মায়ের কোলে সঞ্চিতা। ছবি: সমরেশ মণ্ডল।
শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে সঙ্গে নিয়েই জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষায় বসল কাকদ্বীপের সঞ্চিতা গিরি, সুজয় দাস, মুক্তা দাসেরা। তিন জনই কাকদ্বীপের অক্ষয়নগর জ্ঞানদাময়ী বিদ্যাপীঠের পড়ুয়া। অক্ষয়নগর কুমোরনারায়ণ হাই স্কুলে মাধ্যমিক দিচ্ছে তারা।
অক্ষয়নগর গ্রামের বাসিন্দা সঞ্চিতার উচ্চতা মেরেকেটে দেড় ফুট। ওজন ১৫ কিলোগ্রাম মতো। জন্ম থেকেই অসুখ-বিসুখে জর্জরিত। অভাবের সংসারে যথাযথ চিকিৎসাও মেলেনি। তবু অদম্য জেদে সে বসেছে পরীক্ষায়। সঞ্চিতার বাবা স্বপন পেশায় দিনমজুর।
তিনি বলেন, “খুব কষ্ট করে পড়াশোনা করতে হয়েছে ওকে। নিজে লিখতে পারে, ছবিও ভাল আঁকে। এক বার জেলায় ছবি আঁকায় প্রথম হয়েছিল। ও যত দূর পড়াশোনা করতে চাইবে, আমি পড়াব।” সঞ্চিতার কথায়, “পড়াশোনার পাশাপাশি আঁকা নিয়ে এগোনোর ইচ্ছা আছে।”
কাকদ্বীপের বাসিন্দা মুক্তা মূক-বধির। ছোটবেলাতেই এই প্রতিবন্ধকতা ধরা পড়ে। অনেক চিকিৎসার পরেও কিছু হয়নি। মেয়ের লেখাড়া নিয়ে সংশয়ে ছিলেন পরিবারের লোকজন। তবে হাল ছাড়েনি মুক্তা। পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছে। মুক্তার মা শিবানী বলেন, “কষ্ট করে পড়াশোনা করতে হয়েছে। তবে লিখতে পারে।”
সুজয় জন্ম থেকেই বিকলাঙ্গ, হাঁটাচলা করতে পারে না। লাঠি ধরে চলাফেরা করতে হয়। ছোট থেকে স্নায়ুর সমস্যা। তিন বার অস্ত্রোপচার হয়েছে। সুজয়ের বাবা তপন মৎস্যজীবী। তিনি বলেন, “অনেক কষ্ট করে ছেলেকে বড় করছি। তবে মাধ্যমিকের পর হয় তো আর পড়াতে পারব না। সেই আর্থিক সামর্থ্য আমার নেই।”
অক্ষয়নগর জ্ঞানদাময়ী বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক আশিস মাইতি বলেন, “প্রতিবন্ধকতা জয় করে মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসেছে ওরা। ওদের জন্য আমরা গর্বিত। আশা করি, সকলে ভাল ফলাফল করবে। এদের দেখে অন্যেরাও অনুপ্রাণিত হবে।”