প্রতীকী ছবি।
এলাকায় ঘুরছে হ্যান্ডবিল। তাতে লেখা, জন্মমৃত্যুর শংসাপত্র কিংবা তফসিলি জাতি-উপজাতির শংসাপত্র পাওয়া যাবে। কে দেবে? খোঁজ নিয়ে জানা গেল, তিনি এক জন হাতুড়ে চিকিৎসক। চেম্বার থেকেই টাকা ফেললে মিলছে শংসাপত্র, এমনই দাবি ডাক্তারবাবুর!
ভাঙড়ের বড়ালি তাঁতিপাড়ার হাতুড়ে চিকিৎসক রমজান আলি বেশ কিছু দিন ধরে এই কারবার ফেঁদে বসেছেন। শংসাপত্র দেওয়া নিয়ে বিশেষ লুকোছাপা করছেন না। স্পষ্টই বলছেন, ‘‘হাজার আড়াই টাকা লাগবে। কাগজপত্র সব তৈরি হয়ে যাবে।’’
পঞ্চায়েত থেকে কাজ না হওয়ায় অনেকে আসছেন চেম্বারে শংসাপত্র তৈরি করতে। এ দিন দেখা গেল, নিজের চেম্বারের টেবিলে ভাঙড় ১ ব্লকের প্রাণগঞ্জ পঞ্চায়েত-সহ বেশ কিছু পঞ্চায়েত প্রধানের সই করা, সিলমোহর দেওয়া শংসাপত্র, লেডারহেড ডাঁই করে রাখা।
কাজটা কি বেআইনি হচ্ছে না? যদি পঞ্চায়েত থেকে শংসাপত্র না দেয়, তা হলে আপনি দিচ্ছেন কী করে?
ডাক্তারবাবুর গলায় আত্মবিশ্বাস। বললেন, ‘‘আপনারা গেলে পঞ্চায়েত দেবে না। টাকায় সব কিছু হয়। আমরা ভিতর থেকে করিয়ে নেব।’’ কথা বলতে বলতে একটি জন্মের শংসাপত্র বের করলেন ডাক্তারবাবু। কিউআর কোড নিজের মোবাইলে স্ক্যান করে এক গাল হেসে বললেন, ‘‘দেখুন, সব কেমন ঠিকঠাক আছে।’’
রমজানের কাছে শংসাপত্র বানানোর অছিলাতেই যাওয়া হয়েছিল। ডাক্তারবাবু জানতে চাইলেন, ‘‘এ বার বলুন, আপনার কী দরকার।’’
এ কথা সে কথার পরে বেরিয়ে আসা গেল। ‘পরে আসব’— জানিয়ে এলাম। পরে কথা হল ভাঙড় ১ বিডিও সৌগত পাত্রর সঙ্গে। ঘটনা শুনে তিনি তাজ্জব। বললেন, ‘‘এ ভাবে কেউ টাকার বিনিময়ে সরকারি শংসাপত্র দিতে পারে না। বিষয়টি আমরা খোঁজ নিয়ে দেখছি। সেই মতো ব্যবস্থা নেব।’’ এর সঙ্গে অন্য কোনও বেআইনি চক্রের হাত থাকতে পারে বলে মনে করছেন বিডিও।
কিন্তু প্রধানের সই করা, পঞ্চায়েতের সিলমোহর দেওয়া কাগজপত্র কী করে পৌঁছল চেম্বারে?
প্রাণগঞ্জ পঞ্চায়েতের প্রধান সামসুল মোল্লা বলেন, ‘‘মানুষের সুবিধার জন্যই অনেক সময়ে আমার স্বাক্ষর করা শংসাপত্র উপপ্রধান বা পঞ্চায়েত সদস্যদের কাছে রাখা থাকে। কাজের চাপে অনেক ক্ষেত্রে কাউকে কাউকে ফাঁকা শংসাপত্র দিয়েও দেওয়া হয়। উপভোক্তাদের তা নিজেরা পূরণ করে নেওয়ার কথা। কিন্তু এখানে যা চলছে শুনছি, এমন তো হওয়ার কথা নয়!’’
রমজানের দাবি, সরকারি নিয়মে নাকি ১৯৮০ সাল থেকে ৪০ বছর বয়স্ক মানুষের জন্ম-মৃত্যুর শংসাপত্র দেওয়া যায়। কিন্তু এ সব শংসাপত্র নিতে গেলে হাসপাতাল বা চিকিৎসকের শংসাপত্রও তো লাগে। রমজান বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত থেকে সরকারি শংসাপত্র আমরা বের করে নেব। কাগজপত্র আমরাই তৈরি করব।’’ ভাঙড় ২ ব্লকের শানপুকুর পঞ্চায়েতের প্রধান তানিয়া বিবি বলেন, ‘‘মানুষের সুবিধার কথা ভেবে অনেক ক্ষেত্রে পাঁচ-ছ’মাসের পুরনো তারিখের শংসাপত্রও দেওয়া হয়। কিন্তু এর থেকে পুরনো কোনও শংসাপত্র আমরা দিই না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, বেশ কিছু দিন ধরে ছেলের জন্মের শংসাপত্রের জন্য ব্লক, পঞ্চায়েত অফিসে ঘুরছিলেন ভাঙড়ের এক ব্যক্তি। কিন্তু পাননি। তিনি হ্যান্ডবিল পেয়ে রমজানের খোঁজ জানেন। টাকা দিয়ে শংসাপত্র পাওয়া যাবে জেনে এসেছেন। বিশ বছর আগে মৃত্যু হয়েছিল এক ব্যক্তির কাকার। তিনিও জানালেন, রমজানকে টাকা দিয়ে মৃত্যুর শংসাপত্র বের করবেন ভাবছেন। প্রতি দিনই চেম্বারে ভিড় জমছে। বারুইপুর মহকুমার উপ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক মৃদুল ঘোষ বলেন, ‘‘এ ভাবে কাউকে জন্ম-মৃত্যুর শংসাপত্র দেওয়া যায় না। বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে। সাধারণত স্বাস্থ্য দফতর থেকে পুরনো শংসাপত্র কখনওই দেওয়া হয় না।’’