেন বিরোধীরা। পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা অবশ্য সে কথা মানেননি।
বিজেপির দক্ষিণ ২৪ পরগনা বিজেপির পূর্ব সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সুনীপ দাস বলেন, ‘‘পুলিশ ও তৃণমূলের যৌথ আঁতাতের ফলেই বেআইনি এই বালি খাদান চলছে। মুখ্যমন্ত্রী সবই জানেন, তবুও মানুষকে বোকা বানানোর জন্য এ সব কথা বলছেন।”
ক্যানিং পশ্চিমের বিধায়ক পরেশরাম দাস বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরে সমস্ত খাদান বন্ধ আছে বলেই জানি। তবে যদি কেউ সরকারি নির্দেশ অমান্য করে বেআইনি ভাবে বালি খাদান চালায়, তার বিরুদ্ধে প্রশাসনকে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলব।’’