প্রতীকী ছবি।
রাস্তা থেকে ডেকে পাট খেতে নিয়ে গিয়ে এক নাবালিকাকে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। ওই নিগৃহীতার দাবি, নির্যাতনের সেই গোটা ঘটনার ভিডিয়ো তুলে রেখেছিল ধর্ষণকারীরা। এই ঘটনায় দুই যুবককে গ্রেফতার করেছে ব্যারাকপুর কমিশনারেটের পুলিশ। রবিবার ওই কমিশনারেটের বাসুদেবপুর থানা এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে বলে জানা গিয়েছে। তদন্তকারীরা আরও জানান, পুলিশে অভিযোগ না জানিয়ে বিষয়টি যাতে আপসে মিটিয়ে নেওয়া হয়, তার জন্য প্রথমে স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যের এক আত্মীয়ের বাড়িতে সালিশি সভা বসানো হয়েছিল। সেখানে টাকার বিনিময়ে মিটমাট করে নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয় বলে অভিযোগ নির্যাতিতার পরিবারের। কিন্তু তাতে মীমাংসার বদলে হাতাহাতি বেধে যায়। নির্যাতিতার কাকা প্রতিবাদ করায় অভিযুক্তদের এক জনের আত্মীয় তাঁর পিঠে ছুরির কোপ মারে বলে অভিযোগ। ধর্ষণের ওই ঘটনায় সোমবার আরাফত মণ্ডল ওআক্তার আলম মণ্ডল নামে দুই যুবককে বেল্লে শঙ্করপুর থেকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। ছুরিকাঘাতের ঘটনায় গ্রেফতার করা হয় খুরশিদ আলমকে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মায়ের সঙ্গে রবিবার দুপুরে বাড়ি থেকে প্রায় আড়াই কিলোমিটার দূরের একটি গয়নার দোকানে যাচ্ছিল বছর তেরোর মেয়েটি। তার মায়ের বক্তব্য, ‘‘কিছুটা যাওয়ার পরে আমরা যখন খালের কাছাকাছি, তখন মেয়ের মোবাইলে বার বার ফোন আসছিল। ও বলল, এক বান্ধবী ওকে ডাকছে। দেখা করে আসছে। খালের ধার দিয়ে চলে গেল। সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে কাঁদছে দেখে জানতে চাওয়ায় বলল, ওকে ওই এলাকার দু’জন পাট খেতে নিয়ে গিয়ে নিগ্রহ করেছে। ভিডিয়ো তুলে রেখে ভাইরাল করবে বলে হুমকিও দিয়েছে।’’
সেই মুহূর্তে কী করণীয়, বুঝতে না পেরে প্রথমে ঘটনার কথা কয়েক জন আত্মীয়কে জানান মেয়েটির মা-বাবা। তাঁরা স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যের সঙ্গে আলোচনা করেন। তদন্তকারীরা জানান, নির্যাতিতা এবং অভিযুক্ত যুবকদের পরিবারের লোকেদের নিয়ে বিষয়টির মীমাংসা করার জন্য স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যের এক আত্মীয়ের বাড়িতে রাতে সালিশি সভা বসে। মেয়েটির কাকার অভিযোগ, ‘‘ওই সালিশি সভায় স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য মহম্মদ জিন্নার উপস্থিতিতে আমাদের পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাতে বারণ করা হয়। বলা হয়, তার পরিবর্তে মেয়ের বিয়ের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে টাকা দিয়ে বিষয়টি মিটমাট করে নিতে বলা হয়। প্রতিবাদ করায় আমাকে ছুরি মারা হয়।’’
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, অভিযুক্তেরা ও তাদের পরিবারের সকলেই মেয়েটির পরিবারের পূর্ব-পরিচিত। যে বাড়িতে সালিশি সভা বসেছিল, সেখানে ভাঙচুর চালায় অভিযুক্তদের পরিবারের লোকেরা। ওই পঞ্চায়েত সদস্য এবং জগদ্দলের তৃণমূল বিধায়ক সোমনাথ শ্যাম যদিও দাবি করেছেন, সালিশি সভা বসানোর অভিযোগ ঠিক নয়। তাঁরা বলেন, ‘‘সালিশি সভা বসানো হয়নি। দু’পক্ষের কাছ থেকে ঘটনাটি জানার পরেই পুলিশ ডাকা হয় ও মেয়েটির বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের ধরিয়ে দেওয়া হয়।’’
পুলিশ এ দিন নির্যাতিতার শারীরিক পরীক্ষা করানোর পাশাপাশি তার বয়ান লিপিবদ্ধ করেছে। ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ডিসি (উত্তর) শ্রীহরি পাণ্ডে বলেন, ‘‘পাট খেতে নিয়ে গিয়ে এক নাবালিকাকে ধর্ষণের অভিযোগে দু’জনকে ধরা হয়েছে। আর এক জন নির্যাতিতার আত্মীয়কে আক্রমণ করেছিল। সেই অভিযোগে তাকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। মেয়েটিকে ধর্ষণের ভিডিয়ো তোলা হয়েছিল বলে জানা গিয়েছে।’’
প্রসঙ্গত, কিছু দিন আগে শান্তিনিকেতন থানায় এক নাবালিকা অভিযোগ করেছিল, তাকেও একই ভাবে মাস পাঁচেক আগে পাড়ার কয়েক জন একটি নির্জন জায়গায় নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করেছিল এবং গোটা ঘটনার ভিডিয়ো তুলে রেখেছিল। তারই ছায়া এ বার ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলেও।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।