বিজেপি করার ‘অপরাধ’! আছাড় দেওয়া হল সাত বছরের শিশুকে

ঘটনার পরে হজরত ও তাঁর নাতনি রিয়াকে হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান আত্মীয়েরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গোবরডাঙা  শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৯ ০১:৪৫
Share:

হজরতের কোলে বসে রিয়া। ছবি: সুজিত দুয়ারি

রাজনীতি কাকে বলে, দাদুর রাজনৈতিক পরিচয় কী, এ সবের সাতপাঁচ বোঝার বয়স হয়নি তার। অভিযোগ, দাদুর বিজেপি করার ‘অপরাধে’ মার খেতে হল বছর সাতেকের শিশুকে। বাদ যাননি দাদুও। লাঠি দিয়ে বৃদ্ধকে মারা হয়েছে। আছাড় মেরে ফেলা হয় নাতনিকে।

Advertisement

মঙ্গলবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে গোবরডাঙা থানার বেড়গুম ১ পঞ্চায়েত এলাকার ঝনঝনিয়ায়।

এ দিন নিজের আনাজের দোকানে বসে নাতনি রিয়াকে খাওয়াচ্ছিলেন হজরত আলি মণ্ডল নামে ওই বৃদ্ধ। অভিযোগ, তৃণমূলের লোকজন সেখানে চড়াও হয়। বৃদ্ধকে লাঠি দিয়ে মারধর করা হয়। শিশুটিকে মাটিতে আছাড় মারে হামলাকারীরা। হজরত থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।

Advertisement

হজরতের অভিযোগ, ‘‘আমি বিজেপি করি দেখে স্থানীয় তৃণমূল নেতা রউফ মণ্ডলের নেতৃত্বে সকালে একদল লোক আমার দোকানে হামলা চালায়। আমাকে মারধর করেছে। নাতনিকে পর্যন্ত ছাড়েনি। ওকে আছাড় মেরে ফেলে দেয়। দোকান লন্ডভন্ড করেছে।’’

বিজেপি সূত্রে জানানো হয়েছে, হজরত ওই এলাকায় বিজেপির বুথ সভাপতি। দলের হাবড়া উত্তর মণ্ডলের সভাপতি স্বপনকুমার মণ্ডল বলেন, ‘‘হজরতের হাত ধরে ভোটে তৃণমূলের কিছু লোক বিজেপির হয়ে খেটেছিল। ওঁর সঙ্গে যোগাযোগ রেখেই তৃণমূলের কিছু লোক বিজেপিতে আসতে চাইছেন। এতেই ওদের রাগ।’’

যদিও তৃণমূলের তরফে অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করা হয়েছে, এলাকায় আপত্তিকর কথাবার্তা বলেছিলেন ওই বৃদ্ধ। কিছু লোক প্রতিবাদ করেন। মারধরের ঘটনা ঘটেনি। তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেলের নেতা রউফ বলেন, ‘‘কী ভাবে ঘটনার সঙ্গে রাজনৈতিক রং লাগল বুঝতে পারছি না। হজরতের এক ভাইপো আগ্নেয়াস্ত্র পাচার করতে গিয়ে কিছু দিন আগেই মিনাখাঁ থানার পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছে। এ দিনও আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে ওরা মানুষকে ভয় দেখাতে এসেছিল। মানুষ প্রতিবাদ করেছেন। এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই।’’ শিশুটিকে আছাড় মারার বিষয়ে রউফ বলেন, ‘‘এক মহিলার কোলে ছিল শিশুটি। মহিলা ঝাঁটা নিয়ে তেড়ে এসেছিলেন। তখন বাচ্চাটি কোল থেকে পড়ে গিয়েছে।’’

এ দিন ঘটনার পরে হজরত ও তাঁর নাতনি রিয়াকে হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান আত্মীয়েরা। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। রিয়ার বাঁ হাতে চোট লেগেছে। চিকিৎসকেরা তার হাত বেঁধে দিয়েছেন। হাড় ভেঙেছে কিনা বা চিড় ধরেছে কিনা তা জানতে এক্সরে করতে বলা হয়েছে।

ঘটনার পর থেকে রিয়ার চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ। চোখের জল থামছে না। হাসপাতাল চত্বরে দাদুর কোলে বসে ছোট্ট রিয়া কেঁদেই চলেছে। কী হয়েছে জানতে চাইলে, সে কোনও কথা বলছিল না। কিছুক্ষণ পরে বলে, ‘‘ওই কাকুরা আমাকে মেরেছে।’’

রিয়া হজরতের মেয়ের ঘরের নাতনি। দিন কয়েক আগে বেড়াতে এসেছিল। বৃদ্ধের আক্ষেপ, ‘‘নাতনি কী দোষ করল, ওকে আছাড় মারতে হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement