গৌতম দত্ত। নিজস্ব চিত্র।
কাজের সময় ছিল দুপুরের দিকে। কিন্তু সকালেই কাজে আসতে বলে অফিস থেকে ফোন গিয়েছিল। আর সেই কাজ করার সময়েই ক্রেনে থাকা লোহার অংশের ধাক্কায় ৩০ ফুট উপর থেকে নীচে পড়ে মৃত্যু হল এক ঠিকাকর্মীর। বৃহস্পতিবার সকালে, পশ্চিম বন্দর থানা এলাকার ঘটনা। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম গৌতম দত্ত (৪৮)। বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনার বজবজ থানা এলাকার অধর দাস রোডে। তিনি রেলের অধীনস্থ ওই সংস্থার ঠিকাকর্মী ছিলেন।
এ দিন বেলা ১১টা নাগাদ পশ্চিম বন্দর থানা এলাকার হাইড রোডের একটি কারখানার বে ওয়ানে ওই দুর্ঘটনা ঘটে। গুরুতর জখম অবস্থায় গৌতমকে উদ্ধার করে জোকা ইএসআই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে দুপুরে সেখানেই মারা যান তিনি।
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জেনেছে, গৌতম ওই সংস্থার রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগের ঠিকাকর্মী ছিলেন। এ দিন ওই সংস্থার নম্বর বে ওয়ানে প্রায় ৩০ ফুট উচ্চতার একটি অংশে দাঁড়িয়ে মেরামতির কাজ করছিলেন তিনি। সেই সময়ে ক্রেনের ট্রলিতে থাকা একটি লোহার অংশ সরানোর কাজ চলছিল। সেটি আচমকা গৌতমকে ধাক্কা মারে। আর তাতেই নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পেরে নীচে পড়ে যান তিনি। পুলিশ জানিয়েছে, ৩০ ফুট উপর থেকে সোজা সদ্যনির্মিত রেলওয়ে ওয়াগনের উপরে আছড়ে পড়েন গৌতম। তাতে গুরুতর জখম হন তিনি। পরে হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়।
এক পুলিশ অফিসার জানান, প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে, কাজ করার সময়ে গৌতমের প্রয়োজনীয় সুরক্ষার বন্দোবস্ত ছিল না। রাতেই মৃতের পরিবারের তরফে সংস্থার বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে পশ্চিম বন্দর থানায়। যার ভিত্তিতে পুলিশ গাফিলতিতে মৃত্যু-সহ একাধিক ধারায় অভিযোগ দায়ের করেছে অজ্ঞাতপরিচয় দায়িত্বপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে।
ওই সংস্থাটি রেল কর্তৃপক্ষের অধীন। দুর্ঘটনার পরে সেখান থেকে খবর পেয়ে হাসপাতালে যান গৌতমের স্ত্রী এবং মাধ্যমিক-উত্তীর্ণ ছেলে-সহ পরিবারের সদস্যেরা। পরে রাতে থানার সামনে গৌতমের শ্যালক পার্থ রায় অভিযোগ করেন, কারখানায় কাজ করার সময়ে ন্যূনতম নিরাপত্তাও এ দিন ছিল না। ৩০ ফুট উঁচুতে উঠে কাজ করলেও গৌতমের মাথায় এ দিন কোনও হেলমেট ছিল না।
ওই কারখানার তৃণমূল পরিচালিত কর্মী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ফারুক আজিম বলেন, ‘‘শ্রমিকদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলা হবে।’’ আর ওই সংস্থার এক আধিকারিক জানান, পুলিশকে সব রকম তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে। কী ভাবে ওই ঘটনা ঘটল, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সুরক্ষা সংক্রান্ত কোনও ত্রুটি থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মৃতের পরিবারকে সব রকম সহযোগিতা করা হবে। ঘটনার অন্তর্বিভাগীয় তদন্ত হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।