ইলিশের-খোঁজে: নিজস্ব চিত্র
ইলিশের মরসুম প্রায় দেড় মাস কেটে গেল। এখনও রুপোলি শস্যের ঝাঁক তেমন ভাবে জালে পড়েনি। বার বার সমুদ্র গিয়ে কার্যত খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে মৎস্যজীবীদের। বর্ষার ঘাটতি ও উপযোগী আবহাওয়া না হওয়ায় ইলিশের ঝাঁক বাংলাদেশের দিক থেকে ভারতের দিকে ঢুকতেই পারছে না বলে মনে করছেন অভিজ্ঞ মৎস্যজীবীরা। এ ভাবে চলতে থাকলে ব্যবসা মন্দা যাবে বলেই আশঙ্কা তাঁদের।
মৎস্য দফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত দু’বছর ধরে সমুদ্রে জলোচ্ছ্বাসের ফলে পর পর ট্রলার দুর্ঘটনা ঘটেছিল। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় কারণে অনেক ট্রলার গভীর সমুদ্রে পাড়ি দিতে পারেনি। ফলে পর পর দু’বছর ধরে ইলিশের মন্দা চলছেই। তাতে ট্রলার মালিক ও মৎস্যজীবীদের লোকসানের বহর বেড়ে চলেছে।
এ বার ১৫ জুন থেকে ইলিশ ধরার মরসুম শুরু হয়েছে। প্রায় দেড় মাস ধরে গভীর সমুদ্রে পাড়ি দিয়েছে ট্রলার। কোনও ট্রলারের জালেই এ বারও তেমন ভাবে ইলিশের ঝাঁক আটকায়নি। একটি ট্রলার গভীর সমুদ্রে যেতে মজুরি, বরফ, ডিজেল ও জাল মিলিয়ে প্রায় এক-দেড় লক্ষ টাকা খরচ হয়। এত টাকা খরচ করে মাছ না ওঠায় হতাশ মৎস্যজীবীরা। তবে ইলিশ ছাড়া অন্য মাছ পমফ্রেট, ভোলা, ম্যাকরেল, চিংড়ি কিছু মিলছে। এর মধ্যে পমফ্রেট ও চিংড়ি মাছ চিন, জাপান, কোরিয়া, মালয়েশিয়ায় রফতানি হয়। তাতে মাছের দামও ভাল পেতেন মৎস্যজীবীরা। এ বার করোনা পরিস্থিতিতে বিদেশে রফতানির ক্ষেত্রে বাধা পড়েছে। ফলে ওই মাছ এলাকায় প্রায় জলের দরে বিকোচ্ছে।
ট্রলারে যাওয়া মৎস্যজীবী সুনীল দাস, শঙ্কর দাসরা বলেন, ‘‘আমরা ফি বছর সমুদ্রে ইলিশের সন্ধানে যাই। বহু বছর ধরে এই পেশায় রয়েছি। সমুদ্রে ৮-১০ দিন করে থেকে ট্রলার ভর্তি করে কুইন্ট্যাল কুইন্ট্যাল মাছে ধরেছি। এখন অবশ্য ইলিশের দেখা মেলাই ভার। সারা এলাকা জুড়ে জাল পেতে সামান্য কিছু ইলিশ ও তার সঙ্গে অন্য মাছ উঠছে।’’ মৎস্যজীবীরা জানিয়েছেন, এ বার প্রায় ১০-১৫ বার সমুদ্রে পাড়ি দিয়ে মেরেকেটে মাত্র ২০০ টনের মতো মাছ মিলেছে। যেখানে মরসুমে এক-দু’দিনে ওই পরিমাণ ইলিশ জালে উঠত।
কাকদ্বীপ মৎস্যজীবী কল্যাণ সমিতির সম্পাদক বিজন মাইতির বক্তব্য, ‘‘ইলিশ হবে কী করে! পূবালি বাতাস, ঝির ঝিরে বৃষ্টি হলে তবেই বাংলাদেশ থেকে স্রোত বইবে ভারতের দিকে। ওই স্রোতেই ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ঢোকে। এখন তো মাঝে মধ্যে দখিনা বাতাস বইছে। কখনও ঝঞ্ঝাও হচ্ছে। মাছ বাংলাদেশের দিকেই রয়েছে।’’ মাছ না মেলায় বাজারে ইলিশের দামও কমছে না। ৪০০ গ্রামে ওজনের মাছ ৪০০ টাকা, ৫০০ গ্রাম ওজনের মাছ ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ১ কিলোগ্রাম ওজনের মাছ এখনও তেমন ধরাই পড়েনি বলে জানালেন মৎস্যজীবীরা। বিজনের কথায়, ‘‘ক’দিন আবহাওয়া খারাপের জন্য বিভিন্ন এলাকার ট্রলারগুলি কাকদ্বীপ মৎস্য বন্দর, জম্বুদ্বীপ, কেঁদোদ্বীপ, হরিপুর, সীতারামপুর ও কলস মোহনার কাছে আটকে ছিল। আবহাওয়া ভাল হওয়ায় শুক্রবার ফের প্রায় ৩ হাজারের বেশি ট্রলার সমুদ্রে পাড়ি দিল। তাঁর কথায়, ‘‘এই বার ভাল মাছ না পেলে সত্যিই আর্থিক সঙ্কট তৈরি হবে। কারণ, দেড় মাস ধরে বাজারে মহাজনের কাছ থেকে ঋণ করে সমুদ্রে ট্রলার পাঠাতে হচ্ছে অনেককে। তাতে দেনার পরিমাণ বেড়েই চলেছে।’’