Crossfire

Afghanistan crisis: ‘দেখলাম, মার্কিন সেনা গুলি ছুড়তে শুরু করল’

এ পর্যন্ত সব ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু বিমানবন্দরে এসে হতবাক কপিল। সোমবার তিনি ফিরেছেন দেশের বাড়িতে।

Advertisement

নির্মল বসু 

বাদুড়িয়া শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০২১ ০৭:১০
Share:

কপিল কাঞ্জিলাল। নিজস্ব চিত্র

সরাসরি রাজনৈতিক অস্থিরতা, যুদ্ধের সাক্ষী থাকতে হয়নি। কিন্তু আফগানিস্তান ছাড়ার সময়ে কাবুল বিমানবন্দরে এসে যে দৃশ্য দেখেছিলেন, সে দৃশ্য ভুলতে পারছেন না কপিল কাঞ্জিলাল।

Advertisement

বাদুড়িয়ার চাতরা পঞ্চায়েতের সলুয়া গ্রামের বাসিন্দা কপিল কয়েক মাস আগে চাকরি নিয়ে গিয়েছিলেন কাবুলে। সেখানে বিমানবন্দরে মার্কিন সেনাকে খাবার পরিবেশনের কাজ পেয়েছিলেন। তালিবান দেশের দখল নেওয়ার পরে বাড়ি ফিরতে চেয়ে সকলের মতোই তখন দিশেহারা কপিল। মার্কিন সেনাই তাঁদের দেশে ফেরানোর আশ্বাস দেয়। সেনার সঙ্গেই বিমানবন্দরে আসেন কপিল ও তাঁর কয়েকজন সহকর্মী।

এ পর্যন্ত সব ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু বিমানবন্দরে এসে হতবাক কপিল। সোমবার তিনি ফিরেছেন দেশের বাড়িতে। জানালেন, মার্কিন সেনা তাঁদের কাতারে নিয়ে যাবে বলে বিমানবন্দরে আনে। সেখানে অন্তত হাজার দশেক মানুষের ভিড় তখন। কোলেকাঁখে বাচ্চাদের নিয়ে মহিলা-পুরুষেরা ছোটাছুটি করছেন। ফেন্সিং ভেঙে সকলে ভিতরে ঢুকতে চান। তালিবানের হাত থেকে প্রাণ বাঁচাতে বিমান ধরে দেশ থেকে পালাতে মরিয়া সকলে।

Advertisement

কপিল বলেন, ‘‘এত মানুষের ভিড় সামাল দিতে পারছিল না সেনা। হুড়োহুড়ি হচ্ছিল। একটা ফেন্সিং তখন ঠেলে ভেঙে দিয়েছে জনতা। আর একটা ভাঙতে পারলেই গোটা ভিড়টা ঢুকে পড়বে বিমানবন্দরের ভিতরে। চরম অব্যবস্থা। অনেকক্ষণ ধরে সেনাকর্মীরা বন্দুক উঁচিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। তাতে লাভ না হওয়ায় এক সময়ে দেখলাম, গুলি চালাতে শুরু করেছে সেনা। মাটি লক্ষ্য করে এবং শূন্যে পর পর গুলি ছুড়ছে।’’ কপিলের কথায়, ‘‘সেনা শিবিরে থাকার সুবাদে এর আগে গোলাগুলির শব্দ শুনেছিলাম। প্রথমবার চোখে দেখলাম।’’ তিনি জানান, গুলি চলতেই হুড়োহুড়ি আরও বেড়ে গেল। প্রাণভয়ে যে যে দিকে পারে দৌড়তে শুরু করেছে। অনেকে পড়ে গেল মাটিতে। তার উপর দিয়েই ছুটে চলে গেল কত লোক।

কপিল স্নাতক হওয়ার পরে একাধিক পরীক্ষা দিয়েছেন। বিশেষ লাভ হয়নি। একটি সংস্থার হয়ে কাবুল বিমানবন্দরের কাছে মার্কিন সেনাদের শিবিরে খাবার পরিবেশনের কাজের খোঁজ মেলে। তাতে রাজি হয়ে যান কপিল। কিন্তু সম্প্রতি তালিবানের উত্থানের পরে বাড়ি ফিরে আসার কথা ভাবেন।

কাবুল বিমানবন্দরে অব্যবস্থার ছবি বাড়িতে টেলিভিশনের পর্দায় দেখেছেন তাঁর বাবা-মা। খাওয়া-দাওয়া কার্যত ভুলে গিয়েছিলেন ক’টা দিন। ছেলে যতক্ষণ না বাড়ি ফিরছে, স্বস্তি পাচ্ছিলেন না। নিয়মিত ফোনে লাইনও পাওয়া যাচ্ছিল না। ফলে কথা বলতে পারছিলেন না ছেলের সঙ্গে। উদ্বেগ আরও বাড়ছিল।

মঙ্গলবার ছেলের ফোন পেয়ে খানিকটা নিশ্চিন্ত হন। কপিল জানান, মার্কিন সেনার সঙ্গে নিরাপদে কাবুল থেকে কাতারে পৌঁছেছেন। তার এক সপ্তাহ পরে, সোমবার রাতে বাড়ি ফিরেছেন কপিল।

মা অঞ্জু বলেন, ‘‘ছেলেকে সর্বক্ষণ মার্কিন সেনারা ঘিরে থাকত বলে যুদ্ধের আঁচ বুঝতে পারেনি। কিন্তু এ দিকে বসে আমরা টিভিতে যা দেখছি, তাতে ভয়ে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসত।’’

অঞ্জু চান না, ছেলে আর ফিরুক আফগান মুলুকে। তিনি বলেন, ‘‘দেশের ছেলেমেয়েরা যাতে দেশেই কাজ পায়, সরকারের কাছে সেটুকুই আবেদন।’’ তবে কপিলের কথায়, ‘‘স্থানীয় ভাবে চাকরি-বাকরির সমস্যা তো আছেই। তাই কোনও সংস্থার সঙ্গে চুক্তি যদি ঠিকঠাক থাকে আর আমাদের ঠিকঠাক নিরাপত্তা দেওয়া হয়, তা হলে ফের আফগানিস্থানে যেতে আমার আপত্তি নেই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement