পুকুরে ঝাঁপ দিয়ে মা-শিশুকে বাঁচিয়ে নায়ক নারিয়েল-পানিওয়ালা

সামান্য সময়ের জন্য হতবাক হয়ে পড়েন তিনি। সম্বিৎ ফিরতেই দেখেন, সামনে পুকুরে তলিয়ে যাচ্ছে একটি বাচ্চা মেয়ে এবং এক মহিলা।

Advertisement

নির্মল বসু

স্বরূপনগর শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৯ ০১:৩৩
Share:

সাহসী: প্রতিদিনের মতোই ডাব বেচায় মন দিয়েছেন সৌমিত্র। নিজস্ব চিত্র

একটা বিকট শব্দ। আর তারপরেই প্রবল আর্তনাদ।

Advertisement

সামান্য সময়ের জন্য হতবাক হয়ে পড়েন তিনি। সম্বিৎ ফিরতেই দেখেন, সামনে পুকুরে তলিয়ে যাচ্ছে একটি বাচ্চা মেয়ে এবং এক মহিলা।

হাত থেকে ডাব, দা ফেলে জলে ঝাঁপ মারেন বছর তিরিশের সৌমিত্র সরকার। পাশের লাগোয়া দোকানের মাচা ভেঙে ততক্ষণে পুকুরে তলিয়ে গিয়েছে শিশুটি। হাবুডুবু খাচ্ছেন মহিলা। সৌমিত্র জামা ধরে টেনে তোলেন বছর ছয়েকের শিশুটিকে। তাকে পাড়ে রেখে ফের জলে ঝাঁপ দেন। হাবুডুবু খাওয়া মহিলা তখন জলে তলিয়ে গিয়েছেন। শাড়ি ধরে তাঁকে যখন পাড়ে তুলছেন, সৌমিত্র দেখেন জলে পড়ে চিৎকার করছেন শতাধিক মানুষ। সৌমিত্রের কথায়, ‘‘জলাশয় তো নয়, গাঙ্গুলি পুকুর তখন যেন মরণকূপ। পাশের রাস্তায় তখন বাঁচার জন্য হুড়োহুড়ি করছেন হাজার হাজার মানুষ। এই অবস্থায় চুপচাপ পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকি কী করে? ফের পুকুরে ঝাঁপ মারলাম।’’

Advertisement

সৌমিত্র জানালেন, জনা বারো মানুষকে পুকুর থেকে টেনে তুলেছেন। ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পরে শুক্রবার সকালেও ঘোর কাটেনি কচুয়া গ্রামের বাসিন্দা সৌমিত্রর। তাঁর অস্থায়ী ছাউনির দোকানের চারদিকে যেন ধ্বংসস্তূপ। একের পর এক দোকানের কাঠামো ভেঙে পড়ে রয়েছে।

বৃহস্পতিবার রাতে যেখানে বসে ডাব বেচছিলেন, শুক্রবার সকালে সেখানেই স্ত্রীকে নিয়ে ডাব বেচছিলেন সৌমিত্র। স্ত্রী শিল্পী জানালেন, তাঁর স্বামীর জন্য এতগুলো মানুষের প্রাণ বেঁচেছে ভেবে তিনি গর্বিত। তবে বললেন, ‘‘যদি ওর কিছু একটা হয়ে যেত, তা হলে ছোট দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে আমি কী করতাম বলুন তো!’’ সৌমিত্র বলে ওঠেন, ‘‘বাচ্চা মেয়েটাকে ওই ভাবে মাচা ভেঙে জলে পড়তে দেখে বাড়িতে আমার ঘুমন্ত মেয়ের মুখটা মনে পড়ল। তারপর আর স্থির থাকা যায়?’’ টালির চালের দু’কামরার ঘর সৌমিত্রর। বিভিন্ন জায়গায় ডাব বেচে সংসার চলে। বৃহস্পতিবার দুপুরে স্ত্রীকে নিয়ে হাজির হয়েছিলেন লোকনাথ মন্দির-সংলগ্ন রাস্তার ধারের দোকানে।

বড় রাস্তা থেকে ১০০ মিটারের যে রাস্তাটি লোকনাথ মন্দিরে গিয়েছে। তার বাঁ দিকে পাঁচিল। আর ডান দিকে গাঙ্গুলি পুকুর। মন্দির থেকে পঞ্চাশ গজ দূরে মন্দিরের মূল প্রবেশ পথ। বড় গেটটির নাম গাঙ্গুলি তোরণ। পুকুরের এক দিকে বাঁধানো ঘাট আর তিন পাড়ে পুকুরের উপরে মাচা তৈরি করে দোকান তৈরি করা হয়েছিল।

তারই একটিতে পুজো সামগ্রীর দোকান দিয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা সুমিত্রা মণ্ডল এবং তাঁর স্বামী শক্তি। সুমিত্রা বলেন, ‘‘সন্ধ্যা থেকে প্রবল বৃষ্টি নেমেছিল। ফলে ভিড় কিছুটা কম ছিল। বৃষ্টি থামতে রাত ২টো নাগাদ প্রবল ভিড় আছড়ে পড়ে মন্দিরে। তারপরেই বিপত্তি।’’

তাঁদের দোকানটিও ভেঙে পড়ে পুকুরে। জলে পড়েন সুমিত্রা এবং তাঁর স্বামী। সুমিত্রার কথায়, ‘‘কোনও রকমে জল থেকে উঠি। তখন দেখি, প্রচুর মানুষ জলে হাবুডুবু খাচ্ছেন। ফের জলে নেমে আমরা কয়েকজনকে টেনে তুলি।’’ শক্তি জানান, জনা দশেক মানুষকে পাড়ে টেনে তোলেন তাঁরা। কয়েকজন জ্ঞান হারান।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement