বাংলার দায়িত্ব পেয়েছেন মোদী মন্ত্রিসভার ১৩ সদস্য। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
কেন্দ্রে তৃতীয় বার ক্ষমতায় আসার লক্ষ্যে এখন থেকে প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে বিজেপি। সেই প্রস্তুতির অন্যতম অঙ্গ হিসাবে গেরুয়া শিবির এমন আসনে সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়েছে যেখানে দল পরাজিত। সেই সব কেন্দ্র জিতে তৃতীয় নরেন্দ্র মোদী সরকার গড়তে আসন সংখ্যা বাড়ানোই তাদের লক্ষ্য। আপাতত সেই সব আসনের সমীক্ষা শুরু করেছে বিজেপি। দায়িত্বে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা। বাংলার দায়িত্ব পেয়েছেন মোদী মন্ত্রিসভার ১৩ সদস্য।
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে সারা দেশে ৩০৩ আসনে জয় পেয়েছিল বিজেপি। কিছু আসন পেয়েছিল এনডিএ-র শরিকদলগুলি। বাকি যে আসনগুলিতে বিজেপি প্রার্থী দিয়ে জিততে পারেনি তার মধ্যে বাছাই ১৪৪টি আসন নিয়ে শুরু হয়েছে ভোটের প্রস্তুতি। বাংলায় বিজেপি জিতেছিল ১৮টি আসন। এর মধ্যে আসানসোল হাতছাড়া হয়ে গিয়েছে। ব্যারাকপুরের অর্জুন সিংহ তৃণমূলে যোগ দিলেও সাংসদ পদ ছাড়েননি। ফলে বর্তমানে খাতায়কলমে বিজেপির শক্তি ১৭। এখন আগামী লোকসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আসানসোল-সহ ১৯টি আসনের উপরে জোর দিচ্ছে গেরুয়া শিবির।
বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, দেশের ১৪৪টি আসনকে বিভিন্ন ক্লাস্টারে ভাগ করা হয়েছে। এমন ক্লাস্টার পশ্চিমবঙ্গে পাঁচটি। চারটিতে চারটি করে লোকসভা আসন ও একটিতে তিনটি। এই ক্লাস্টারগুলির দায়িত্বে রয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বীরেন্দ্র কুমার, প্রতিমা ভৌমিক, ধর্মেন্দ্র প্রধান, স্মৃতি ইরানি, পঙ্কজ চৌধুরী। এঁরা প্রত্যেকেই আবার আলাদা লোকসভা আসনের দায়িত্বেও রয়েছেন। বাকি আসনগুলির দায়িত্বে আরও আট কেন্দ্রীয় মন্ত্রী— অজয় ভট্ট, রামেশ্বর তেলি, রাজকুমার রঞ্জন সিংহ, এস পি সিংহ বঘেল, জ্যোতিরাদিত্য শিন্ডে, কপিল মোরেশ্বর পাটিল, কৈলাস চৌধুরী, হরদীপ সিংহ পুরি। জুলাই মাসের মধ্যে এঁদের প্রথম সফর শেষ করার কথা। সেই মতো অনেকেই দলের ‘লোকসভা প্রবাস যোজনা’-তে অংশ নিতে ইতিমধ্যেই বাংলায় এসেছেন। চলতি সপ্তাহেই কয়েক জন আসবেন। আর মাসের একেবারে শেষের দিকে আসার কথা অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রী শিন্ডের। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, দমদম লোকসভা আসন এলাকায় তিন দিন থাকবেন তিনি।
খুব বেশি ঢাকঢোল না পিটিয়ে নিজেদের দায়িত্বে থাকা লোকসভা আসনগুলিতে গিয়ে মন্ত্রীরা সরেজমিনে দেখছেন সংগঠনের হাল। কোথায় কী ত্রুটি রয়েছে তা দেখে প্রয়োজনীয় পরামর্শও দিচ্ছেন স্থানীয় নেতৃত্বকে। বৃহস্পতিবারই রাজ্যে এসেছেন কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী রামেশ্বর তেলি। বোলপুর লোকসভা আসন এলাকায় শুক্রবার পর্যন্ত থাকার কথা তাঁর।
বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব আসলে মন্ত্রীদের এই সফরের মধ্য দিয়ে একটা সমীক্ষা চালিয়ে নিচ্ছেন। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে আগের জেতা সব আসনে জয় না-ও মিলতে পারে। তাই নতুন নতুন আসন থেকে সাংসদ দরকার। এই কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত বিজেপির এক নেতা বলেন, ‘‘রাজ্য নেতৃত্ব লোকসভা এলাকার পরিস্থিতি নিয়ে যে রিপোর্ট পাঠান, তার উপরে সব সময় ভরসা করা যায় না। আবার স্থানীয়েরা চেনা সমস্যার গুরুত্বও বুঝতে পারেন না অনেক সময়। সেই কারণেই বাইরে থেকে মন্ত্রীদের এনে টার্গেট করা লোকসভা আসনগুলির প্রকৃত চিত্র বুঝতে চাইছে দল। এর উপরে নির্ভর করেই তৈরি হবে লোকসভা নির্বাচনের চূড়ান্ত পরিকল্পনা।’’