ইদ, দুর্গাপুজো এক মাঠেই 

এলাকাটি গোবরডাঙা পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের গড়পাড়া। বহু বছর ধরেই এখানে সম্প্রীতির ইদ ও দুর্গাপুজো দেখে আসছেন সাধারণ মানুষ।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

গোবরডাঙা  শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০১৯ ০১:৫৫
Share:

প্রতীকী ছবি

ছোট মাঠে ধারে ব্রিটিশ আমলে তৈরি মসজিদ। পাশেই তৈরি হয়েছে দুর্গাপুজোর মণ্ডপ। পুজোর আয়োজনে সামিল মুসলিম ধর্মের মানুষজনও। ইদের সময়ে গোটা মাঠ তাঁদের জন্যই ছেড়ে দেওয়া হয়। আবার পুজোর সময়ে এই মাঠই গমগম করে দর্শনার্থীদের ভিড়ে। মসজিদের পিছনে খ্রিস্টান সম্প্রদায় মানুষের বাড়ি রয়েছে। সেখানে প্রতি বছর ২৫ ডিসেম্বর ঘটা করে পালন করা হয়। সব মিলিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এ এক আশ্চর্য মেলবন্ধন।

Advertisement

এলাকাটি গোবরডাঙা পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের গড়পাড়া। বহু বছর ধরেই এখানে সম্প্রীতির ইদ ও দুর্গাপুজো দেখে আসছেন সাধারণ মানুষ। গোবরডাঙার পুরপ্রধান সুভাষ দত্ত বলেন, ‘‘সম্প্রীতির এমন ছবি বহু বছর ধরেই আমরা দেখে আসছি। বর্তমানে সময়ে যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’’

মসজিদের পাশে মাঠে আছে ইয়ংস্টার ক্লাবের ঘর। ক্লাবের পরিচালনায় ওই মাঠে দুর্গাপুজোর আয়োজন করা হয়। ক্লাবের সম্পাদক মলয় চৌধুরী বলেন, ‘‘ইদে যেমন আমরা ওঁদের সহযোগিতা করি, তেমনই দুর্গাপুজোর আয়োজনে ওঁরাও আমাদের পাশে থাকেন। পুজো কমিটির মধ্যেও মুসলিম সম্পদায়ের যুবকেরা সামিল হন।’’ রাজা গাজি, রাকেশ মণ্ডল, সাহেব মণ্ডলের মতো মুসলিম যুবকেরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুজোর বিল কাটা, অর্থ সংগ্রহ, প্রতিমা আনা সব কাজ একম সঙ্গে করছেন। গড়পাড়া মসজিদ কমিটির সম্পাদক আবু বক্কর জানালেন, ১৯৬৪ সালে সাম্প্রদায়িক অশান্তির সময়ে বহু মুসলিম পরিবার এখান থেকে চলে গিয়েছিলেন। কিছু পরিবার থেকে গিয়েছিল। মসজিদ দীর্ঘ দিন জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে ছিল। হিন্দু ধর্মের লোকজনই ভরসা দিয়েছিলেন মসজিদ ব্যবহার করতে। পরবর্তী সময়ে মসজিদ সংস্কারের সময়ে হিন্দুরাও এগিয়ে আসেন।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ক্লাবটি ১৯৬৫ সালে তৈরি হয়। তখন অবশ্য পুজো হত অন্যত্র। মসজিদের জমিটা এক সময়ে জবরদখল করার চেষ্টা হয়েছিল। তখন মুসলিম ধর্মের মানুষেরা সেখানে ক্লাব ঘর করতে বলেছিলেন। দুর্গাপুজো করতেও অনুরোধ করেছিলেন। বাসিন্দারা জানালেন, যে বছরগুলিতে দুর্গা পুজোর ঠিক আগে ইদ পড়ে, সে সময়ে ইদের জন্য মণ্ডপ তৈরির কাজও সাময়িক বন্ধ রাখা হয়। ইদ মিটে গেলে ফের মণ্ডপ তৈরির কাজ দ্রুততার সঙ্গে শুরু করা হয়। যেমনটা হয়েছিল ২০১৭ সালে।

ইদের আগে পুলিশের তরফে থানায় দুই সম্প্রদায়ের লোকজনকে বৈঠকে ডাকা হয়। সকলেই জানিয়ে দেন, চি‌ন্তার কোনও কারণ নেই। সব শান্তিতেই মিটবে।

বাবরি মসজিদ ভেঙে পড়ার পরে দেশের নানা প্রান্তে অশান্তি ছড়ালেও এখানে সেই উত্তাপ পৌঁছয়নি। আবু বক্কর বলেন, ‘‘তখন এখানে মুসলিম পরিবারের বসবাস আরও কম ছিল। হিন্দু ভাইয়েরাই আমাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন, মসজিদ রক্ষায় দায়িত্ব তাঁদের।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement