Tejaswi yadav

লালু-তনয়কে ওজন কমাতে পরামর্শ মোদীর, বাংলার তেজস্বী এবং তেজস্বিনীরা কি সচেতন?

লালু-পুত্র তেজস্বী যাদবকে ওজন কমানোর পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। বাংলার রাজনীতিকরা কতটা ওজন-সচেতন? খোঁজ নিল আনন্দবাজার অনলাইন।

Advertisement

পিনাকপাণি ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২২ ১৪:০৩
Share:

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

ওজন কমাও! বলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বলেছেন বিরোধীপক্ষের তেজস্বীকে! কিন্তু নিজের দলের ‘তেজস্বিনী’? তাঁর মেদবাহুল্য নিয়ে কি কিছু বলেছেন প্রধানমন্ত্রী?

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইনের প্রশ্ন শুনে লকেট চট্টোপাধ্যায় বললেন, ‘‘আসলে মোদীজি আমাকে যবে থেকে দেখছেন, তখন থেকেই আমি মোটা! ফলে আমি যে মোটা হয়েছি, সেটা উনি হয়তো বুঝতেই পারেন না।’’

এমনিতে হুগলির সাংসদ লকেট মোদীর ‘প্রিয় পাত্রী’ই বটে। দেখা হয়। কথাও হয়। তবে লকেটকে কখনও ওজন কমানোর পরামর্শ দেননি মোদী। যেমন দিয়েছেন লালুপ্রসাদ যাদবের পুত্র, আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদবকে। পটনায় সম্প্রতি দেখা হতেই দৃশ্যতই মুটিয়ে-যাওয়া তেজস্বীকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘ওজন কমাও!’’ মোদী নিজেও স্বাস্থ্য সচেতন। তবে তাঁর দলের সাংসদ লকেট মানেন, সিনেমায় অভিনয়ের ছিপছিপে সেই ‘অচ্ছে দিন’ তাঁর আর নেই। রাজনীতিতে আসা, সাংসদ হওয়ার সময়ে যে আরও বেশি মুটিয়েছেন, তা লকেট নিজেও মেনে নেন। বলেন, ‘‘কী করব! অভিনেত্রী জীবনে ৫৫ থেকে ৬০ কেজি ওজন মেনটেন করতাম। সে সব গতজন্ম মনে হয়। এখন তো মনে হয়, আরও কেজি তিরিশেক বেড়ে গিয়েছি। ভয়ে ওজন করাই না। জানলে মনখারাপ হয়ে যাবে।’’

Advertisement

লকেটের যুক্তি— রাজনীতির ব্যস্ততাই ওজন বাড়িয়ে দিচ্ছে। কর্মীদের বাড়িতে গেলে যে যা দেয়, খেয়ে নেন নাকি? লকেটের জবাব, ‘‘কর্মীরা ভালবেসে যতটা দেয়, তার সব খেলে আর রক্ষা থাকত না! আমি খুবই কম খাই। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, কখন খাই তার সময়টা ঠিক থাকে না। ফলে মেদ জমছে। এমনিতে সুস্থই আছি। কিন্তু ওজন কমানোর জন্য যা যা করা দরকার, সেটা করার আর সময় পাই না।’’

লকেটকে কখনও ওজন কমানোর পরামর্শ দেননি মোদী।

ঠিক এখানেই একেবারে বিপরীত অবস্থানে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। খাওয়াদাওয়ার বিষয়ে মাত্রাতিরিক্ত সচেতন মমতা। বিরোধীনেত্রী থাকাকালীন তাঁর চেহারা খানিক গোলগাল ছিল। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে ক্রমশ কঠোর অনুশাসনে তিনি নিজের চেহারা অনেক ধারালো করে ফেলেছেন। বাড়িতে দৈনিক ট্রেডমিলে হাঁটা তো আছেই। দার্জিলিং থেকে দিঘা— যেখানেই যান, সেখানেই নিয়ম করে হাঁটেন মমতা। এবং এমন হাঁটেন, যে সঙ্গীরাও অনেক সময় পাল্লা দিতে পারেন না! মমতার ঘনিষ্ঠেরা বলেন, ‘পাখির খাওয়া’ খান তিনি। একটা সময়ে তেলেভাজা প্রিয় হলেও এখন মেনু থেকে সে সব কার্যত বাদ দিয়ে দিয়েছেন।

মমতা নিজে তো সচেতন বটেই, পৃথুল সহকর্মীদের দেখলে সর্বসমক্ষেই তাঁদের শাসন করেন তিনি। সম্প্রতি পুরুলিয়ার ঝালদা পুরসভার পুরপ্রধান সুরেশ অগ্রবালের ওজন ১২৫ কেজি শুনে প্রশাসনিক বৈঠকে চমকে গিয়েছিলেন মমতা। স্থূলকায় সুরেশকে ওজন কমানোর জন্য পরামর্শও দেন। পরে সুরেশ জানান, তিনি সকালে ঘুম থেকে উঠেই পকোড়া খাওয়ার দীর্ঘ দিনের অভ্যাস মমতার কথায় ছেড়ে দিয়েছেন। ওজন নিয়ে সচেতন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের রাজনৈতিক ওজন যে ভাবে বেড়েছে, তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শরীরের ওজন কমিয়ে ফেলেছেন তিনি। আগেকার গোলগাল অভিষেক অনেকটাই মেদ ঝরিয়ে ফেলেছেন। ঘনিষ্ঠদের বক্তব্য, খাওয়াদাওয়ায় অনেক বেশি নিয়মানুবর্তিতা মেনে চলেন। নিজেকে কঠোর অনুশাসনে বেঁধে রাখেন সবসময়।

দার্জিলিং থেকে দিঘা— যেখানেই যান, সেখানেই নিয়ম করে হাঁটেন মমতা।

বাংলার রাজনীতিক নেতাদের একটা অংশ মনে করে, খাওয়াদাওয়া নয়, আসলে ওজন বাড়ে অনিয়মে। সম্ভবত খানিকটা আলস্যেও। যেমন ভাবেন তৃণমূলের প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায়। তাঁর কথায়, ‘‘আমার ওজন বেশি জানি। কিন্তু কখনও মাপি না। শরীর সুস্থ রাখার জন্য যা যা করার দরকার করি। কিন্তু শারীরিক কসরত কিছু করা হয় না। এতে আমার চিরকালের আলস্য।’’

ওজন নিয়ে হাল ছেড়েছেন রাজ্যের ‘ওজনদার’ মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও। রাজ্যের শিল্পমন্ত্রীর পাশাপাশি তিনি তৃণমূলের মহাসচিবও বটে। কিন্তু শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ তাঁর হাতে নেই। পার্থ বলেন, ‘‘স্থূলতা আমাদের বংশগত। এ নিয়ে আমার হাতে কিছু নেই। তবে সুস্থ থাকার জন্য যা যা করা দরকার সবই করি।’’

তৃণমূলের সাংসদ মালা রায় ৬৪ বছর বয়সেও অত্যন্ত কর্মক্ষম। দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ আবার কলকাতার ৮৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলারও। তিনিই কলকাতা পুরসভার চেয়ারপার্সন। অনেক দায়িত্ব সামলে আর শরীরের ওজন নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় পান না মালা। বলেন, ‘‘আমাকে জনপ্রতিনিধি হিসাবে এত কিছু করতে হয় যে, আলাদা করে শরীরচর্চা করার সুযোগ পাই না। সকাল থেকে ঘোরা শুরু হয়। রাত ১০টা, সাড়ে ১০টা পর্যন্ত কোথাও না কোথাও যেতেই হয়। কর্মসূচিতে যোগ দিতে দিতেই দিন কাবার।’’ ওজনবৃদ্ধি নিয়ে অবশ্য সচেতন মালা। তাঁর কথায়, ‘‘খাওয়াদাওয়া একদম নিয়ন্ত্রিত। কয়েক বছর আগে একজন চিকিৎসক ডায়েট চার্ট বানিয়ে দিয়েছিলেন। সেটা মেনে মূলত শাকসব্জি আর ফলমূল খাই। ভাত, রুটি একেবারেই কম। এখন মাছ-মাংস খাওয়াও কমিয়ে দিয়েছি।’’

বিরোধী শিবিরের নেতাদের মধ্যে সত্যিই ‘ওজনদার’ আসনসোলের জিতেন্দ্র অধিকারী। নিজের ওজন নিয়ে কিঞ্চিৎ কুণ্ঠাও রয়েছে তাঁর। ১০৫ কেজি ওজনের জিতেন্দ্র বলেন, ‘‘পাঁচ ফুট সাড়ে ছ’ইঞ্চি উচ্চতার জন্য যা ওজন থাকা দরকার, তার থেকে আমার ওজন অনেক অনেক বেশি। কিন্তু তার জন্য কিছুই করি না। মনে হচ্ছে, এ বার কিছু একটা করতে হবে।’’

শরীরের ওজন নিয়ে সচেতন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। শরীরে মেদ থাকলেও তাঁকে পৃথুল বলা যাবে না। শুভেন্দুর খাওয়াদাওয়াও অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত। বিনা চিনির লিকার চা ছাড়া কোনও নেশা নেই। বেশি রাত পর্যন্ত জেগে থাকতে হলেও রাত ১০টার মধ্যে রাতের খাবার খেয়ে নেন। আর প্রশ্ন করলে বলেন, ‘‘আমার উচ্চতা ৫ ফুট ৯ ইঞ্চি। তাতে ওজন হওয়া উচিত ৮১ কেজি। কিন্তু সেটা হয়ে আছে ৮৫। সেটাও কমিয়ে ফেলতে হবে। কিন্তু তার জন্য আলাদা করে কিছু করার ইচ্ছা নেই। রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যেটুকু হাঁটা আর ছোটাছুটি হয় তাতেই কমে যাবে।’’

তবে শুভেন্দু যা-ই দাবি করুন না কেন, তাঁর উচ্চতায় শরীরের ওজন ৭৫ কেজি হওয়া উচিত বলেই জানাচ্ছেন পুষ্টিবিদেরা। তাঁদের বক্তব্য, পাঁচ ফুট আট ইঞ্চি উচ্চতার ব্যক্তির আদর্শ ওজন হওয়া উচিত ৭৩ কেজি। শুভেন্দু পাঁচ ফুট নয় ইঞ্চি। তাঁর আদর্শ ওজন হওয়া উচিত ৭৫ কেজি।

সে অর্থে শুভেন্দুও বাড়তি ওজন বইছেন। মোদীর পরামর্শ তা হলে দরকার শুভেন্দুরও।

(তথ্য সহায়তা: অমিত রায়)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement