বেহাল: ভাঙড়ে নলমুড়ি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপর ভেঙে পড়েছে গাছ। নিজস্ব চিত্র।
ইয়াস-এর পরে কেটে গিয়েছে পাঁচ দিন। এখনও জলমগ্ন জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা। জলের তলায় বহু স্বাস্থ্যকেন্দ্র। অনেক এলাকা স্বাস্থ্যকর্মীদের নাগালের বাইরে। জলবাহিত রোগ ছড়াচ্ছে প্রত্যন্ত এলাকায়। ফলে, চিন্তিত স্বাস্থ্য দফতর।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা স্বাস্থ্যজেলা সূত্রে জানা গিয়েছে, গোসাবার কুমিরমারির ৩২ নম্বর সাব-সেন্টার এখনও রয়েছে জলের তলায়। স্বাস্থ্যজেলায় কমবেশি ৫০টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র এখনও জলমগ্ন। ভেসে গিয়েছে ওষুধ ও অন্য অনেক জিনিসপত্র। ফলে, ওই সব এলাকায় চিকিৎসা পরিষেবা ব্যাহত হচ্ছে।
গোসাবা ও কুলতলি-সহ বিভিন্ন জায়গায় ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা গিয়েছে বলে খবর। সোমবার সকাল পর্যন্ত মোট ১৭৪ জন ওই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। সুন্দরবনের বিভিন্ন দ্বীপে আটকে পড়েছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। ফলে, প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে ‘মেডিক্যাল ক্যাম্প’ করতে সমস্যা হচ্ছে। অনেক এলাকায় নলকূপ জলের তলায়। পরিস্রুত পানীয় জলের অভাব থাকায় অনেকে দূষিত জল পান করছেন। এর ফলে বাড়ছে ডায়রিয়ার প্রকোপ। এমনকী, বিভিন্ন এলাকায় ব্লিচিং পাউডার ও চুন ছড়ানোর কর্মীও পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য দফতরের একাধিক আধিকারিক।
জেলা প্রশাসন অবশ্য দাবি করেছে, পর্যাপ্ত পরিমাণ ব্লিচিং পাউডার, চুন ও পানীয় জল পরিশোধনের ট্যাবলেট প্রতিটি ব্লকে পাঠানো হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতর ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীদের উদ্যোগে মেডিক্যাল ক্যাম্প করা হয়েছে অনেক জায়গায়। জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতর জলমগ্ন প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে পর্যাপ্ত পানীয় জল পাঠাচ্ছে। ইতিমধ্যেই অনেক নলকূপ সারানো হয়েছে।
সোমবার জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সোমনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘স্বাস্থ্যজেলার অধীনে সুন্দরবনের অনেক এলাকা এখনও জলমগ্ন। স্বাস্থ্যকর্মীরা ঠিকমতো এলাকায় পৌঁছতে পারছেন না। এর ফলে সাধারণ মানুষের কাছে স্বাস্থ্য পরিষেবা পোঁছে দিতে সমস্যা হচ্ছে।’’
ব্যাহত হচ্ছে করোনা-টিকাকরণের কাজও, জানিয়েছেন স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা। জলমগ্ন এলাকায় টিকাকরণ বন্ধ রয়েছে বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর। ব্যাহত হয়েছে অন্য টিকা দেওয়ার কাজও। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের দাবি, ‘‘কয়েকটি জায়গায় করোনার-ভ্যাকসিন দেওয়া এবং পরীক্ষার কাজ বিঘ্নিত হচ্ছে।’’
স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, বিভিন্ন ব্লক ও মহকুমা হাসপাতাল এবং পুরসভা এলাকায় মেডিক্যাল ক্যাম্প করার পাশাপাশি করোনার টিকাকরণ ও করোনা-পরীক্ষা করা হচ্ছে। তবে পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন এক স্বাস্থ্যকর্তা। রাজ্য সরকারের নির্দেশ মোতাবেক ‘স্পেশাল কোটা’য় ১৮-৪৪ বছর বয়স্কদের ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। শনিবার স্বাস্থ্য জেলার বিভিন্ন টিকাকরণ কেন্দ্রে প্রায় ১৮ হাজার মানুষ করোনার ভ্যাকসিন পেয়েছেন।