গাছের ডাল পড়ে লন্ডভন্ড দোকান। নিজস্ব চিত্র।
ফের যশোর রোডের পাশে থাকা প্রাচীন গাছের বড়সড় ডাল ভেঙে পড়ল সড়কে। ক্ষতিগ্রস্ত হল একটি দোকানঘর, বাইক। ঘণ্টাখানেক অবরুদ্ধ ছিল যশোর রোড। পুলিশ পৌঁছে ডাল কেটে রাস্তা পরিস্কার করে। রবিবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে পেট্রাপোল থানার ঠাকুর হরিদাস উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের কাছে যশোর রোডে।
এ দিনই সরকারি কর্মসূচিতে যোগ দিতে পেট্রাপোল বন্দরে এসেছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সরকারি কর্মসূচি শেষ করে সবে মাত্র শাহের হেলিকপ্টার আকাশে উড়েছে। পেট্রাপোল বন্দর এলাকা থেকে যশোর রোড ধরে ফিরতে শুরু করেছে ঝাঁকে ঝাঁকে গাড়ি। কোনও গাড়িতে পুলিশ কর্তা, পুলিশ কর্মী, সাংবাদিক, সরকারি অফিসার, সাধারণ মানুষ। ঝড় নেই, জল নেই— এই পরিস্থিতিতে আচমকাই ডাল ভেঙে পড়ে রাস্তায়।
যশোর রোডে পাশে থাকা ক্ষতিগ্রস্ত দোকানের মালিক শিখা দাস বলেন, ‘‘প্রচুর থার্মোকল, শোলা, খেলনা ভেঙেচুরে গিয়েছে। আমরা দোকানে থাকলেও অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছি।’’ গৃহবধূ মৌসুমি দাসের দুই শিশুপুত্র ওই দোকানেই খেলছিল। অল্পের জন্য তারাও রক্ষা পেয়েছে। মৌসুমি বলেন, ‘‘রাস্তার পাশে বাড়ি। ডাল ভেঙে পড়া নিয়ে সব সময়ে আতঙ্কে থাকি!’’
স্থানীয় বাসিন্দা এবং দোকানিরা জানালেন, ডাল ভেঙে পড়াটা দৈনন্দিন রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। জীবন হাতে নিয়ে চলাচল করতে হয়, দোকানে বসে ব্যবসা করতে হয়।
সম্প্রতি যশোর রোডের পাশে প্রাচীন গাছের একটি মোটা ডাল ভেঙে মৃত্যু হয়েছিল এক যুবকের। ঘটনাটি ঘটেছিল পেট্রাপোল সীমান্তে যশোর রোডে। ১৫ সেপ্টেম্বর বনগাঁ শহরে অভিযান সঙ্ঘের কাছে যশোর রোডে ডাল ভেঙে জখম হয়েছিলেন চার জন। সে দিন বৃষ্টির মধ্যে ডালটি ভেঙে পড়ে একটি ট্যাক্সির উপরে। গত কয়েক বছরে যশোর রোডে ডাল ভেঙে অনেক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। জখম হয়েছেন বহু মানুষ।
যশোর রোড ধরে বারাসত থেকে পেট্রাপোল সীমান্ত পর্যন্ত পথে সাম্প্রতিক সময়ে রহস্যজনক ভাবে বেশ কিছু গাছ মারা গিয়েছে। কেন গাছ মারা যাচ্ছে, তা জানতে এবং গাছগুলির রক্ষণাবেক্ষণ করতে অনুসন্ধান কমিটি গঠনের দাবি উঠেছে স্থায়ী স্তরে। বৃক্ষপ্রেমীদের অনেকে মনে করছেন, গাছগুলির মৃত্যুর পিছনে ষড়যন্ত্র থাকতে পারে। গাছ মরে যাওয়ায় ডালও মরে যাচ্ছে, শুকিয়ে যাচ্ছে। সেগুলি বিপজ্জনক ভাবে ঝুলে থাকছে। ঝড়-বৃষ্টিতে ভেঙে পড়ছে।
পেট্রাপোল বন্দর এলাকায় রোজ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের কারণে শ’য়ে শ’য়ে ট্রাক আসে। পাসপোর্ট-ভিসা নিয়ে দু’দেশের মানুষ যাতায়াত করেন যশোর রোড ধরে। ঝুঁকি আছে সকলেরই।
এ দিন পেট্রাপোল সীমান্তে গিয়ে দেখা গেল, এখনও অনেক গাছে প্রচুর ডাল বিপজ্জনক ভাবে ঝুলে রয়েছে। সীমান্ত-বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত মানুষজন জানালেন, জীবন হাতে নিয়ে রোজ তাঁদের যাতায়াত করতে হচ্ছে।
জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের বনগাঁ মহকুমার সহকারী বাস্তুকার স্নেহাশিস সিকদার বলেন, ‘‘মরা, শুকনো ডাল কাটার কাজ চলছে পেট্রাপোল সীমান্ত এলাকায়। সেখান থেকে কাটতে কাটতে বনগাঁ শহরের দিকে আসা হবে। ঝড়-বৃষ্টির জন্য মাঝে কাজ করা যায়নি। এখন আবার শুরু হয়েছে।’’