বিধ্বংসী: তখনও আয়ত্তে আসেনি আগুন। ইনসেটে, চেষ্টা চালাচ্ছেন দমকল কর্মীরা। ছবি: সামসুল হুদা
আগুনে পুড়ে মারা গেলেন তিনজন। পুড়ল কয়েকটি দোকান।
শনিবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে ভাঙড় থানার ঘটকপুকুর বাজারে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদের নাম মোশারেফ মোল্লা (৪২), মমতাজুল মল্লিক (১৬), রাকিবুল মোল্লা (১৮)। এদের মধ্যে প্রথমজনের বাড়ি ভাঙড় থানার গোবিন্দপুর। অন্য দু’জন ভাঙড়েরই চাঁদপুরের বাসিন্দা। সব মিলিয়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কয়েক লক্ষ টাকা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, এ দিন সকাল সওয়া ৮টা নাগাদ বাসন্তী হাইওয়ের উপরে ঘটকপুকুর চৌমাথায় ফজের গাজির কেরোসিন তেলের গোডাউনে আগুন লাগে। বেশ কয়েকটি তেলের ব্যারেলে কেরোসিন তেল, পেট্রল, ডিজেল, কাটা তেল (সলফিন) মজুত ছিল। দ্রুত আগুন আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে। ঘিঞ্জি এলাকায় মুহূর্তের মধ্যে আগুন লেগে যায় উল্টো দিকের একটি রেস্তরাঁয়। তার মালিক মোশারেফ নিজেও আগুন নেভাতে বালতি করে জল ঢালতে থাকেন।
দুই কর্মচারী দোকানের ভিতরে আটকে পড়ে। তাদের বাঁচাতে মোশারফ দোকানের ভিতরে ঢুকে যান। ততক্ষণে সামনের দোকানের আগুন তাঁর দোকানেও ছড়িয়ে পড়েছে। শাটার ফেলে দিয়ে দুই কর্মচারীকে নিয়ে দোকানের দোতলায় উঠে যান মোশারফ।
ইতিমধ্যে তাঁর দোকানে গ্যাস সিলিন্ডার ফেটে যায়। আগুনের তীব্রতা আরও বাড়ে। আটকে পড়েন মোশারেফ ও তাঁর দুই কর্মী মমতাজুল ও রাকিবুল। ততক্ষণে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন ভাঙড় থানার ওসি সমরেশ ঘোষ। একপ্রকার জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দোকানের ভিতরে আগুনে আটকে পড়া তিনজনকে বাঁচাতে অন্য একটি ছাদ দিয়ে উপরে উঠে যান সমরেশ। মোশারফের দোকানের পিছনের দিকের দেওয়াল ভেঙে তিনজনকে বের করার চেষ্টা করেন।
পুলিশের চেষ্টায় তিনজনকে উদ্ধার করে নলমুড়ি ব্লক হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক সকলকে মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশ দেহ তিনটি মোমিনপুর মর্গে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে।
এ দিকে, আগুন লাগার খবর পেয়ে কলকাতা লেদার কমপ্লেক্স থানা এলাকা থেকে দমকলের তিনটি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে আসে। পুলিশ ও স্থানীয় মানুষের সহযোগিতায় প্রায় তিন ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন আয়ত্তে আসে। পুলিশ জানায়, প্রায় দশটি দোকানে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন কলকাতা কর্পোরেশনের মেয়র ফিরহাদ হাকিম। তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করার পরে মৃতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। পড়ে মন্ত্রী সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এখানে এসেছি। অত্যন্ত মর্মান্তিক ঘটনা। পুলিশকে বলেছি, ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে দেখতে। মৃতদের তিনটি পরিবারকেই সরকারি ভাবে ২ লক্ষ টাকা করে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।’’
প্রাথমিক তদন্তে দমকলের অনুমান, শর্টসার্কিট থেকে ওই কেরোসিন তেলের গোডাউনে আগুন লাগে। এ দিকে আগুন লেগে তিনজনের মৃত্যুর ঘটনায় ঘটকপুকুর বাজার ব্যবসায়ী সমিতি এ দিন সমস্ত দোকান, বাজার সিদ্ধান্ত নেয়। বাজারের ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ফজের গাজি দীর্ঘদিন ধরে বেআইনি ভাবে কেরোসিন তেল-সহ অন্যান্য তেলের কালোবাজারি করছে। পুলিশ জানিয়েছে, ফজের পলাতক। খোঁজ চলছে। ৩ জনের মৃত্যুর ঘটনায় শোকপ্রকাশ করে সিপিএমের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক শমীক লাহিড়ি বেআইনি কেরোসিন তেলের গোডাউনের মালিক ফজের গাজিকে গ্রেফতারের দাবি করেছেন।
এ দিন পরে ঘটনাস্থলে আসেন জেলাশাসক পি উলগানাথনও। তিনি বলেন, ‘‘মর্মান্তিক ঘটনা। মৃতদের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হয়েছে।’’ ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক তথা জেলার যুব তৃণমূলের সভাপতি শওকত মোল্লা মৃতদের পরিবারের হাতে এ দিনই সরকারি ক্ষতিপূরণের দু’লক্ষ টাকার চেক তুলে দেন।