Viksit Bharat Sankalp Yatra

মোদীর ‘দুয়ারে সরকার’ রথ ঘুরছে বাংলায়, বিজেপির দখলে থাকা ১৬ লোকসভা এলাকায় শামিল সাংসদেরা

লোকসভা নির্বাচনের আগে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্পের প্রচারে দেশ জুড়ে চলছে ‘বিকশিত ভারত সঙ্কল্প যাত্রা’। বাংলাতেও এসেছে যাত্রার ১৮টি রথ।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২৪ ১৬:৫৮
Share:

নদিয়ার রানাঘাটে রথ। — নিজস্ব চিত্র।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘দুয়ারে সরকার’ প্রকল্প এখন বহুল পরিচিত। মানুষকে সরকারের কাছে আসার যে চিরাচরিত নিয়ম, তা ভাঙতে চেয়ে মমতা সরকারকে মানুষের দুয়ারে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেই এই প্রকল্প এনেছিলেন। বাংলায় দফায় দফায় এই কর্মসূচির মাধ্যমে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধা দেওয়া হয় সাধারণ মানুষকে। ঠিক একই রকম উদ্দেশ্য নিয়েই শুরু হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের ‘বিকশিত ভারত সঙ্কল্প যাত্রা’। রাজ্যে রাজ্যে সেই যাত্রা আগেই শুরু হয়ে গেলেও বাংলায় পৌঁছেছে অনেকটা পরে। আর সেই যাত্রা নিয়ে উৎসাহী রাজ্য বিজেপিও।

Advertisement

এই রাজ্যে গত লোকসভা নির্বাচনে ১৮ আসনে জিতলেও এখন হাতে রয়েছে ১৬টি। তবে বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যে ১৮টিই ‘বিকশিত ভারত সঙ্কল্প যাত্রা’ রথ পেয়েছে। ১৬ জন সাংসদ একটি করে পেয়েছেন নিজের নিজের এলাকার জন্য। অতিরিক্ত দু’টির একটি করে বেশি পেয়েছেন রায়গঞ্জের সাংসদ দেবশ্রী চৌধুরী এবং পুরুলিয়ার সাংসদ জ্যোতির্ময় সিংহ মাহাতো। এই যাত্রায় ঘুরছে রথের মতো করেই সাজানো একটি ট্রাক। মোদীর ছবি ছাড়াও কেন্দ্রের বিভিন্ন প্রকল্পের পোস্টার দিয়েই মূলত সাজানো। সেই সঙ্গে রয়েছে একটি বড় মাপের এলইডি টিভি। যেখানে সারাক্ষণ চলছে প্রচারের ভিডিয়ো। সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতাও।

কেন্দ্রীয় সরকার গত বছরের ১৫ নভেম্বর শুরু করে এই রথযাত্রা। ঝাড়খণ্ডের খুন্তিতে যাত্রার সূচনা করেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী মোদী। তখনই বলা হয়েছিল, ২০২৪ সালের ২৫ জানুয়ারির মধ্যে দেশের ২ লাখ ৬০ হাজার গ্রাম পঞ্চায়েত এবং চার হাজারের বেশি পুরসভা এলাকায় এই যাত্রা পৌঁছবে। গত ৫ জানুয়ারি যাত্রার ৫০ দিন পূর্ণ হয়। সেই সময়ে কেন্দ্রের তরফে দাবি করা হয়েছিল, দেশের ১০ কোটি মানুষ এই যাত্রার সুবিধা পেয়েছেন। একই সঙ্গে দাবি করা হয়, সাড়ে সাত কোটি মানুষ স্বাধীনতার শতবর্ষ ২০৪৭ সালে বিকশিত ভারত গড়ে তোলার সঙ্কল্প নিয়েছে। তুলনা করে বলা হয় অস্ট্রেলিয়া, ইতালি, ইংল্যান্ডের মতো দেশগুলির মোট জনসংখ্যার চেয়ে বেশি মানুষ উপকৃত হবেন এই যাত্রায়।

Advertisement

এই যাত্রায় কী উপকার হবে, তা উল্লেখ করতে গিয়ে বলা হয় বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা এর উদ্দেশ্য। একই সঙ্গে কেউ কোনও প্রকল্পের সুবিধা পেতে চাইলে তাঁদের নাম নথিভুক্ত করা থেকে ফর্ম পূরণে সাহায্য করার কাজ করছেন এই যাত্রায় সফর করা কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীরা।

এর জন্য রাজ্যে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরাও আসছেন। সম্প্রতিই বাংলায় আসেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন দফতরের প্রতিমন্ত্রী সাধ্বী নিরঞ্জন জ্যোতি। তিনি ছাড়াও আসেন কেন্দ্রীয় মৎস্য-পশুপালন মন্ত্রী পুরুষোত্তম রূপালা এবং দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী এল মুরুগান। সকলেরই লক্ষ্য ছিল বাংলায় চলা ‘বিকশিত ভারত সঙ্কল্প যাত্রা’-য় যোগ দেওয়া। দেশের সব রাজ্যেই এই কর্মসূচিতে ঘুরছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা। প্রধানমন্ত্রী মোদীও সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশে দু’টি জায়গায় গিয়ে যাত্রায় উপস্থিত ছিলেন।

বাংলায় বিরোধীরা এমনটাও বলে যে, মমতার ‘দুয়ারে সরকার’ সরকারি কর্মসূচি হলেও তা শাসক তৃণমূলকে রাজনৈতিক সুবিধাও দেয়। বিজেপিও অবশ্য রাজনৈতিক সুবিধা পেতে চায় এই কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মসূচি থেকে। এটাও স্পষ্ট যে, লোকসভা নির্বাচনে সুবিধা পেতেই এই কর্মসূচি নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। আর রাজ্য বিজেপিও এই কর্মসূচির সঙ্গেই জুড়ে দিতে চায় দলের ‘লাভার্থী সম্পর্ক’ অভিযানকে। সেই অভিযানের উদ্দেশ্য কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুবিধা বা লাভ পাওয়া পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে দলের ঝুলিতে ভোট টানা। বিজেপির দাবি এই রাজ্যে তিন কোটি মানুষ কেন্দ্রীয় প্রকল্পের লাভ পেয়েছেন। তাঁরা তৃতীয় বার মোদী সরকার গড়তে বিজেপিকেই ভোট দেবেন।

এই প্রসঙ্গে বিষ্ণুপুরের বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ বলেন, ‘‘আমার এলাকায় মানুষের খুবই উৎসাহ এই রথযাত্রা ঘিরে। সেই উৎসাহ বলে দিচ্ছে যে, মোদীজির দেওয়া গ্যারান্টিতেই মানুষের আস্থা।’’ অন্য দিকে, মমতার প্রকল্পের অনুকরণ অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল। দলের রাজ্যসভা সাংসদ শান্তনু সেন বলেন, ‘‘রাজনৈতিক উন্নয়ন করতে গেলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুকরণ করা ছাড়া ওদের উপায় নেই। সেটাই প্রমাণ হচ্ছে এই যাত্রায়। মধ্যপ্রদেশেও ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’-এর অনুকরণে হয়েছিল।’’ সৌমিত্রের দাবি উড়িয়ে শান্তনু আরও বলেন, ‘‘মানুষ অন্য কথা বলছে। মানুষ আসল পেলে নকলের পিছনে ছুটতে চায় না। তাই সমর্থন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিই থাকছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement