এ ভাবেই থাকছেন বহু পরিবার। বাসন্তীর হোগল ডুগুরি গ্রামে। নিজস্ব চিত্র।
দু’বেলা দু’মুঠো ভাত জোগাড় করতেই হিমসিম অবস্থা। মাথার উপর ছাদটুকুও নেই অনেকের। এমনই পরিস্থিতি বাসন্তীর ফুলমালঞ্চ, কাঁঠালবেড়িয়া, আমঝাড়া, নফরগঞ্জ পঞ্চায়েতের একাধিক গ্রামে। দারিদ্র এলাকার মানুষের নিত্যসঙ্গী। অভিযোগ, উন্নয়নের ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত তাঁরা।
সম্প্রতি অতিমারি পরস্থিতিতে আরও খারাপ হয়েছে গ্রামের মানুষের অবস্থা। অতিবৃষ্টিতে গ্রামে চাষের হালও খারাপ। কার্যত রোজগার বন্ধ হয়ে গিয়েছে বহু মানুষের। এলাকার শ’য়ে শ’য়ে মানুষ ভিন্ রাজ্যে কাজ করতেন। কিন্তু অতিমারিতে কাজ হারিয়ে অনেকেই গ্রামে ফিরে এসেছেন। এলাকায় নদী রয়েছে। নদী থেকে মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করতে পারলেও দু’টো পয়সা আসে ঘরে। কিন্তু মাছ ধরার সরঞ্জাম কেনার সামর্থ্যও নেই কারও কারও। চরম দারিদ্রকে সঙ্গী করেই দিনের পর দিন কাটছে বাসন্তীর মনসাখালি খাসচক, কলাহাজরা ৯ নম্বর পাড়া, চাতরাখালি ভূঁইয়াপাড়া, হোগলডুগুরির মতো গ্রামের মানুষদের। অভাবের জেরে কোনও কোনও দিন কাটছে গেঁড়ি-গুগুলি খেয়েই।
ফুলমালঞ্চ পঞ্চায়েতের মনসাখালি খাসচক গ্রামে ঢুকলেই এলাকার মানুষের কষ্টের ছবিটা স্পষ্ট দেখা যায়। এখনও অধিকংশ বাড়িই কাঁচা। সব বাড়িতে শোচালয় নেই। অসুস্থ হলে কাছাকাছি গ্রামীণ হাসপাতালে যেতেই পেরোতে হয় প্রায় ২০ কিলোমিটার পথ। এসবের পাশপাশি রয়েছে মানুষের অভাব। স্থানীয়রা জানান, এবার অতিবৃষ্টির জেরে সেভাবে চাষ হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে পঞ্চায়েতে অচলবস্থা চলছে। ফলে একশো দিনের কাজও মিলছে না। গ্রামের বহু মানুষই ভিন্ রাজ্যে কাজ করতেন। অতিমারি
পরিস্থিতিতে কাজ হারিয়ে ফিরে আসেন। কেউ কেউ আবার কাজে চলে গিয়েছেন। তবে অনেকেই যেতে পারেননি। গ্রামের বাসিন্দা নরেশ সর্দার, সইদুল পিয়াদারা জানান, ভিন্ রাজ্যে যাওয়ার জন্যও তো ট্রেনের টিকিট, হোটেল খরচ বাবদ কিছু টাকার দরকার। কিন্তু সেই টাকাটাও কাছে নেই। ফলে গ্রামেই কোনও মতে আধপেটা খেয়ে দিন গুজরান করা ছাড়া উপায় নেই।
রামচন্দ্রখালি পঞ্চায়েতের হোগলডুগুরি গ্রামে গিয়ে দেখা গেল বহু মানুষের মাথার উপর ছাদের ব্যবস্থাই নেই। নদীর পাড়ে ছাউনি বেঁধে কোনওমতে বাস করছেন। ছাউনির বাসিন্দা কমলি সর্দার, মিনতি সর্দাররা জানান, কাজ নেই। রোজগার বলতে নদীতে মাছ ধরে বিক্রি করে পাওয়া সামান্য পয়সা। তা দিয়ে হয়ত নুনটা জোটে, কিন্তু মূল্যবৃদ্ধির বাজারে তেল-মশলা মেলে না। রেশন থেকে চালটা মেলে বলে তাও কোনওরকমে ভাতটুকু জুটছে। তাও কোনও কোনও দিন গেঁড়ি-গুগলি খেয়েই কাটাতে হয়। কমলি বলেন, “আমাদের তো কেউ দেখে না। দু’টো চাল পাই রেশনে, তাই দিয়েই কোনোরকমে চলছে।”
বাসন্তীর বিধায়ক শ্যামল মণ্ডলের অবশ্য দাবি, “গোটা বাসন্তী জুড়েই উন্নয়নের কাজ জোর কদমে চলছে। যেখানে যেখানে অসুবিধা আছে, আমরা সেটা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। যাতে দ্রুত এলাকার মানুষের সমস্যার সমাধান হয়, সেদিকে নজর রাখা হচ্ছে।” বিডিও সৌগত সাহা বলেন, “কিছু এলাকায় অতি দরিদ্র মানুষ বাস করেন ঠিকই। কিন্তু সরকার নানা ভাবে তাঁদের সাহায্য করছে। এরপরেও কেউ সমস্যায় থাকলে, আমাকে জানালে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করব।” বাসন্তী পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কামালউদ্দিন লস্কর বলেন, “তিন চারটে গ্রাম পঞ্চায়েতের বেশ কিছু গ্রামের মানুষ সত্যিই কষ্টে রয়েছেন। অনেকেরই মাথা গোঁজার মতো বাড়িঘর নেই। শৌচাগার নেই। আমরা চেষ্টা করছি এই সমস্যা দ্রুত সমাধানের।”