ফাইল চিত্র।
গত কয়েক বছরে নিজেদের দেশে সুন্দরবন ও বাঘ সংরক্ষণের কাজে সাফল্য পয়েছে বাংলাদেশের একঝাঁক পড়ুয়া। এ বার এ দেশের পড়ুয়াদের সঙ্গে সেই অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে দু’দিনের সফরে ভারতে ঘুরে গেল তারা। শুক্রবার গোসাবার দয়াপুরে একটি স্কুলের পড়ুয়াদের সঙ্গে দেখা করে বন ও বন্যপ্রাণ সংরক্ষণের নানা দিক নিয়ে কথা বলে বাংলাদেশের মহম্মদ সাইমন, সুরজিৎ, সিন্থিয়ারা।
সুন্দরবন ও বাঘ রক্ষায় গত কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্য কাজ করেছে বাংলাদেশ। তৈরি হয়েছে ভিপিআরটি বা ভিলেজ প্রাইমারি রেসপন্স টিম। এই টিম গ্রামে গ্রামে ‘বাঘবন্ধু’ নির্বাচন করেছে। যারা সুন্দরবন ও বাঘ রক্ষার ব্যাপারে সচেতন করছে গ্রামের সাধারণ মানুষকে। গ্রামে যদি বাঘ ঢুকে পড়ে, তা হলে কী করণীয়, কী ভাবে বন দফতরকে দ্রুত খবর দিয়ে বাঘটিকে উদ্ধার করে আবার বনে ফিরিয়ে দিতে হবে— সে সব নিয়ে কাজ করছে ‘বাঘবন্ধুরা।’ ইতিমধ্যেই এই ভিপিআরটি তাদের কাজের জন্য বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্বীকৃতি ‘বঙ্গবন্ধু’ পুরস্কার পেয়েছে। ভিপিআরটির সাফল্যের পরে ২০১৬ সাল থেকে সুন্দরবন রক্ষার কাজে উৎসাহ দেওয়া শুরু হয় স্কুল পড়ুয়াদের। সুন্দরবন লাগোয়া স্কুলের পড়ুয়াদের নিয়ে টাইগার স্কাউট দল তৈরি করা হয়। যারা নিজেদের স্কুলে ও আশপাশের স্কুলে গিয়ে সহপাঠী ও অন্যান্য পড়ুয়াদের এ বিষয়ে সচেতনতার কাজ শুরু করে। এই কাজে যথেষ্ট সফলও হয় তারা।
নিজেদের সাফল্য তুলে ধরে পড়শি দেশের পড়ুয়াদের সুন্দরবন ও বাঘ সংরক্ষণের প্রতি আকৃষ্ট করতে আট জন টাইগার স্কাউট-সহ দশ জনের একটি দল এসেছিল গোসাবায়। দয়াপুর পি সি সেন উচ্চ বিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলে বাংলাদেশি পড়ুয়ারা। কী ভাবে নিজেদের দেশে তারা বাঘ ও সুন্দরবনকে রক্ষা করছে, তা তুলে ধরে তারা।
বাংলাদেশের টাইগার স্কাউটের সদস্য মহম্মদ সাইমন বয়াদি বলেন, “সুন্দরবন না বাঁচলে আমরাও বাঁচব না। সুন্দরবনকে রক্ষা করতে গেলে বাঘকে রক্ষা করতে হবে। তাই আমরা স্কুল পড়ুয়ারা এই উদ্যোগে সামিল হয়েছি। গত কয়েক বছরে এই কাজে সাফল্যও এসেছে। তাই ভারতের সুন্দরবন ঘেঁষা এলাকার পড়ুয়াদেরও এই কাজে উদ্বুদ্ধ করতে এসেছি।’’ দয়াপুর স্কুলের একাদশ শ্রেণির পড়ুয়া সুদেষ্ণা মণ্ডলের কথায়, “ওদের থেকে অনেক কিছু শিখলাম। আমরাও যাতে সুন্দরবনকে রক্ষা করতে পারি, সেই চেষ্টা করব।’’ রজতজুভিলি এলাকার একটি স্কুলেও যায় বাংলাদেশের দল।
দু’দেশের পড়ুয়াদের এই মেলবন্ধনের মূল উদ্যোক্তা, ওয়াইল্ড লাইফ ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়া। তাদের সঙ্গেই উদ্যোগে সামিল ছিল সুন্দরবনের উন্নয়নে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে চলা জয়নগর নিমপীঠের লোকমাতা রানি রাসমণি মিশন ও ওয়াইল্ড টিম বাংলাদেশ। ওয়াইল্ড লাইফ ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়ার কো-অর্ডিনেটর কৃষ্ণেন্দু বসাক বলেন, “আমরা দীর্ঘ দিন ধরেই বন দফতরের সহযোগিতায় সুন্দরবন ও বাঘ বাঁচানোর কাজ করে চলেছি। যেহেতু সুন্দরবন ভারত ও বাংলাদেশ জুড়ে বিস্তৃত, তাই দু’দেশের পড়ুয়াদেরই এই কাজে উদ্বুদ্ধ করার জন্য এই উদ্যোগ।”