ঘেরাটোপ: ব্যারিকেড করে চলছে রাস্তায় বেরোনো মানুষদের জিজ্ঞাসাবাদ। শনিবার, বারাসত চাঁপাডালি মোড়ে। ছবি: সুদীপ ঘোষ
সকাল থেকে পুলিশের দেখা না মেলায় বারাসতের জগাদিঘাটার কাজিপাড়া এলাকায় মুদিখানার দোকান খুলেছিলেন এক ব্যক্তি। ক্রেতারাও জুটেছিলেন। মুহূর্তের মধ্যে পুলিশ সেখানে পৌঁছে ধমক দিয়ে দোকান বন্ধ করে দিল। কয়েক জনকে আটকও করা হল। সর্বত্র টহলদারির ব্যবস্থা করতে না পারায় কিছু জায়গা বাঁশ দিয়েও ঘিরে দেওয়া হয়েছিল। এরই সঙ্গে শনিবার লকডাউনে বারাসত, মধ্যমগ্রাম এলাকায় ড্রোন উড়িয়ে এ ভাবেই চলল নজরদারি। ড্রোনে যেখানেই দোকান খোলা, জমায়েত কিংবা কোনও অসুবিধার ছবি দেখা গিয়েছে, সেখানেই হানা দিয়েছে পুলিশ।
ড্রোনের মাধ্যমেই বারাসতের ময়না এলাকায় মাস্ক ছাড়া কয়েক জনকে দেখে তাঁদের আটক করে পুলিশ। বেলা ১১টা নাগাদ ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে বারাসত কলোনি মোড়ে মাস্ক ছাড়াই কয়েক জন যুবক আড্ডা মারছিলেন। সিভিক পুলিশ তাঁদের বারণও করেন। তাঁরা কথা শুনছেন না খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে ওই যুবকদের আটক করেন বারাসত পুলিশ জেলার এক পদস্থ কর্তা।
লকডাউনে এ দিন বিমানবন্দর, নিউ ব্যারাকপুর, মধ্যমগ্রাম, বারাসত-সহ গোটা উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় রাস্তায় ব্যারিকেড করে দিয়ে কড়া নজরদারি চালায় পুলিশ। নিয়ম না মানতে চাওয়া ১১১ জনকে আটকও করা হয়। বেড়াচাঁপা থেকে বারাসতগামী
একটি ট্রাকে বেআইনি ভাবে যাতায়াতকারী ৩০ জনকে আটক করে পুলিশ। এ দিন রাস্তাঘাট ফাঁকা ছিল, দোকানপাটও বন্ধ ছিল। রাস্তাঘাটে জমায়েত করা বা মাস্ক না পরে বেরোনো মানুষের সংখ্যাও ছিল অন্য দিনের তুলনায় অনেক কম।
জেলাশাসক চৈতালি চক্রবর্তী বলেন, ‘‘লকডাউন ভাল ভাবেই হচ্ছে। তবে মানুষকে বুঝতে হবে বিধি-নিষেধ ভঙ্গ করা মানে নিজের বিপদ ডেকে আনা।’’ এ দিন নজরদারি চলে বিভিন্ন পুরসভার তরফেও।
সকালে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেন বারাসত পুরসভার প্রশাসক সুনীল মুখোপাধ্যায়। বাদুর কাছে মাস্ক না পরা কিছু যুবককে সতর্কও করেন তিনি। পরে তিনি বলেন, ‘‘আমি নিজেই আক্রান্ত হয়ে লড়াই করে ফিরেছি। সচেতন না হলে যে বিপদ, সেটাই বলেছি।’’
এ দিন মধ্যমগ্রাম চৌমাথা, বিমানবন্দরের এক এবং আড়াই নম্বর গেটের মতো বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায়, নাকা তল্লাশি করছে পুলিশ। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে গার্ড রেল দিয়েও নাকা তল্লাশি করতে দেখা যায় পুলিশকে।
এ দিকে এ দিনই বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক শান্তনু সরকারের করোনা রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে। ফলে সতর্কতা বাড়ানো হয়েছে ওই এলাকাগুলিতে।
নিউ ব্যারাকপুর এলাকায় গোটা দিনই থমথমে পরিবেশ ছিল। কারও কোনও অসুবিধার কথা জানতে পারলে পুলিশ ও পুরসভার লোকজন গিয়ে সাহায্য করেছেন। সেখানকার ৭, ১৯ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে করোনায় আক্রান্ত তিন
জনের বাড়িতেও এ দিন খাবার পৌঁছে দেওয়া হয়।
এর সঙ্গে নতুন করে কিছু জায়গায় লকডাউন শুরু হয়েছে। দেগঙ্গা থানার কার্তিকপুর এলাকায় স্থানীয় বাজারে এক দোকানি করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পরেই স্থানীয় মানুষ এক সপ্তাহের জন্য এলাকার সমস্ত বাজার ও দোকানপাট বন্ধ করে দেন। তবে এ দিন ওই এলাকার বাজার কমিটির পক্ষ থেকে প্রচার করা হয়, রবিবার কয়েক ঘণ্টার জন্য দোকান ও বাজার খোলা থাকবে। তার পরে ফের চলবে লকডাউন।