দুর্ঘটনাস্থল। তাপস হালদার (ইনসেটে)। —নিজস্ব চিত্র।
পথ দুর্ঘটনায় ফের জোড়া মৃত্যু বনগাঁ মহকুমায়।
মঙ্গলবার রাতে বাগদার রামনগরের দরগাতলায় বনগাঁ-বয়রা সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ট্রাকের পিছনে ধাক্কা মারে একটি মোটরবাইক। মৃত্যু হয় বাইক আরোহী তাপস হালদার ওরফে সোনু (৩৫) এবং তাঁর ছেলে রনির (৭)। ওই বাইকের আরও দুই সওয়ারি, তাপসের স্ত্রী অপর্ণা এবং তাঁর শ্যালিকা স্বস্তিকা রায় গুরুতর জখম হন। তাঁদের বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এই নিয়ে গত ১৫ দিনে মহকুমায় সাত জনের মৃত্যু হল। জখম হয়েছেন বেশ কয়েকজন।
ফের দুর্ঘটনায় প্রাণহানির জেরে সাধারণ মানুষ পথ নিরাপত্তার দাবি তুলেছেন। সরব বিরোধী দলগুলিও। পুলিশের দাবি, পথচারী ও গাড়িচালকদের সচেতন করতে নিয়মিত কর্মসূচি পালন করা হয়। সাধারণ মানুষকেও সচেতন হতে হবে বলে মনে করছেন পুলিশকর্তারা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রামনগরের বাসিন্দা তাপস কর্মসূত্রে উত্তরপ্রদেশে থাকতেন। কালীপুজো উপলক্ষে বাড়ি এসেছিলেন। মঙ্গলবার পুজো দেখতে বেরিয়ে তিনি মেহেরানি এলাকায় শ্বশুরবাড়িতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে স্ত্রী, শ্যালিকা ও ছেলেকে বাইকে নিয়ে তিনি বনগাঁ-বয়রা সড়ক ধরে ফিরছিলেন। কারও মাথায় হেলমেট ছিল না। দরগাতলায় ওই দুর্ঘটনায় বাইক থেকে সকলেই ছিটকে পড়েন। তাঁদের বাগদা গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক তাপস ও রনিকে মৃত বলে জানান।
অপর্ণার মায়ের আক্ষেপ, ‘‘মেয়ের পরিবারটা শেষ হয়ে গেল। কাকে নিয়ে বাঁচবে!’’
মহকুমা জুড়ে একের পর এক দুর্ঘটনার কারণ কি?
সাধারণ মানুষের অভিজ্ঞতা বলছে, যত্রতত্র ‘বেআইনি’ পার্কিং। সে সাইকেল, বাইক হোক বা ট্রাক। তা ছাড়া, সড়কের একাংশ দখল করে এক শ্রেণির ব্যবসায়ীর ইমারতি মালপত্র ফেলে রাখার জন্যেও দুর্ঘটনা ঘটছে। দিন-রাতে বেপরোয়া গতিতে বাইক চলাচল বন্ধ হয়নি। অনেক বাইক আরোহী রেষারেষিতেও মাতেন। তাঁদের মধ্যে অনেকে আবার নেশাগ্রস্ত অবস্থায় বাইক চালান। নিয়ন্ত্রণহীন ভাবে ট্রাক চলাচল করে। সর্বোপরি, পুলিশের নজরদারির অভাবকেও দুর্ঘটনার বড় কারণ বলে চিহ্নিত করেছেন অনেকে।
তবে, বাইক আরোহী এবং গাড়িচালকদের একাংশের অভিযোগ, পুলিশ রাস্তায় ধরপাকড়ের নামে জুলুম করে। টাকা তোলে। বিশেষ করে বাইক ধরার নামে হেনস্থা করা হয়। পুলিশকে এড়াতে বাইক আরোহীদের একাংশ জোরে বাইক চালান। ফলে, অনেক সময় তাঁরা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়ছেন।
বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি দেবদাস মণ্ডলের অভিযোগ, ‘‘দুর্ঘটনা কমাতে পুলিশ প্রশাসন সম্পূর্ণ উদাসীন। গাড়ি ধরার নামে টাকা তোলাই তাদের লক্ষ্য। এমনকি, পুলিশের গাড়ির ধাক্কায় মানুষ মারাও যাচ্ছেন। মানুষকেও সচেতন হতে হবে।’’ বনগাঁর সিপিএম নেতা পীযূষকান্তি সাহা বলেন, ‘‘মহকুমা জুড়ে যান নিয়ন্ত্রণের যে ব্যবস্থা থাকা উচিত, তা থাকে না। যতদিন এই প্রশাসন থাকবে, আরও মানুষের প্রাণ যাবে।’’